গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

১০ম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ।। ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

এই সংখ্যায় ১৪টি গল্প । লিখেছেন : সমরেন্দ্র বিশ্বাস, মুক্তা রহমান, সুবীর কুমার রায়, সুদীপ ঘোষাল, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ ঘটক, পার্থ রায়, সালমা রেখা, তন্ময় বসু, মনোজিৎ কুমার দাস, গোপেশ দে, বিনতা রায়চৌধুরী, ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ও কুমকুম বৈদ্য ।

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

ভিআইপি পোষাক আর গুলদস্তার গল্প

কোম্পানীর বিশ্বস্ত অফিসার সমীরণ সাহা ভ্যাবাচ্যাকা দাঁড়িয়ে রইলো । 

হাতে গুলদস্তা   রঙ্গীন রিবন আর ঝিলিমিলি কাগজে জড়ানো সুন্দর একটা ফুলের তোড়া । বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পর পর একএকটা ভিআইপি গাড়িতে উঠে পড়লো । সামনে লালবাতিয়ালা সাইরেন বাজানো পাইলট ভ্যান।  পেছন পেছন কুড়িটা গাড়ীর কনভয় , একে একে সবাই লাইন দিয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে বিদায় নিল ।

মুক্তা রহমান

বিভ্রম 

পাহাড়ের রাণী আলুটিলার অতুলনীয় হৃদয়স্পর্শী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মেয়েটি মোহিত। হাটছে আপন মনে। কখনো মাথা নিচু করে কখনো চারপাশটি দেখতে দেখতে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের সাথে যেন তার মিতালি। পর্বতের সর্পিল আকারের আঁকাবাকা রাস্তার দু'ধারের সবুজ বনাঞ্চল, সারি সারি উঁচুনিচু পাহাড় আর লুকিয়ে থাকা মেঘ মেয়েটিকে উন্মনা করে তুলেছে। রোদের তেজ মরে গিয়ে মাত্র মিঠে হতে শুরু করেছে। মেয়েটির নাক ঘামছে, চাপা উত্তেজনায় কাঁপছে। 

 

রাস্তা ধরে মিনিট খানেক হেঁটে মেয়েটি পৌছুলো একটি সরু পাহাড়ি পথে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে গেছে পথটি। মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়ল। একটু দ্বিধা কাজ করলো, নিচে নামবে কি? জোরে একটি শ্বাস নিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। মেয়েটি এবার সাবধানী। দেখে শুনে পা ফেলছে। ঢালু পথে পা হড়কে পড়ে না যায়।

সুবীর কুমার রায়

ভেস্তে যাওয়া পাকাদেখা

আজ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা শোনাবো, অনেকদিন আগে এক পাত্রী দেখতে যাওয়া, হয়তো বা পাকাদেখাও বলা যেতে পারে। তবে বিধিবাম, তাই শেষপর্যন্ত আর বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার সুযোগ না পেয়ে, অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। না, আমি নিজে পাত্র নই, বরং বরকর্তাই বলা যেতে পারে।

ভারতীয় স্টেট ব্যঙ্কে কর্মরত আমার ভাইয়ের জন্য, উত্তর কলকাতায় আমরা চারজন একটি পাত্রী দেখতে গিয়েছিলাম। আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছোট বোন, ও ভাবী পাত্র স্বয়ং। আমাদের মিঞাবিবি দুজনের পছন্দ-অপছন্দ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আবার সবসময়েই দুই মেরুতে বসবাস করে, আজও করে। আমি মিষ্টি খাওয়া কোনকালেই পছন্দ করি না, চপ্-কাটলেটই আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। আমার উনি আবার মিষ্টি খাওয়ার জন্যই বোধহয় এই ধরাধামে আবির্ভুত হয়েছেন। পারলে ঠাকুর পূজার নকুলদানাও তিনি সাবাড় করে দিতে কিছুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেন না। ভাবী পাত্রীর ভাবী স্বামী, ভাসুর, জা, ও ননদের পদধুলির কল্যানে তাঁরা ধন্য হয়ে যারপরনাই মিষ্টান্নর আয়োজন করবে, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি আধপেটা খেয়ে আমাদের সাথে গেলেন। তখন মোবাইলের প্রচলন হয়নি, হাতেগোনা কিছু বাড়িতে দশফুটোর কালো রঙের ল্যান্ড ফোনের দেখা মিলতো। খবরের কাগজ দেখে সম্বন্ধ, তাই উভয় পক্ষের চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে, আজ সেখানে যাওয়ার আয়োজন।

