স্পৃশ্য অস্পৃশ্য
পোশাক
মোড়া মানুষ মানুষের আসল রূপ নয়। তবে স্পৃশ্য অস্পৃশ্য মানুষের সংজ্ঞা কি ভাবে দেওয়া
যাবে ?
ভবানন্দের
খালি গায়ে পৈতা যদি না ঝুলত তবে ব্রাক্ষ্মণ বলে কে তাঁকে চিনত ? প্রাথমিক ভাবে মানুষকে মানুষের
আদলে চেনা যায়। তারপর আসে জাতপাতের ব্যাপারগুলি।
বর্ণশেষ্ঠ
ব্রাক্ষ্মণ নাকি এই ভবানন্দ। সমাজে এমন অনেক উন্নাসিক ব্যক্তি আছেন বাস্তবে তাঁরা ভেকধারী।
–এই যা যা, আমায় ছুঁয়ে দিস না যেন! নিজেকে সরিয়ে নিতে নিতে
ভবানন্দ বললেন।
–না, ঠাকুর,আমি স্নান কইরে এয়েছি,মুক্তার চোখে জল। সে ঠাকুরের
কাছে মৃতপ্রায় স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইতে এসেছে।
–না,না,তুই জানিস,মন্দিরে তোদের প্রবেশ নিষেধ!
মুক্তার
কাকুতি মিনতি ব্যর্থ হল। ঠাকুরের চরণস্পর্শ হল না তার।
ওই
মুক্তাকে ভবানন্দ চেনেন,ডোম পাড়ার শম্ভুডোমের মেয়ে। তার গড়ন-গুড়ন বেশ ভালো বটে! ওর স্বামীর কোন বড় অসুখ, তাই পাথরে, বট অশ্বত্থের গোঁড়ায় মুক্তা
মাথা ঠুকে বেড়াচ্ছে।
সে
দিন রাতে ভবানন্দ মন্দিরের দোর দিয়ে ঘরে যাবার যোগার করছিলেন। হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ল মন্দিরের
দোর গোরায় কেউ যেন দাঁড়িয়ে ! তিনি চীৎকার করলেন, কে ওখানে ?
ধীর
পায়ে মুক্তা এগিয়ে এলো, কান্না কণ্ঠে বলে উঠলো, আমি ঠাকুর !
ভবানন্দ
ধমকে উঠলেন,
আবার এসেছিস
তুই !
–আমার স্বামীডা মইরে যাচ্ছে
বাবু! ভবানন্দের দুই পা জড়িয়ে
ধরল মুক্তা। পা সরিয়ে নেবার সময় পেলেন না ভবানন্দ। তিনি টের পাচ্ছিলেন,মুক্তার অসমতল বুকের পাশটা তার পায়ের ওপর ধুকধুক করে যাচ্ছে। ওর গায়ে কেমন মহুয়া
পানা গন্ধ !
মুক্তার দিকে
তাকালেন তিনি,
চিরন্তন এক
নারী । আধ অন্ধকারে ভবানন্দর মনে হল,পোশাক বিহীন এক নারী দেহ তার সামনে
দাঁড়িয়ে। আঁধারে মানুষের ভেদাভেদ করার আর কিই বা থাকতে পারে ! ভবানন্দ শান্ত ধীর ডেকে উঠলেন,মুক্তা!
মুক্তা
মুখ উঁচু করে তাকায়। ভবানন্দ ওকে টেনে উঠালেন। তাঁর দেহ শিহরিত হল, আয় মন্দিরের ভেতরে
আয়,মুক্তাকে টেনে নিলেন তিনি।
সমস্ত ভেদাভেদ দুরে সরে যাচ্ছিল। তাপোষ্ণ অনুভবে ভবানন্দ ডুবে যাচ্ছিলেন । মুক্তাকে
দু হাতে তিনি জড়িয়ে ধরলেন,মুক্তা ছটফটাছিল। ভবানন্দ অগ্নিতাপে ঘিয়ের মত গলে যেতে থাকলেন।