গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

প্রদীপভূষণ রায়





হারানো সুখ



দেখা করবার জন্য রোজই ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে বাস স্ট্যান্ডে । কিছু হয়ত বলতে চায় । বলা হয়ে ওঠে না । রোজই দেরি হয়ে যায় মেয়েটির । বাস স্ট্যান্ডে আসতে না আসতেই চাটার্ড বাসটা চলে আসে তারপর মেয়েটা হুড়মুড় করে উঠে যায় বাসে । বাস ছেড়ে দেয় । ছেলেটা বুক পকেট থেকে একটা ছবি বার করে বারবার দেখে । দেখতে দেখতে দুচোখ জলে ভরে ওঠে । একটা হতাশায় মলিন হয়ে ওঠে মুখ । একটা সম্ভাবনায় ঘন কুয়াশা যেন এসে ঢেকে দিয়ে যায় সব । হঠাৎই আশার আলো জ্বলে উঠেছিল । নিজেও খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল সেদিন যেদিন প্রথম দেখা হল । পরদিন আবার বাস স্ট্যান্ড আজ কথা বলতেই হবে । মেয়েটাকে আসতে দেখে ছেলেটা এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে । একসময় সামনে এসে দাঁড়ায় । মেয়েটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ‘ কিছু বলবে ?’ ছেলেটা কিছু না বলে পকেট থেকে ছবিটা বার করে মেয়েটার হাতে দেয় । ছবিটা হাতে নিয়ে মেয়েটার বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটতে চায় না । এ কি করে সম্ভব ! এ তো তারই ছবি । ছেলেটাকে প্রশ্ন করে ‘ এ তো আমার ছবি । এ ছবি কোথায় পেলে তুমি ?’ ছেলেটা বলে ওঠে ‘এটা আমার দিদির ছবি । গত বছর দিদি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেছে ।  
- কোথায় ?
- যেখানে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না ।
মেয়েটি হতবাক । এতো মিল কী করে সম্ভব !
ছেলেটি আবার বলতে থাকে ‘ আমার আরও একজন দিদি ছিল । খুব ছোট বেলায় হারিয়ে গেছে । অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নাকি কোনও খবর পাওয়া যায়নি । এই দিদিরই যমজ । দুজনকে নাকি একই রকম দেখতে ছিল । তাই আপনাকে দেখতে পেয়ে মনে হয়েছিল আমার দিদিই যেন ফিরে এসেছে । একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন ।’
- বলো
ছেলেটি পকেট থেকে একটা রাখী বের করে মেয়েটির হাতে দেয় । বলে ‘ প্রত্যেক বছর আজকের দিনে আমার দিদি এই রাখী আমার হাতে বেঁধে দিত । আজ রাখী পূর্ণিমা যদি আপনি এটা আমার হাতে বেঁধে দেন ।’

মেয়েটার চোখের জলের বাঁধ মানে না । ছেলেটাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে ‘ হ্যাঁ ভাই শুধু আজ নয় প্রত্যেক বছরেই এ রাখী আমি তোমার হাতে বেঁধে দেব । ধরে নাওনা আমিই তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই দিদি আবার ফিরে এসেছি ।