সুদীপ ঘোষাল

 

ভূত নয় অদ্ভূত

আমার শোনা তিনটি, রহস্যঘেরা সত্য কাহিনী তোমাদের আজ শোনাবো। বন্ধুরা ভয় পেও না কিন্তু। প্রথমে আমার দেখা ভূত। হয়তো বিশ্বাস করবে না। তা হলেও বলছি শোনো।

অমাবস্যা র রাতে অন্ধকার হয় শুনেছি । কিন্তু তার থেকেও ঘন অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি চারজন। হঠাৎ সামনে দেখি গলা থেকে মাথা পর্যন্ত কাটা একটা স্কন্ধ কাটা ভূত ।আমার আর অনুপের  হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। ছোটো থেকেই জয় দা ও রমা দি র সাহস বেশী । আমরা ভয়ে বু বু করছি । এমন সময় দেখলাম অনুপকে  কে যেনো ছুঁড়ে পাশের হাই ড্রেনে  ফেলে দিলো। জয় দা হাঁক  দিয়ে বললেন, কে রে ভয় দেখাচ্ছিস । কিন্তু ভূত কোনো সাড়া না দিয়ে থপাস করে বসে পড়লো।

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

মাস্ক ও বিধবা সিঁথি  

শিবু বলে,ওই দ্যাখ, কতগুলো মাস্ক ঝুলছে।

-- চল তবে ওখান থেকেই কিনি।আকাশ উত্তর দেয়।
রাস্তার দিকে মুখ টানা বারান্দার সামনে শেড সেখানে একটা দড়িতে রংবেরঙের বেশ
কয়েকটা মাস্ক।নানারকম কোয়ালিটির অর্থাৎ দামও বিভিন্ন।
-- কোনটার কত দাম গো?
সামনে কেউ নেই ঘরের ভেতর সেলাই মেশিনের শব্দ।
-- আসছি -- বলে যে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় তাকে দেখে বেশ চমকে গেল আকাশ,
পসারিনি থমকায়, অপলক চেয়ে থাকে। অবাক দুজন শব্দহীন। এভাবেও দেখা হয়!
-- তুমি এখানে? বলে একজন।
-- তুমি এখানে? অন্যজনও একই প্রশ্ন করে।
তাকিয়ে থাকে বন্ধু শিবু।

প্রদীপ ঘটক

 কুমড়ো ছক্কা

স্কুল গেটের দু'ধারে স্কুলের বাগান। পাঁচিলে দু'হাত ঠেকিয়ে থুতনিতে ভর দিয়ে আনমনা অরি। অরি মানে অরিত্র। ম্যাগি করে দেয় নি মা, মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে। বাগানে নতুন হরেকরকম গাঁদা, ক্যালেন্ডুলা, একমনে নিরীক্ষণ করছে ভগ্ন হৃদয় অরি। হঠাৎ কাঁধে একটা হাত। অস্ফুটে অরির মুখে বের হয় "পাপা!"

-নতুন বছরে তো বড় স্কুলে আসবি। চল্ আমাদের স্কুলটা তোকে ঘুরে দেখাই।

একটা গেট, দু'টো গেট তারপর দু'পাশে সারি সারি ঘর। বাবা ঘুরে ঘুরে দেখান কোন ঘরে তাঁরা কোন ক্লাসে পড়তেন। কোন ক্লাসে অনিলবাবু বেধড়ক মেরেছিলেন ক্লাসে দুষ্টুমির জন্য, কোন ম্যামের ক্লাসে বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়েছিলেন, পড়া না পারার জন্য।

