গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

সুভাশিস চক্রবর্তী



অ-পরিবর্তন

মেল গিবসন প্যাটার্নের মুখ আর আইনস্টাইন মার্কা চুল। এই হল ওর ট্রেডমার্ক। ফারাক বলতে, আইনস্টাইনের চুল সাদা ছিল, আর ওরটা কুচকুচে কালো। প্রথম দিকে একটা ভালমানুষী গোঁফ ছিল, যেটা কামিয়ে ফেলল কলেজে উঠেই। ওর চোখ দুটো কোন সেলিব্রিটির মত নয়। ওই চোখ দুটো একদম বিপ্লবের মত। আফটার অল, ও হল বিপ্লবের ভাই। নিজের ভাই।

বিপ্লবের আজকাল হিংসে হয়। খুব হিংসে হয় নিজের ভাইকে দেখে। বিপ্লব এখন চল্লিশ ক্রস করেছে। তার জুলপিতে পাক ধরেছে। একটু ছানবিন করলেই সাদা থান পরা চুলেরা মাথায় উঁকি মারছে। চোখের তলার চামড়া কুঁচকে এসেছে। বেশিবার ওঠানামা করলে আজকাল হাঁপ ধরে। মানে, এ বয়সের সব খুব কমন সিম্পটম আর কি। এসব থেকেই আসলে বিপ্লবের হিংসে। ইস! ভাইটাকে দেখ! এমনিতে পিঠোপিঠি ভাই। দাদা বলতে অজ্ঞান। কিন্তু, ভগবান দুজন কে দুরকম পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখল কেন? একজন তড়বড়িয়ে বুড়ো হচ্ছে আর একজন নিজের কলেজে পড়ার চেহারাটাই সুন্দর ধরে রেখেছে! সেই একমাথা কালো আইনস্টাইন মার্কা চুল, মেল গিবসনের মুখ আর ঝকঝকে দুটো চোখ। বিপ্লবের থেকে যে মাত্র দুবছরের ছোট তা বোঝা যায়? মনে হয় ঠিক যেন বিপ্লবের ছেলের বয়সী।

ওই এক সান্তনা। দুবছর হলেও, ছোট তো। আর ছোট ভাই তো ছেলেরই মতন। ওই সুন্দর চেহারাটা সবসময় চোখের সামনে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। থাক ও ওরকম সুন্দর চেহারাতেই। অভাব, দুঃখ, অসুস্থতা, বার্দ্ধক্য সব কিছুর আওতার বাইরেই থাক ও।

হাতের তোয়ালেটা দিয়ে ভাইয়ের ছবিটা সুন্দর করে মুছে দিল বিপ্লব। একটা রজনীগন্ধার মালা ওই বাইশ বছরের তাজা ছেলেটার ছবিতে ঝুলিয়ে দেখল কত সুন্দর লাগছে ওকে।

টিস্যু 


ঊর্মি আর রূপকের গহীনজন্ম নিল আজ। প্রথমবার হাতে নিয়ে ঊর্মি বুকে চেপে ধরল। তারপর নাকটা ঠেকিয়ে পাক্কা দশ মিনিট ধরে গন্ধ শুঁকল। রূপকের চোখ দুটো চিকচিক করছিল। অনেক চ্যালেঞ্জ, বাধা পেরিয়ে আজ প্রথমবার পৃথিবীর মুখ দেখল গহীনগহীন-এ এবার ওরা গোটা পাঁচেক কবিতা, গল্প আর একটা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। প্রবন্ধের বিষয়, লিটিল ম্যাগের সুদিন-দুর্দিনগহীনএর মত সদ্য প্রকাশিত একটা লিটিল ম্যাগাজিনের জন্য প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধই বটে। গহীনএর প্রথম কপিটা কাকে দেবে তা নিয়ে বিস্তর ভাবনা চিন্তা শুরু করল ওরা। শেষে ঠিক হল, কেয়াতলার পাঁচু বিশ্বাস কে দেওয়া ভাল। পাঁচু এলাকার নামী কবি। অনেক বড় বড় জায়গায় লেখে টেখে। এত কষ্ট করে করা কাগজটার একটা রিভিউ করে দিলে দারুণ হবে।

পাঁচু বিশ্বাসের ট্রেন ধরার তাড়া আজ। ট্যুরে যাচ্ছে পাঁচু। প্রথমটায় ওদের ভাগিয়েই দিচ্ছিল। শেষে একটা কথা ভেবে বইটা নিয়ে নিল। ঊর্মি আর রূপক চলে যেতেই পাঁচু ভালো করে দেখল গহীনএর পাতার সংখ্যা। পাতা মাত্র ২০টা। তাতেই চলবে। পাঁচু টিস্যু পেপার কিনতে ভুলে গেছে। গহীনটাই ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল পাঁচু। হাত ও শরীরের অনেক কিছু মুছতে কাজে আসবে ট্রেনে।

বিনে পয়সার ২০টা টিস্যু কে ছাড়ে?