গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

১০ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ২৬শে মে ২০২১


 এই সংখ্যায় ১১টি গল্প লিখেছেন ঃ তাপসকিরণ রায়, নীহারচক্রবর্তী, ভীষ্মদেব সূত্রধর, মীনা দে, রত্না বড়ুয়া (মজুমদার), সজল কুমার মাইতি, পার্থ রায়, স্তুতি সরকার, সৌমিত্র চৌধুরী, মনোজিৎ কুমার দাশ ও ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।

নীহার চক্রবর্তী

 


কেয়ামত


 আমাদের এলাকার প্রায় সর্বজনের হরিদার আর বাঁচতে ইচ্ছা হয় না। মাঝেমধ্যেই বিরস-মুখে কাউকে-কাউকে শোনায়।তখন হরিদা বেশ আশার আলো দেখাতে চায় অন্য পক্ষ।

মোটামুটি সবার মুখে এককথা, ‘তুমি তো অসুখী নও। দুই ছেলে তোমার চাকরী করে। মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছ। আমরা যদ্দুর জানি বৌদি খুব ভালোমানুষ। পেনশন তো কম পাও না।তাহলে? এসব একদম ভেবো না।‘

সৌমিত্র চৌধুরী

 


রোদ বৃষ্টি

ভীষ্মদেব সূত্রধর

 


তিমিরান্ধস্য


মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এলো, আশ্রয়ের জন্যে ভাঙা স্কুল ঘরে জনা কতক ছিল বটে, এখন মাত্র দুজন বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এর থেকে। বিভু আধ ভেজা কিন্তু অন্যপ্রান্তে যে যুবতী দাঁড়িয়ে ছিল তার শরীর জবজবে ভেজা, চুল থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে বুকে, অন্তর্বাসহীন বুক জেগে উঠছে চরের মতো, বিভু সেদিকেই তাকিয়ে আছে নিষ্পলক, না মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই যুবতীর, সে দাঁড়িয়েই আছে। বিভুর হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যায়, শরীর তেতে ওঠে, স্তনবৃন্তে হা করে চেয়ে থাকে উঠতি যৌবনের স্বাদে, ভেতরে প্রতঙ্গটি নড়েচড়ে ফের শান্ত হয়। বৃষ্টির ছাঁট আসে গায়ে পড়ে, থামবার বিরাম নেই। যেন আরো কষে মেঘ গলছে, একটা অটো এসে সামনে দাঁড়ালে যুবতী তাতে ওঠে এবং মুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে যায় অটো, আবছা অন্ধকারে আর বেশিদূর দেখা যায় না, পৌরসভার বাতিগুলো একে একে জ্বলে, কাঁদা পথে দুটো গাড়ি ছুটে চলে যেতে জলকাদা ছুঁড়ে মারে এবং মিলিয়ে যায়। বিভু হাতঘড়ি দেখে, আর থাকা চলে না, ওদিকে চারদিক ফাঁকা আর গুমোট অন্ধকার, পা ফেলে এগোয়, কিছুদূর যেতে থমকে দাঁড়ায়। উফ শিট! চটির ফিতে ছিঁড়ে গেছে, অগত্যা খুরিয়ে চলতে চাইল, যেহেতু দ্রুত যাওয়া চাই তাই জুতো জোড়া হাতে নিয়েই চলবার কথা ভাবল সে। কলেজ স্ট্রীটের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ বা যে কটা দোকান খোলা আছে সেখানেও ভিড়ের বালাই নেই, এমন বৃষ্টি অনেকে উপভোগ করছে , অনেকের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। 

রত্না বড়ুয়া (মজুমদার)

 


এক বিন্দু নয়নের জল

 

 আজকাল দেখি ধর্ষণ নিয়ে খুব আলোচনা। আগে যে হত না, এমন নয়। কিন্তু মিডিয়া সোচ্চার খুব এখন।

 

এমন একটা গল্প এটা যে, একটু ভাবার আছে। ওপার বাংলার সুবিখ্যাত এক পরিবার। আর যাকে কেন্দ্র করে এই গল্প, সে এক নাবালক মেয়ে। কৈশোর পার না হওয়া।