পার্থ রায়

গরম ভাতের গন্ধ


ঝটিতি অফিস ব্যাগ কাঁধে তুলে নেয় সুপ্রতিম। প্রচণ্ড তাড়া। অবশ্য এর জন্য ও নিজেই দায়ী। দেরি করে অফিস যাবার প্রস্তুতি নেওয়া ওর অনেকদিনের অভ্যাস। কথায় আছে ‘স্বভাব যায় না মলে’। তাই স্ত্রী সুতপা এবং বাড়ির অন্য সদস্যরা এই সময়টা খুব তটস্থ থাকে। শেষ মুহূর্তে গাড়ি ঘোড়ার মধ্য দিয়ে সুপ্রতিমের মিলখা সিং হয়ে ছুটে যাওয়া ওদের বিলকুল না পসন্দ।

“তোমাকে একটা কথা না বলে পারছি না। নুতন কাজের লোক বিমলাকে টিফিন দাও না?”, নিচু স্বরে স্ত্রীকে বলে সুপ্রতিম।

সুতপার ভ্রূ কুঁচকে যায়। “হঠাৎ এই কথা? এই সময়ে? তোমার কি আজ ট্রেন ধরার ইচ্ছে নেই? অফিস থেকে ফিরে এলে না হয়...”

“ওহ! যা জানতে চাইছি সেটা বলো। দাও কি দাও না? আস্তে কথা বলো”

সালমা রেখা

তমসাছন্ন ছায়া

প্রথম পর্ব

সুর্মার মত কাউকে দেখেই সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেনকালো সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিন চোখদেখতে সুর্মা যেমনই হোক, স্বভাবে সে ভারী লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। তাদের বাড়ী নবাবগঞ্জের দোহারে। এলাকাটি অনুন্নত, বেশীরভাগ মানুষই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। সুর্মা তার বাবা সালাম মিয়ার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কাজলীর গর্ভের প্রথম সন্তান।

সুর্মার পিঠেপীঠী তার এক ভাই রাজু, আর আছে তার চেয়েও সতেরো বছরের বড় সৎভাই মালেক। সুর্মার বাবা সালাম মিয়া অস্থির এবং রগচটে  ধরনের মানুষ, কোন কাজই বেশীদিন সে মন লাগিয়ে করতে পারেনা। পৈতৃকসুত্রে  যথেষ্ট সহায় সম্পত্তি পেলেও অদূরদর্শী সালাম মিয়ার আর্থিক অবস্থা এখন নিতান্তই করুন। বেহিসেবী জীবনযাপন আর  দুই সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে জমিজিরাত বিক্রি করতে করতে এখন সালাম মিয়ার নিজস্ব সম্পত্তি বলতে কেবল ভিটেটাই অবশিষ্ট আছে। সালাম মিয়া দাওয়ায় বসে যখন হুক্কায় টান দেয় তখন রান্নাঘরে দুই বউ উচ্চস্বরে ঝগড়া করে। আর দুই বউয়ের ঝগড়া শুনে সালাম মিয়ার অন্ধ মা তার ঝুপড়িঘর থেকে ধমকে বলে,  

তন্ময় বসু

 

বসন্ত

বাড়ির পাশে গাছগুলোতে পাখিদের আড্ডাখানা হয়েছে। কমবে কি, দিন দিন আনাগোনা বেড়েই চলেছে। এমনিতে ল্যাংড়াশিবে এখন প্রায় হাফ বৈরাগী, তাতে আবার এই গাদা গুচ্ছের পাখির ভীড়। ধারে পাশে বেশ কয়েকটা পেল্লায় বড়মাপের প্রাচীন গাছ, বসতি থেকে নিরিবিলিতে ল্যাংড়াশিবের বাড়ি। এদিকটা আজকাল কেউ বড় একটা আসে না। হলে কি হবে, নতুন এক আপদ এসে হাজির। ইয়ে, রোজ উটকো কিছু পাখির ডালে বসে আলোচনা! কি? না -- 'বসন্ত আসছে' এক কথা শুনে শুনে কান ঝালাপালা। শেষে থাকতে না পেরে ল্যাংড়াশিবের চিৎকার প্রশ্নকে পাকিয়ে আকাশে ধাক্কা খেয়ে গাছের ডালে ডালে ঝুলতে লাগল। তাতে অন্য ফের! পরদিন থেকে ল্যাংড়াশিবের কানে যখনই এল 'বসন্ত আসছে' পরক্ষণেই কোথাও বেজে উঠছে -- 'এই শীত গেলে সামনের শীত' তারপরেই নাকি বসন্ত! মহাজ্বালা! 

