
হারানো সুখ
দেখা করবার জন্য রোজই ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে বাস স্ট্যান্ডে । কিছু
হয়ত বলতে চায় । বলা হয়ে ওঠে না । রোজই দেরি হয়ে যায় মেয়েটির । বাস স্ট্যান্ডে আসতে
না আসতেই চাটার্ড বাসটা চলে আসে তারপর মেয়েটা হুড়মুড় করে উঠে যায় বাসে । বাস ছেড়ে
দেয় । ছেলেটা বুক পকেট থেকে একটা ছবি বার করে বারবার দেখে । দেখতে দেখতে দুচোখ জলে
ভরে ওঠে । একটা হতাশায় মলিন হয়ে ওঠে মুখ । একটা সম্ভাবনায় ঘন কুয়াশা যেন এসে ঢেকে
দিয়ে যায় সব । হঠাৎই আশার আলো জ্বলে উঠেছিল । নিজেও খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল সেদিন
যেদিন প্রথম দেখা হল । পরদিন আবার বাস স্ট্যান্ড আজ কথা বলতেই হবে । মেয়েটাকে আসতে
দেখে ছেলেটা এগিয়ে যায় মেয়েটার দিকে । একসময় সামনে এসে দাঁড়ায় । মেয়েটা অবাক হয়ে
প্রশ্ন করে ‘ কিছু বলবে ?’ ছেলেটা কিছু না বলে পকেট থেকে ছবিটা বার করে মেয়েটার
হাতে দেয় । ছবিটা হাতে নিয়ে মেয়েটার বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটতে চায় না । এ কি করে
সম্ভব ! এ তো তারই ছবি । ছেলেটাকে প্রশ্ন করে ‘ এ তো আমার ছবি । এ ছবি কোথায় পেলে
তুমি ?’ ছেলেটা বলে ওঠে ‘এটা আমার দিদির ছবি । গত বছর দিদি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে
গেছে ।
-
কোথায় ?
-
যেখানে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না ।
মেয়েটি
হতবাক । এতো মিল কী করে সম্ভব !
ছেলেটি আবার বলতে থাকে ‘ আমার আরও একজন দিদি ছিল । খুব ছোট বেলায়
হারিয়ে গেছে । অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নাকি কোনও খবর পাওয়া যায়নি । এই দিদিরই যমজ ।
দুজনকে নাকি একই রকম দেখতে ছিল । তাই আপনাকে দেখতে পেয়ে মনে হয়েছিল আমার দিদিই যেন
ফিরে এসেছে । একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন ।’
-
বলো
ছেলেটি পকেট থেকে একটা রাখী বের করে মেয়েটির হাতে দেয় । বলে ‘
প্রত্যেক বছর আজকের দিনে আমার দিদি এই রাখী আমার হাতে বেঁধে দিত । আজ রাখী
পূর্ণিমা যদি আপনি এটা আমার হাতে বেঁধে দেন ।’
মেয়েটার চোখের জলের বাঁধ মানে না । ছেলেটাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে
ওঠে ‘ হ্যাঁ ভাই শুধু আজ নয় প্রত্যেক বছরেই এ রাখী আমি তোমার হাতে বেঁধে দেব । ধরে
নাওনা আমিই তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই দিদি আবার ফিরে এসেছি ।