স্তুতি সরকার

 


বিবর্ণ পাতা



"ঝরা পাতা গো আমি তোমারি দলে।"
আজকাল তৃষিতার প্রায়ই মনে হয় কথাটা। মনের ক্লান্তি যেনো কাটতে চায় না। প্রায়ই কাজ সারা হয়ে গেলে মনে মনে বলে রবি ঠাকুরের গানের একটা লাইন- ‘আমার হলো সারা‘।
তৃষিতার জীবনে প্রেম এসেছিল তার সেই ছোট্ট বেলায়। যখন ওর বয়স ১৩ বছর। বাবা, কাকা , জ্যাঠারা মিলিয়ে বিরাট জয়েনট ফ্যামিলি। একান্নবর্তী পরিবার। খুড়তুতো জাড়তুতো ভাই বোন মিলিয়ে অনেক বড়ো ফ্যামিলি। তার মধ্যে কেমন করে যেনো জীবন সোমের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলো তৃষিতার। সেই ভালো লাগার থেকে প্রেম- গভীর প্রেম। তৃষিতার থেকে বয়সে বেশ কিছুটা বড় জীবন ওকে একদিন এ বিষয়ে জিগেসও করেছিলো। ‘এটা কি ঠিক হচ্ছে?‘ ‘কোনটা।‘ ‘তোমার আর আমার বয়সের এতো ডিফারেন্স!‘ ‘আমার তো কিছুই মনে হয় না?‘ তৃষিতা বলল। সত্যি বলতে কি জীবন সোম অতি সাধারণ একটা ছেলে। ওর মধ্যে প্রেমে পড়ার মতো কি পেয়েছিলো তৃষিতা! হ্যাঁ, কথা বলতে পারতো জীবন। জমিয়ে দিতে পারতো ঘরোয়া আড্ডা। সেটাই তো সব নয়। জীবনের চলার জন্য দরকার একটা স্টেডি ইনকাম। সেখানেই তো সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। বাবা মা ভালোবাসার ধন একমাত্র মেয়েকে ওরকম পাত্রে কিছুতেই বিয়ে দেবেন না। সেটা ওরা দুজনেই জানতো। সুতরাং অপেক্ষা করতেই হবে তৃষিতার ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত।

মীনা দে

 


অঘটনঘটনপটিয়সী


আজ বইমেলার চতুর্থ দিন। অর্ণব খুব এক্সাইটেড,

আজ তার পঞ্চম কবিতার বই প্রকাশ হবার দিন। বিশিষ্টজনেরা সবাই মঞ্চে উপস্থিত। একটু পরেই এসে পড়বেন স্বনামধন্য কবি,সুবিমল সমাদ্দার। তিনিই মোড়ক উন্মোচন করবেন। আরও কিছু উঠতি লেখক, কবির বইয়েরও তিনি মোড়ক উন্মোচন  করবেন। 

পার্থ রায়

 