মনোজিৎ কুমার দাস

 

বৃষ্টিভেজা রাত                                                                                                                           

শ্রাবণের রাত । অবিশ্রান্ত ধারায় বারি বর্ষণ হচ্ছে । ব্যাঙের ঘ্যাংঘর ঘ্যাংঘর ডাকে কান ঝালাফালা!  এক সময় লায়লার ভাল লাগতো টিনের চালের উপর বৃষ্টির পানি পড়ার ঝমঝম শব্দ! এক টানা ব্যাঙের ঘ্যাংঘর ঘ্যাংঘর শব্দে লায়লার ঘুম এসে যেত। এখন কিন্ত  বৃষ্টির শব্দ, ব্যাঙের ডাক তেমনটা ভাল লাগে না। সে বুঝে উঠতে পারে না  এখন কেন এমনটা হয়। তবে বর্ষা ও শরত এলে লায়লা এখন নস্টালজিয়ায় ভোগে। বিয়ের আগেই অনার্স শেষ করেছিল সে।বিয়ের পর মাস্টার্স পাশ করেছে। পাঁচ বছর হতে চললো বিয়ে হয়েছে তার।এখনো কিন্তু সন্তানের মুখ দেখেনি লায়লা। বিয়ের আগ থেকেই লায়লার স্বামী নাহিদ বিদেশে, বছরে দুবার মাস দেড় দুয়েকের জন্য সে দেশে আসে। জলজঙ্গল, বাদলের দেশের ছেলে নাহিদ এখন মরুভূমির দেশের স্কাইক্রাপার বিল্ডিং তৈরির  কাজের ডাকসাইটে প্রকৌশলী। তার কাজে খ্যাতি ও যশের জন্য রিয়েল গেøাবাল ইন্টারপ্রাইজ তাকে বছরে তিন মাসের সবেতন ছুটি দিয়ে থাকে।

গোপেশ দে

 


মধুরেণ সমাপয়েৎ

কাকু একটা গল্প শুনবেন ?

আমি একটা চায়ের দোকানে বসে ধ্যানে ছিলাম।আমার ধ্যানভঙ্গ হল।

একটা ছেলে আমার পাশে বসে বেশ উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি ছেলেটির দিকে সেলুলয়েডের মোটা কাচের চশমার ভেতর দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।

অল্প বয়সী ছেলে।বয়স আন্দাজ করলাম।পঁচিশ- ছাব্বিশ।

আমাকে ছেলেটি এরকম একটা প্রশ্ন করায় বেশ অবাক হলাম।এই প্রথম মনে হয় অচেনা কেউ আমাকে এরকম প্রশ্ন করল।

আমি তার কথাটা না বোঝার ভান করে বললাম, কি বললে ?

ছেলেটি বলল, গল্প শুনবেন ?

কি গল্প ?

এবার ছেলেটি বুকপকেট থেকে চশমা বের করে বলল, প্রেমের গল্প।

বিনতা রায়চৌধুরী

সাঁঝবাতি


শীত পড়তে না পড়তেই সোয়েটার বোনার অর্ডার চলে আসে সাঁঝবাতির।সারা বছর ওকে বোনাটা চালিয়ে যেতে হয়,তবে শীতের সময় অর্ডারটা বেশি আসে,বোনার হাতটাও ওর খুব ভাল।বিদেশেও ওর বোনা সোয়েটার যায়। অসুস্থ বাবা আর মা,ভাই কে নিয়ে ওর পরিবার।

