
অথ সাধারণী কথা
নাঃ, এভাবে তো আর পারা যায় না ! সকাল-বিকেল
উঠতে বসতে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অপমান ! উদয়াস্ত খাটনির পরও পান থেকে চুন খসলেই বাঁধে
কুরুক্ষেত্র ৷ সংসারের জোয়াল ঠেলে যখন চোখ দুটো চায় একটু বিশ্রাম, তখন পিপাসা মেটাতে হয় পৌরুষত্বের ৷ নইলে জোটে ভালোবাসার ছোঁয়া —হাতে পিঠে বুকে!
অথচ সম্পর্কের সকালটা দেখে এরকম
দুর্দিনের আঁচমাত্র পাওয়া যায়নি ৷ লাভ ম্যারেজ সুচরিতা আর তপনের ৷ তপন একটা
প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে ৷ মাইনে ভালোই ৷ সবথেকে বড় গুণ, ওর স্বভাব ৷ লোকে
বলে, ওর মতো মিশুকে আর সরলমনা নাকি এ তল্লাটে আর দুটো নেই
৷ সবার সামনে হাসি-হাসি মুখটা যেন ওর পেটেন্ট ৷ গুছিয়ে খুব সুন্দর করে কথা বলতে
পারে ও ৷ আর এই সবকিছু দেখেই বাড়ির অমতেও এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিল সুচরিতা ৷ শুরু
করেছিল সংসার ৷ কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই কেমন যেন পাল্টাতে লাগলো তপন ৷ বাইরে
ঠিক থাকলেও চার দেওয়ালের মাঝে ও যেন এক শ্বদন্তওয়ালা প্রাণী, যেকোন মুহূর্তে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলবে সুচরিতার স্বপ্নগুলোকে ৷ প্রথম
দিকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও এখন আর পারে না সুচরিতা ৷ নতুন শহরে ঘর পাল্টে
আসার পর তো আরও একলা ও ৷ এখানে সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ৷ তাই সুচরিতাও নিজের সব
যন্ত্রণাকে বুকে চেপে রাখে ৷ কিন্তু আর তো পারা যাচ্ছে না ! এবার তো তপন সমস্ত
সীমা লঙ্ঘন করে দিয়েছে ! ওর অফিসের বসকে বাড়িতে ইনভাইট করেছে ও আর তারপরেই
সুচরিতাকে দিয়েছে ঘৃণ্যতম প্রস্তাব ৷ আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে সুচরিতা ৷
রান্নাঘরে দাঁড়িয়েই আশু কর্তব্য
ঠিক করে ফেললো সুচরিতা ৷ বাড়িতে এখন তপন নেই ৷ ওই লোকটাকে রেখে বেরিয়ে গেছে, সুচরিতাকে দিয়ে
গেছে শুধু শীতল চাহনি ৷ লোকটাকে বেডরুমে বসিয়ে সুচরিতা এসছে লস্যি করতে ৷ সাত-পাঁচ
না ভেবেই সুচরিতা চুপি চুপি পা বাড়ালো সদর দরজার দিকে ৷
এমন সময়—
"ভ্যাঁ......."
ঘুম ভেঙে গেছে তিতলির ৷ যেতে গিয়েও
থমকে দাঁড়ালো সুচরিতা ৷ একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক ভেঙে৷ও পা বাড়ালো বাড়ির
ভেতর দিকে ।