রামধনু


বৃষ্টির পরে রোদ্দুর উঠেছে। এখন সবকিছুই যেন ছাড়া ছাড়া। আধ ঘণ্টা এক টানা বৃষ্টি হলেই মনে হয় আষাঢ়ে বৃষ্টি বুঝি খুব ঝাঁপিয়ে হল। পায়ে পায়ে ব্যাল্কনিতে এসে দাঁড়ায় শিঞ্জিনী। ফুলের টবগুলোর একটু পরিচর্যা করে আকাশের দিকে দৃষ্টি মেলে। খুশির চোখে দ্যাখে রামধনু উঠেছে। রামধনু ওর খুব প্রিয়। কারণ রামধনু যেদিন ওঠে সেদিন ও কোন ভাল খবর পায়। সে আকাশে দেখা যাবার আগেই হোক বা পরে। রামধনু দেখা গেলে ওর স্কুলবেলার প্রিয় বন্ধু রিমির সাথে আড়ি থেকে ভাব হয়েছে। এক পশলা বৃষ্টির মাঝে সেবার বি.এর রেজাল্ট বের হল। খুব ভাল ভাবে পাশ করেছিল। ও মা! শেষ বিকেলে তিনি ঠিক উদয় হলেন। আকাশ আলো করে। শিঞ্জিনীর ভাল লাগা তখন উড়ন্ত প্রজাপতির ডানায়। এমন আরও উদাহরণ আছে। আজ দুপুরে পুলিশ স্বামীর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে ওর মনে হচ্ছিল আজ তো ওনার উদয় হবার কথা। ঠিক তাই। এক পশলা ঝিরঝিরে বৃষ্টির পরে বিকেল গড়ানো আকাশের বুকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট শিশুর মতো খিলখিল হাসি মুখে তেনার আবির্ভাব। আকাশের বুকে এই রামধনুটার সাথে সাথে আর একটা রামধনুও খিলখিলিয়ে ওঠে। সেটা ওর মনের আকাশে।     

 

সজল কুমার মাইতি

 


রসিক লাল


নামটা রসিক লাল l রসের ভাঁড়ার l রসে বসে থাকতে ভালো বাসে l যদিও ইংরেজী বানান অনুযায়ী নামের উচ্চারণ হওয়া উচিত রসিকা , তবে সবাই তাকে রসিক লাল ই বলে l রসিক সুরা বিলাসী, সুরারসে আকণ্ঠ সিক্ত থাকাটা তার চিরকালের অভ্যাস l রসিক লাল অবাঙালি হলে কি হবে বাংলায় বহুদিনের বাসিন্দা l বাংলা ও মোটামুটি ভালোই বলতে পারে, যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাঙালি টান পরিস্কার বোঝা যায় l তা সেই রসিক লাল পড়াশোনায় যত না দড়, তৈল মর্দনে একেবারে শিল্পী l রসিক লালের বহিরঙ্গ অনেকটা অসুরের মতো l কেউ কেউ আবার এই নিয়ে গল্প ফেঁদে বসে, বলে কিনা পাড়ার দুর্গাপূজোর শিল্পী শুভ পাল অসুরের জায়গায় রসিক লালকে মায়ের পায়ের তলায় বসিয়ে দিয়েছিল l যা দেখে প্রথমে দর্শনার্থীদের অনেকেই আসল না নকল বুঝতেই পারে নি l

মনোজিৎকুমার দাস


 জন্ম পরিচয়ই মুখ্য নয়,মানুষ পরিচয়ই প্রধান

                                           বীণা সাত আট বছর বয়স থেকে জোয়ার্দার বাড়ি কাজ করে। সকাল থেকে গভীর রাত অব্দী কাজের বিনিময়ে আধা পেট ভাত আর দুখানা পুরাতন কাপড় পায়। অধিকাংশ সময় বাসি বা আঁচড়া ভাত তরকারি খেতে হয়। পান থেকে চূন খসলে বকাঝকার অভাব নেই। গায়ে হাত তুলতেও অনেকের বাঁধের না! বাড়ির ছোট বড় সবায় যেন একই শিক্ষায় শিক্ষিত। সবার রক্ত গরম এই একজনের উপরে! প্রত্যকের ব্যক্তিগত কাপড়, সকালের কাপড়, যাবতীয় জিনিস ধুতে হয়, লন্ড্রি করতে হয়, রান্না-বান্না গৃহস্থলীর কাজের কোন শেষ নেই! তবে মাঝে মধ্যে মাছ মাংস থাকলে কাউকে না বলে কয়ে দু এক পিচ খেয়ে নেয়! খাবেই বা না কেন? এত খাটুনির পরও নিজ হাতে কেটেকুটে রান্নাবান্না করার পরও নিজের ভাগ্যে বেশি কিছু জোটে না  বললে চলে!  কখনো কখনো  উটকো লোকজন কিংবা কুকুর বিড়ালে খাবার খেয়ে ফেললে তার দোষও কাজের মেয়ের কাঁধেই চাপে! এর জন্য মাঝে মাঝে দু চারটে চড় থাপ্পরও খেতে হয়! 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