সাঁঝবাতির বিএ পাশ করার পর আর পড়াশুনা করা হয়ে উঠেনি।অভাবের সংসার তার উপর একটা এক্সিডেন্টের পর বাবার নিচের দিক টা একেবারে অবশ হয়ে গেছে তাই সংসারের সব ভারটাই ওর কাঁধে,তার ওপর ভাইটা স্কুলে পড়াশুনা করছে,এখন মানুষ হতে অনেক দেরি, তাই অনেক চেষ্টা করে যখন কোন চাকরি জুটল না,তখন পাড়ার এক দিদির সাহায্যে অর্ডার নিয়ে হাতে বোনা উলের সোয়েটার বিক্রি করে রোজগার করতে শুরু করে,পরে অবশ্য এক টা উল বোনার মেশিন কিনে বেশি টাকার অর্ডার নিতে শুরু করে। রোজগার যা হয় তাতে চলে যায় ওদের কোন রকমে। 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 ঋণ শোধ 


পাড়ার বাবলু দা যেমন মজার মানুষ ঠিক সেই রকম পরোপকারি।কারুর অসময়ে উনি নিশ্চই  পাসে থাকেন এবং শুধু তাই নয় সমস্যার সমাধান ও করেন। কিন্তু বাবলুদার বাড়ির লোকেরা ওনার এই পরোপকারী স্বভাবটা পছন্দ করেন না। ওনারা বলেন জমিদারের বংশের ছেলেরা পাড়ার কেউ মারাগেলে শ্মশানে যায়না শবদাহ করতে। কিন্তু বাবলুদা বলেন শ্মশান যাত্রা মহা পূণ্যের কাজ। শবদাহ করা আরো পূণ্যের। 

বাবলুদার বাবা মা দুজনেই বাবলুদাকে ঘরে ঢুকতে দেন না। বলেন ঐ সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে থাক তুই। বাড়িতে ঢুকিসনা। আপদ অপদার্থ এক ছেলে জন্মেছে। বাবলুদার কিন্তু কোন রাগ দুঃখ নেই সে জন্য। বলেন অসময়ে লোকের কাছে থাকা তাকে সমবেদনা জানানো  মনুষ্যত্বের কাজ। এই মনুষত্ব মানুষের হৃদয় থেকে উবে যাচ্ছে দিন দিন।

কুমকুম বৈদ্য

কনে দেখা


মেয়ে ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে. প্রথম অনসাইট ও হয়ে গেছে .সুতরাং এবার মেয়ে পাত্রস্থ করার সুবর্ণ সময়. বাবা উকিলr, মা রিটায়ার্ড প্রধান শিক্ষিকা.মেয়ের প্রেম বছর খানেক হল কেটে গেছে, সুতরাং আনন্দবাজার  এর পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন ভরসা. মেয়ের ঘোরতর আপত্তি অগ্রাহ্য় করে বেশ ঘটা করে বেরলো বিজ্ঞাপন. ব্য়াস তারপর থেকে শুরু হল ফোনের পর ফোন. সে নানা ধরনের মানুষের নানা প্রশ্ন. রেলের হকার থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সি সংস্কৃতর অধ্য়াপক লম্বা লিস্ট. গুটি কত ভদ্র সন্তান বাবার কাছে ইন্ট‍ারভিউ দিয়ে বিদায় হলেন. গুটি কয়েককে মেয়ে দেখানো হল. কিন্তু ব্য়পারটা তেমন জমল না. উৎসাহের ঢেউ যখন একটু থিতু হয়েছে, হঠাৎ একটা ফোন এল.

ভদ্রলোকের ছেলে কোল ইন্ডিয়াতে চাকরি করেন, উনি নিজে ওএনজিসি তে চাকরে করতেন রিটায়ার্ড . আসতে চান মেয়ে দেখতে. কিন্তু উনি মুর্শিদাবাদ থেকে আসবেন তাই একরাত থাকবেন. বাড়িতে তো জোর প্রস্তুতি. যদি ও মেয়েটি  প্রচন্ড আপত্তি করছিল, অচেনা  মানুষকে রাতে আশ্রয় দেওয়া বেশ বিপজ্জনক হতে পারে. কিন্তু আপত্তি কেউ কানে তুলল না.