প্রতিশোধ
নভেম্বরের ভোর। সূর্য ওঠেনি। আকাশ
স্লেট রঙা মেঘে ঢাকা। তারই ফাঁকে আধো ঘুম ভাঙ্গানিয়া আলোর উদ্ভাসে বোঝা যাচ্ছে রাত
আর নেই। আশ্বিনের শেষে প্রবল বর্ষা! তখনই বোঝা হয়ে গিয়েছিল, এবারের শীতটা
জাঁকিয়ে পড়বে।
গত রাতে ওভার টাইম গেছে। বিধু তখন
অঘোরে ঘুমাচ্ছে। শুনতে পায় নি শব্দটা, অবশ্য শুধু বিধু কেন, প্রসেন,
অমল, কার্তিক এরাও কেউ শোনেনি। খবরটা
প্রথম শোনালো সূরযলাল। ত্রিপলের একদম নীচে বিধুর বিছানা ঘেঁষে বসে ..."আগ!
কাল রাত কো হি। দত্ত ম্যানশন মে আগ লাগ গিয়া। অউর" ...ইতস্তত করে সূরয,
ইতি উতি চায়, "রাধা বেটি বুরি তারা
জ্বল গেয়ি!"
বিদ্যুৎ চমকায় বিধুর শরীর। গরম
পারদের আনাগোনা স্পষ্টতই টের পায় সে। রাধা!! রা...ধা! গত বিকেলেও ভরন্ত মেয়েটাকে
অর্জুনের সাইকেলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে বিজু। গত পুজো থেকেই দুজনের
পিরীত!
ব্রড স্ট্রীটের এ বাড়ির পাশেই
ট্রেন লাইন। রোজ সকাল বিকেল চায়ের কাপে চলকে ওঠে ট্রেনের শব্দ। ট্রেন লাইনের ধারে
আগাছার বুনট জঙ্গল। এ বাড়িটার সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা গেছে, তার ঠিক বাঁকেই
ট্রেনবিজ। ঝমঝম ট্রেনের শব্দ ওখানে দাঁড়িয়ে শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। কারখানায়
যাতায়াতের পথে এখনও, মাথার ওপর দিয়ে ট্রেন গেলে, কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে শোনে হীরু। শব্দের প্রতিধ্বনি রক্তে দোল
দেয়। ছেলেবেলায় যেমন দিতো আজও তেমনই দেয়!
একী করছো ? সরো!
কেনো সরে যাবো?
লোক দেখ লে গা!
দেখ লে গা তো দেখনে দোওও…
অসভ্য! দেখবানি এত পিরীত কদ্দিন
টেকে!
আরে এত কি ভাবছিস রাধা! তোর এই ভরা
বর্ষায় আমি তরী বাইবো শীত বসন্ত সারা বছর। তুই আমায় বেঁধেছিস অনন্ত নেশায়!
কথাগুলো ভাবতেই বিধুর শরীর কাঁটা
দিয়ে ওঠে! এখনো সতেজ! জীবন্ত কাহিনীটা। এক লহমায় গল্প-কাহিনীর প্লট পালটে দিতে
পেরে ওর খুব সুখবোধ হয়েছিলো রাতে ঘুমোবার আগে। কিন্তু আজ সারা পাড়ায় যখন এটা নিয়ে
গুঞ্জন শুরু হয়েছে তখন মনে হচ্ছে একই পাড়ায় দু’তরীতে বৈঠার টান দেয়া ঠিক হয়নি
বোধহয়! ভয়ে আরেকবার কাঁটা দিয়ে উঠলো গা।
পুড়ে যাওয়া বাড়িটায় উড়ছে ছাই। আর
রাধার পুড়ে যাওয়া আত্মায় পরিতৃপ্তি। প্রেম, বিয়ে, বাচ্চার বাপ ...
সবটাতেই যখন অস্বীকৃতি তখন ফাঁসানোর ব্যবস্থাটা পাকাপোক্ত করেই না সে ঘরে আগুন টা
লাগিয়েছিলো। বুঝুক ঠ্যালা মন নিয়ে খেলবার পরিণাম!