১০ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা ।। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এই সংখ্যায় ৮টি গল্প । লিখেছেন : তাপসকিরণ রায়, সুধাংশু চক্রবর্তী, সজল কুমার মাইতি, কৃষ্ণা মালিক, কাজী লাবণ্য।মনোজিৎ কুমার দাশ, জয়দেব সূত্রধর ও গোপেশ দে ।

তাপসকিরণ রায়

 হ্যান্টেড কাহিনী--৫৭

আক্রান্তকাল 



--ভ্যাকসিন তো বেরিয়ে গেল--
 

কে? কে?? রোহিত চমকে উঠলোl 

খানিক স্তব্ধতার পর বাতাসে ইকো সাউন্ডের মত ভেসে এলো, আমি রে রোহিত, তোর দাদু--

রোহিতের দাদু পরেশ বাবুর বয়স সত্তরের কাছাকাছি। রেস্টিকসানে থাকা সত্ত্বেও কি ভাবে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তা জানা নেই।

সুধাংশু চক্রবর্তী


 পদ্মার ইলিশ


 

মাছের থলেতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ধাঙ্গিনী ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, মাছের থলি ফাঁকা কেন ? মাছ পাওনি ? নাকি সব টাকা সবজীর পিছনে ঢেলে এসেছো ?

কৃষ্ণা মালিক


 বোবা


খদ্দের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে মানিক। হাটের দিন সকালে, চাকের চারপাশে মৌমাছিদের ওড়াউড়ির মতো দোকানে ভিড়টা জমেছেও খুব। যত ব্যস্ততা বাড়ছে তত লোকটা বেকুব বনে যাচ্ছে।কখনও এর মাল ওকে, ওর মাল তাকে দিচ্ছে ; নয়তো সংখ্যায় কমবেশি। মালিক একবার গম্ভীরসে আওয়াজ ছাড়লেন, এই মানকে -! যেন সাবধানবানী।যাইই হোক, তিনি হলেন ভদ্রলোক। তাই দাঁতমুখ যতই খিঁচুন না কেন , বাঞ্চোত , জানোয়ার শূয়ার – গালাগালগুলো বিড়বিড় করে বর্ষণ করেন। যার উদ্দেশ্যে বলা সে হাজার বোবা হোক , শুনতে পায় পরিষ্কার। মালিক যত দাঁত খিঁচোন , তার দাঁত তত খুলে যায়।

সজল কুমার মাইতি

 


গ্রামের নাম শিয়ালমারি


" এই প্রজাপতি, তোরা এইদিকে বোস ফড়িং, তোরা প্রজাপতিদের ডানদিকে সারিবেঁধে বোস ফুলেরা তোরা মাঝখানে থাক কাঠবেড়ালি, তোরা আমার বাঁদিকটায় বোস মৌমাছি, তোরা কিন্তু ফুলেদের কাছে বসবি না পাখিরা, একদম ফাঁকি দিবি না দূরে দৃরে থাকবি না আজ যা পড়াব, কাল সেগুলো সব পড়ে আসবি আমি কিন্তু কাল সবার পড়া ধরবো কোন ফাঁকি চলবে না" ছোট্ট মিলির ক্লাসে এরাই ছাত্রছাত্রী রোজ নিয়ম করে এদের সঙ্গে পড়ানোর ছলে খেলা করে মিলি মিলি শিয়ালমারি গ্রামের পাঠশালার মাস্টার স্থিতধীর মশাই এর একমাত্র কন্যা ছোট্ট মিলির ছাত্রছাত্রী রূপী খেলার সাথী এরা মিলির এক ডাকে এরা সবাই হাজির হয় মিলি এদের নয়নের মনি শিয়ালমারি মিলির কল্যাণে যেন ছবিছড়ার দেশ এর একদিকে তীর্ণা অন্য দিকে তপস্যা দুই নদী ঘিরে রেখেছে শিয়ালমারিকে

