গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

তাপস মৌলিক



গাড়ি কিনলেন দত্তদা

ব্যাপারটা বছরখানেক চলেছিল। পেট্রল না ডিজেল, সেডান না হ্যাচব্যাক, মারুতি না হুন্ডাই... গবেষণার শেষ নেই। দত্তদার আর মডেল পছন্দ হয় না। অফিস-ক্যান্টিনে প্রসঙ্গ উঠলেই বলেন, “দাঁড়াও, মডেল কি একটা? হুড়ুমদাড়ুম করে কিনলেই হল? অটো ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনটা পড়ো? ফিচারস, দাম, মাইলেজ, মেন্টেনান্স খরচ, রিসেল ভ্যালু, সার্ভিস নেটওয়ার্ক... কত কিছু ভাবতে হয়!
শেষমেশ জুলাইতে প্রমোশনের পর বললেন, “নাহ, এবার গাড়িটা বুক করা যায়।
কোন মডেল বাছলেন?”
কিনলেই দেখবে। তাড়া কিসের?”
তিনমাস কেটে গেল, দত্তদার উচ্চবাচ্য নেই।
ডেলিভারি কবে, দত্তদা?”
দাঁড়াও, গাড়ি কিনব, রাখব কোথায়? গ্যারেজ বানাই আগে!
কেন? পাড়ায় মাস গ্যারেজ নেই? পার্ক-টার্ক? বাড়ির সামনের রাস্তাই তো আছে!
হ্যাঁ, আর আমার নতুন গাড়ি রোদে-জলে-বৃষ্টিতে নষ্ট হোক আর কি! ওতে আমি নেই।
গ্যারেজ ভাড়া নিন তাহলে!
ধুর! গ্যারেজের সাঙ্ঘাতিক ভাড়া! বাড়িতেই বানাচ্ছি। রোববার রোববার রাজমিস্তিরি লাগাই। অন্যদিন তো সময় নেই, তাই একটু দেরি!
গ্যারেজে অত আছেটা কী? ওতো মিস্তিরিরা নিজেরাই বানিয়ে দিতে পারে!
আরে, এখনকার রাজমিস্তিরিগুলো সব অগা, আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং বোঝে না। গাড়ির ক্যাটালগ থেকে মাপ নিয়ে ডিজাইনটা আমিই করে দিয়েছি। সামনে দাঁড়িয়ে না করালে কী বানাতে কী বানিয়ে দেবে!
পুজোর পর ধরলাম, “এবার দেওয়ালিতে নামিয়ে দিন গাড়িটা?”
হবে হবে, ভাই আমি কি বসে আছি? ভোরবেলা রোজ একঘণ্টা ড্রাইভিং শিখতে যাই।
প্রথমে ড্রাইভার রাখলেই তো পারতেন, নিজের গাড়িতেই শিখতেন তারপর!
ড্রাইভারদের প্রচণ্ড খাঁই। তাছাড়া ওদের হাতে গাড়ির বারোটা বেজে যায়। নিজেই চালাব, আর মাসখানেক শিখলেই যথেষ্ট।
ডিসেম্বরে অনিন্দ্য ধরল, “গাড়ি কদ্দূর, দত্তদা? চলুন নববর্ষে নতুন গাড়ি নিয়ে দীঘা যাওয়া যাক।
ভাই, গাড়ি তো বুক করেছি। পছন্দসই রঙ স্টকে নেই। অর্ডার দিয়ে আনাতে হচ্ছে।
অবশেষে, জানুয়ারির এক শনিবার শুনলাম দত্তদা গাড়ি পেয়েছেন। সোমবার অফিস পৌঁছে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দত্তদা একটা ক্যাটক্যাটে নীল নতুন গাড়ির কো-ড্রাইভার সিট থেকে নামলেন। মুখে লজ্জা লজ্জা হাসি, “নতুন গাড়ি তো, ভরসা পেলাম না। ড্রাইভার নিয়ে নিলাম। টেম্পোরারি।
পার্থ নিচু স্বরে বলল, “এত কাণ্ডের পর মারুতি অল্টো?”
অনিন্দ্য এগিয়ে এসে বলে, “একি দত্তদা, গাড়িটা কি গাছতলায় রেখেছিলেন? পাখিরা তো ছাদটা পুরো সাদা করে দিয়েছে। গ্যারেজের কী হল?”
আর বোলো না, হিসেবে একটু গোলমাল হয়ে গেল! গ্যারেজটা একদম মাপে মাপে হয়ে গেছে, গাড়ি ঢোকালে ড্রাইভার সিট থেকে দরজা খুলে আর বেরোতে পারছি না। ভাঙতে হবে ফের।