গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

পৃথা রায় চৌধুরী



পয়মন্তের দুই-দুই

প্রতি বছরের মতো রাস্তায় প্রচুর মা লক্ষ্মী বিকোচ্ছে। সামনে থেকে বেশ সুন্দর টুন্দর আর কি। দামাদামি চলছে, পছন্দমতো লক্ষ্মী মনের মতো দামে বাগিয়ে নিয়ে ট্যাঁকে বন্দী করে সব ঘরমুখো ছুট। বিকোচ্ছে তো বিকোচ্ছে, বয়ে গেছে পদ্মার। তাদের পাড়াতেও দেদার ঠাকুর ওঠে। সাতটার লোকালটা বোধহয় আর ধরা গেল না। রাস্তায় বেরিয়ে এসবই পিষতে পিষতে ছুটছিল সে। খানাখন্দ না দেখে কতো বার যে তালকানা ভাবার সুযোগ দিলো লোকেদের! তার সাথে প্যান্ডেলগুলোয় মুখ চুন করে বসে থাকা লক্ষ্মীদেরও দেখতে দেখতে এগোলো। দুগগা মা গেলেন, মা'র ওই আধাখ্যাঁচড়া খণ্ডহরগুলোতেই লক্ষ্মীঠাকরুনকে বসিয়ে যে যার মতো হাওয়া। কারুর সামনে দুখানা প্রদীপহীন পিলসুজ, কারুর সামনে ফর্দমতো চুবড়ি ভরা ইডিংবিডিং, এদিকে আলো প্রায় কানা, প্যান্ডেলের কাপড় প্রায় দ্রৌপদির মতো লুটোচ্ছে, একপাশে দাঁত বার করা দুগ্‌গার চালচিত্র...
পাঁচ বাড়ি রান্নার কাজ করে পদ্মা। ঘোষ গিন্নির গতর যতো বাড়ছে, খাইখাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মাথায় মনে হয় ডাঙস মারি!নিজের মনেই বলে চিক করে রাস্তায় থুতু ফেললো।
এই যে ছুটছে ফেরার নেশায়, বাড়িতে ঠাকুরের আসনের লক্ষ্মীকে ছেলে যেন আজ দুখানা তিনটাকা দামের সন্দেশ কিনে দেয়, বলে এসেছে। মুখুজ্জে মাসিমার থেকে পলিথিনে মুড়িয়ে কিছু কুচো ফুল চেয়ে নিয়েছে। একখানা ঘরে তাদের মা-পোয়ের সংসার। রতন বাঁড়ুজ্জে হঠাৎ হার্টের ব্যামোয় চোখ বন্ধ করলো, আর পদ্মা বাঁড়ুজ্জে বাড়ির বড়ো বৌমা থেকে শিবুর মা হয়ে রয়ে গেল। পাশেই শ্বশুরের ভিটেয় দুহাত সমান লক্ষ্মীর মূর্তি এনে পুজো হয় ফি বছর; ঝমরঝম গয়না আর জরিপাড় শাড়িতে ছোটবউ ঘরবার করে। পদ্মা ছাপা শাড়িতে আবছায়া। ঢাকুরিয়া বাজার এলাকায় একটিমাত্র মা লক্ষ্মীর সদ্য তৈরী করা প্যান্ডেলে মা'র কি আদর! খুশি খুশি মুখে 'কোই হোতা জিসকো আপনা...' শুনছে, মুখের ওপর সবুজ আলো মেখে। সামনে কতো নৈবেদ্য! গরীব লক্ষ্মীদের মাঝে বড়লোক লক্ষ্মী...।