জয়দেব সূত্রধর


 মাথা


বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টিতে গা বাঁচাতে যতটুকু আশ্রয় পেয়েছিলাম তাও সবার ঠেলাঠেলিতে হারানোর মতো অবস্থা। সন্ধ্যে নেমেছে অনেকক্ষণ হল।শহরের ল্যাম্প পোস্টগুলো জ্বালানো হয়নি, অন্ধকারে দু একটা কাক এই বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে। এক কাপ চায়ের উদ্দেশ্যে বেরোতে এই নাজেহাল।ছাতা মাথায় দিয়ে পথচারীদের কেউ কেউ গন্তব্যে পৌছোচ্ছে। আমার গন্তব্য এখানেই। বাতাসে বৃষ্টির ছিট, প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত মুড়িয়ে নিয়েছি, গোড়ালী থেকে বাকিটুকু ভিজে চলেছে, যতটুকু পারা যায় রক্ষা করছি।এরই মধ্যে রাস্তায় একজন বয়স্কার পদস্খলন হয়েছে, আমি টের পাইনি, সেদিকে লক্ষ্য করিনি, গরম চায়ের গন্ধটা নাকে আসতেই ছট ফট করছি, এইতো আর একটু।

কাজী লাবণ্য


 দ্বৈরথ


 

অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত যে আঁধার, উদ্ভাসিত যে আভা, সেই আভা বা আলো আঁধারির মধ্য দিয়ে, মহাকাশের বুক চিরে অসম্ভব দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে- বিশাল জাম্বো জেট। পেছনে ফেলে এসেছি জন্মভূমি, স্বদেশ। যাত্রী ক্রু মিলে প্রায় ৪ শত মানুষ নিজ নিজ সিটে দীর্ঘ যাত্রায় কারো চোখ সামনের নীলাভ স্ক্রিনে থাকলেও বেশীরভাগই ঝিমুচ্ছে বা ঘুমুচ্ছে। কেবিন ভর্তি শ্রান্তির ঘুম। আকাশে আধ খানা চাঁদ ঝলমলে আনন্দে নরম আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে অবিরাম।  কেবল ঘুমের লেশমাত্র নেই, আমার দু চোখে। আমি সজাগ, সম্পূর্ণ সজাগ। পাশের সিটেই আমার ৪ বছরের সন্তান, আমার স্বামী নিশ্চিন্ত গভীর ঘুমে অচেতন। হয়তোবা সে জানে আমিও ঘুমাচ্ছি। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। ঘুম নেই আজ কয়েক দিন ধরেই। হয়ত আরো অনেক দিন আমি ঘুমুতে পারব না।   

মনোজিৎকুমার দাস


 প্রজাপতির লিখন                   

                                                  

শীতকালটা ছোটবেলা থেকেই ললিতা’র ভাল লাগে । লেপের ভেতর থেকে উঠার পর উঠোনের এক কোণে আগুন পোহানোর কথা এখনো তার মনে পড়ে । ঠাকুরদার আমলে পাড়ার মধ্যে ঠাকুরবাড়ির মানসম্মান ছিল আলাদা। ঠাকুরবাড়ির বড়গোসাইকে লোকে গন্নিমন্নি করার কথা ললিতা এই বয়সেও মনে আছে। সে সময় ললিতা ভাবত , ঠাকুরবাড়ির বড়গোসাই আমার ঠাকুরদা, তাই আমাদের একটা আলাদা সম্মান আছে ।

গোপেশ দে


শুকদেবের বেঁচে থাকা




সুকদেবের বয়েস ত্রিশ প্লাস।এই ত্রিশ বছর বয়েসে হঠাৎ একদিন তার মনে হল, মানুষ একটা স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে।প্রতিটা মানুষের মধ্যেই স্বপ্ন আছে, আশা আছে, সেটাই তার বাঁচার অনুপ্রেরণা। কিন্তু সে কয়েকদিন ধরে অনেক ভেবে দেখেছে তার কোনো স্বপ্ন নেই, আশা নেই, তাহলে সে বেঁচে আছে কেন ?

