
মাