গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১১ মে, ২০১৬

সাগরিকা ঘোষ




শব্দের তাপমাত্রা : প্রেম এবং প্রস্তাব






তাপমাত্রার পারদ তখন চল্লিশে, মন ভাল নেই ইমনের, থাকবে কি করে! এই গরমে কোথায় এসির হাওয়ায় বসে বসে ফেসবুক করবে তা নয় মায়ের হুকুম 'যা বাজার' তাও একরকম, মন্দ না, বিশেষ করে এখন আবার ইলিশের সময়, বাজার যেতে অসুবিধে নেই কোন, কিন্তু গল্প আছে! মায়ের টুম্পাকলি আসবে আজ; ফোন এ বায়না হয়ে গিয়েছে কাকিমা আজ কিন্তু পাতুরি চাইই চাই! ন্যাকামো যত্তসব! ভাবতে ভাবতে গালে শেভিং ক্রিম ঘশতে লাগলো!'ইমন! এই ইমন!!! বলি টুম্পা কি পাতুরি তোর বিয়ে লাগলে খাবে নাকি!! ' ইমন মনেমনে ভাবলো হ্যা তাহলেই হয়েছে আর কি! যা হিংসুটি এই টুম্পাকলি থুড়ি পাপিয়া যে ওর আগে যদি ইমনের বিয়ে হয়ে যায় কেঁদেই মরে যাবে! আহ! দারুন একটা ব্যাপার হবে যা হোক.... ভাবতে ভাবতে যেই সাইকেল টা নিয়ে বেরোবে ওমনি 'বেহাগ যদি না হয় রাজি বসন্ত যদি না আসে/এই আসরে ইমন তুমি থেকো বন্ধু আমার পাশে' কি ইমন-সাহেব এখনো বাজার যেতে পারলে না! খিদে তে তো পেটে ছুঁচোরকেত্তন শুনতে পাচ্ছি! 'আবার তুই আমার নাম টা নিয়ে এরকম করছিস তো! আনবোই না ইলিশ আজ দেখ বাটা মাছের পাতুরি খাইয়ে বাড়ি পাঠাবো! ' বলতে বলতে সাইকেল বের করলো ইমন। ভারি আমায় বাড়ি পাঠাতে এলেন রে! আমি নিজেই তো বাড়ি চলে এলাম! বলতে বলতে মুচকি হেসে যেই পাপিয়া ঘরে ঢুকতে যাবে 'এই কি বললি? হতভাগা এটা আবার তোর বাড়ি কবে থেকে হল শুনি! ইয়ার্কি!' কাকিমা কাকিমা দেখো তোমার ছেলে কি বলছে! বলতে বলতে ছুট লাগালো রান্নাঘরের দিকে! ইমন ভাবলো এই সুযোগ কেটে পড়া যাক নাহলে মায়ের আর এক প্রস্থ বকবক শুনতে হবে...