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২১

১০ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা । ২৯ জানুয়ারি ২০২১

 

এই সংখ্যায় আটটি গল্প লিখেছেন : সজল কুমার মাইতি, সুধাংশু চক্রবর্তী, জয়িতা ভট্টাচার্য, নীহার চক্রবর্তী, গোপেশ দে, সুদীপ ঘোষাল, ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী মনোজিৎ কুমার দাস 

সজল কুমার মাইতি


 মর্নিং ওয়াক


এদের মর্নিং ওয়াকের একটা গ্রুপ আছে। তাতে অনেক চরিত্র। চারদিক ঘেরা ওয়েলমেন্টেন্ড সল্টলেকের এফ সি পার্ক। সকাল সন্ধে নারী পুরুষ অনেকেই এখানে আসে শরীর চর্চা করতে। শুধু এফ সি ব্লক নয় অন্যান্য ব্লকের লোকজন ও আসে। এখানে বসার সাধারণ জায়গা ছাড়া ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য একটি শেড আছে। সেটাই এদের আড্ডা মারার জায়গা। এই গ্রুপের এক সদস্য হল কাঞ্জিলাল। কিংশুক কাঞ্জিলাল। সদস্যরা ওকে 'কাঞ্জি' বলে ডাকে।

সুধাংশু চক্রবর্তী

 

ভাসছি আতঙ্কের স্রোতে

 

দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে । আমি একজন সামান্য ব্যবসায়ী । ছোটোখাটো খেলনার দোকান চালাই । পড়াশোনা করেও একটা চাকরী জোটাতে পারিনি । স্ত্রী ঋতমার বড় হয়ে ওঠা এবং পড়াশোনা সবই এলাহাবাদে । সেখান থেকেই হিন্দিতে এম এ করেছে । ছোটখাটো  দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে দেখে ঋতমা স্বেচ্ছায় বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে হিন্দি ভাষার কোচিং দিতে শুরু করে । ছাত্রছাত্রীদের ভাগে ভাগে শেখায় । এক একটা ভাগকে সপ্তাহে তিন দিন সময় দেয় । এতে উপার্যন ভালোই হচ্ছিলো । কিন্তু লকডাউন যে তাতেও থাবা বসিয়েছে । 

জয়িতা ভট্টাচার্য

 


ঘাসফড়িং 


 চুম্বনের প্রায় কাছাকাছি এসে হঠাৎ চোখে পড়ল সেই

ঘাসফড়িংটা!

সে দুলে দুলে দুব্বো ঘাসের গা থেকে পিছলে গেল,হারিয়ে গেল। আবার টুকুস করে জানলায় উঁকি।

আর অমনি সামনে বিরাট প্রান্তরটা ভেসে উঠল।ঘাসফড়িং দেখছে সৃজা একদৃষ্টে। 

মুহূর্তে উপসর্গবিহীন হয়ে যায়।

শৈবালের ঠোঁট অনুভব করতে পারে না এত সূক্ষ্ম তফাত।  ঠোঁট ইজ ঠোঁট।  জোরে টেনে নেয় কাছে। দুপুরের এই অনুষ্ঠানে সৃজার তেমন আপত্তি নেই, কিন্তু  আজ মনটা ফড়িং এর ডানায় চড়ে বেড়াতে চলে গেছে তার। 

নীহার চক্রবর্তী

 


গোবিন্দ-বিজয়


 অসম্ভব-অসম্ভব কথা সব মাথায় আসে গোবিন্দর ।

সেদিন ও বন্ধুদের বলে,'ভারত থেকে এরপর কেউ মহাকাশে গেলে আমিই যাবো ।'

ওর কথা শুনে বন্ধুরা অবাক ।

বন্ধু নিমাই বেশ বিস্ময়ের সুরে ওকে বলল,'সে কী করে সম্ভব,শুনি ? তুই তো ঘেঁষটে-ঘেঁষটে ক্লাসে পাস করিস ।'

অন্য বন্ধুরা শুনে বেশ জোরে হেসে উঠলো ।

বন্ধু ফটিক আবার টিটকারি দিতে ছাড়ল না ।

সে গোবিন্দর দিকে তাকিয়ে মুচকি-হেসে বলল,'তুই পারবি । রাকেশ শর্মা শুনেছি বেশিদূর পড়েনি ।'

গোবিন্দর মাথা বেশ ঠাণ্ডা ।

স্মিত-হেসে উত্তর দিলো,'দেখাই যাক তবে ।'

সুদীপ ঘোষাল

 


প্রেমিক


বাসে উঠেই একটা লোক এক সুন্দরী মহিলার পিছনে দাঁড়ালো।বাসে বেশ ভিড়। এই লোকাল বাসগুলো একদম, যাকে বলে নড়বড়ে। খাটালা বাস দুলতে দুলতে চলেছে। লোকটি আরামসে পিছনে দাঁড়িয়ে । কোনরকমে ব্যালেন্স রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। 

বাসের কুড়ি জোড়া চোখ কমপক্ষে নজর রাখছে। 

 

 মহিলাটি গর্জে উঠলেন,সকালে উঠেই গাঁজা সেবন করেছেন মনে হয়। একটু সরে দাঁড়ান। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুন। লোকটি সরে দাঁড়াল। কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে পারছেন না ভিড়ে।  

আমি দূরে ছিলাম। বুঝলাম,লোকটার কপালে কষ্ট আছে। 

গোপেশ দে

 


সমাধান

সন্ধের একটু পর  মাঠের মধ্যে চারজন লোক বসে আছে।

উত্তুরে হাওয়া শীতের জানান দিচ্ছে।লোকগুলো বসে এই সময় গল্প করে।একটা, দুটো বিড়ি ধরিয়ে ভাগ করে খায়।

নগেন বিড়িতে কয়েকটান দিয়ে নান্টুর দিকে বাড়িয়ে দিল, একটা গান চালা।

নান্টু বলল, কী গান?

ধুম ধারাক্কা টাইপের চালা।

নান্টু মোবাইলে একটা গান চালিয়ে দিল।তাদের চারজনের মধ্যে নান্টুরই মোবাইল আছে। গানও শোনা যায়।চিপ বসানো আছে মোবাইলে।

হেমন্ত, পাইকার উঠে দাঁড়িয়েছে।

হেমন্ত হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নগেন আর নান্টুর দিকে।মানে ওদেরও উঠতে হবে।ওরা উঠল এবং নাচ শুরু করল।

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 


বিশু খুড়ো  

আজ বিশু খুড়ো কে খুব মনে পড়ছে l আজ ওনার জন্মদিন l ওনার পুরো নাম বিশ্বভূষণ ভট্টাচার্জী l আমরা বিশু খুড়ো বলেই ডাকি l বিশু খুড়ো বিপত্নীক l বয়েস 78 হল এখন চোখে ভালো দেখতে পারেন না l তাই  মেজাজটা সর্বদা খিট খিটে l অবসরের পরে আরো খিট খিটে হয়ে গিয়েছেন l ঘরে মানুষ জন বলতে উনি আর ওনার এক নাতি l সে মাঝে মধ্যে দাদুর কাছে আসে কিন্তু পরক্ষনেই ফিরে যায় নিজ গৃহে l

মনোজিৎকুমার দাস

 

যৌবন সরসী নীরে                                                                                              

আমি আর ও একই সঙ্গে পড়ি। এবার বার ক্লাসে আমরা। কলেজে ভর্তি হবার দিনে ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা।  প্রথম দিনের দেখা থেকেই ওকে আমার ভাল লাগা। ভাল লাগা থেকে ঘনিষ্টতা, আর ক’দিন যেতে না যেতেই অন্তরঙ্গতা। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব আজও অটুট। আমি একদিন ওকে না দেখলে আমার মনটা কেন যেন অস্থির হয়ে উঠে। ও বাপ মায়ের একমাত্র মেয়ে। তবে পিকলু নামে ওর একটা ছোট ভাই আছে।