গল্প যেরকম হওয়ার কথা...ইমনের বাবার ছোটবেলার বন্ধু, সেই ইকুয়েশন মিলিয়ে ইমন আর পাপিয়ার ও বন্ধু হওয়ার ই কথা কিন্তু পাপিয়া ইমনের বিশেষ বন্ধুত্বের প্রস্তাব শোনা মাত্র খারিজ করে দেওয়ায় আজ এই অবস্থা। যাইহোক ইলিশ মাছ আহা! ইমন নিশ্চয় ই আমাকে ভুলে যাবে না ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা লাগালাম! * কত ভালোবেসে শিল্পার জন্য কার্ড টা এঁকেছিলাম এই শয়তান টার হাতের লেখা ভালো তাই বলেছিলাম বাপু একটু লিখে দে না! উনিও ভালমানুষ সেজে হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় নিশ্চয়! ওমা! পরের দিন সকালে মায়ের কি চিৎকার!! ' হ্যা তোর এত বড় সাহস তুই টুম্পা কে লাভ লেটার দিস! বাপের পয়সায় ফুটুনি! তুই ভাব্লি কি করে অত সুন্দর মেয়ে তোর এই বস্তাপচা কার্ডে গলে যাবে!! মেয়ে আমার রাজরানি হবে' চোখ কচলে উঠে দেখি এই শয়তান টা মিচকি মিচকি হাসছে! ওরে ব্যাটা তোর পেটে পেটে এত! মিথ্যে বদনামে জড়িয়ে মায়ের কাছে আরো ভাল হয়ে গেলো সেটা বড় কথা না বড় কথা হল শিল্পা কে আর বলা হয়ে উঠলো না কথা টা.. * ইমন টা না!! একেবারে ছেলেমানুষ!! সেই কবেকার একটা ব্যাপার! সেই নিয়ে এখনো রেগে থাকার মানে হয় কোন! শিল্পা কে আমি আগের দিন ই দেখলাম মিহির এর সাথে ভিক্টোরিয়া ঢুকছে তাও আবার হাত ধরে গুজগুজ করতে করতে আর পরের দিন আমি শিল্পা কে প্রেম পত্র লিখবো ইতি ইমন! খেয়ে দেয়ে কাজ কম পড়েছে নাকি! এটা ওকে তখন বললে শুনতো না তাই একটু মজা করে কাকিমা কে নাহয় বলেইছি ওরকম! সেই শাস্তি কিছু কম পেয়েছি আমি! তিন তিনটে মাস কথা বলতে পারিনি! এমন ভয় করতো! আর কথাও তো শোনাতো তেমন ভয় ধরার মতন ই! সেটা বুঝি কিছু নয়! * উফফ এই ইমন টা কি সত্যিই বাটা মাছ আনবে নাকি রে বাবা! এখনো আসছে না বাজার থেকে! এই টুম্পাকলি একটা ফোন লাগা না! টুম্পা মেয়ে টা খুব ভালো আমার কথা বুঝতে পেরেই তো ফোন নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো! কাকিমা কে দিয়ে ফোন করাবে! করা করা! আজ কলাপাতা চিবিয়ে খাবো! এই তো দরজায় নক করছে কেউ! ইমন তো এভাবে নক করে না! কে এল! এই কেউ দেখো না আমি তো ছাই হাত পাবো না! * কি সুন্দর রান্না করেছে মেয়েটা আহা! ইমনের বাবা কে আজ একবার বলবো! কিন্তু টুম্পার বাড়ির লোক কে নিয়ে না চিন্তা তো মেয়ে টা কে নিয়ে! মতিগতি বোঝা দায়! এই ফোনে বল লো কাকিমা তোমার হাতে করা পাতুরি খাবো আর এসে আমাকেই টেনে বসিয়ে দিলো বলে কিনা তুমি তো রোজ ই হেঁসেল ঠেলো কাকিমা আজ আমাকে ছেড়ে দাও তো দেখি! নাহয় পচা রান্নাই খাবে আজ! ওমা! পচা কোথায়! এইটুকু মেয়ে! কি ভাল রেঁধেছে! ইমন চেটেপুটে খাচ্ছে একেবারে যদিও ও জানে না কে রেঁধেছে! টুম্পার লজ্জা করবে সবাই ওর রান্না নিয়ে কথা বললে! পাগলি একটা... খেয়ে আর না বসেই বেড়িয়ে গেলো কি না বাড়ি গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শোবে! ওহ কি একটা দিলো! এই তো! এই তো সাদাটে খাম টা! ইমন কে দিতে হবে কি যেন দরকারি কাগজপত্র আছে; যাই দিয়ে আসি। * 'আত্মসমর্পণ এর নয়, তোর ভালোবাসার রঙের সাদা... রান্না টা ভালো লেগেছে? তালে কি আমরা দুজনে একবার ট্রাই করে দেখতে পারি? না মানে শিল্পা কে পরে ওই মিহির ছোঁড়ার সাথে তুই ও দেখেছিস! আর তুই যা কাটখোট্টা আমি যে নিজে থেকে বলছি এই তোর কপাল ভাল; ভেবে দেখিস!’ এটা কি! এইরকম লাভ-লেটার? তাও আবার ওই কাব্যি করা মেয়ের! আবার আমাকে বলছে কিনা কাঠখোট্টা! বাহ! না হলে আর মায়ের সাথে জমে! কিরে কুচু? কি করবো! তোর পছন্দ টুম্পারানী কে? ওহ ছাড় তুই আবার কি বুঝবি! * হ্যাঁ! টুম্পাকলির চিঠি টা কে মুখে করে আনলো শুনি! আমি তো আগে থেকেই জানতুম! আবার আমাকে বলা হচ্ছে 'কি বুঝবি!' মানুষের কাজকারবার ই এরকম!


যত্তসব! মিয়াও!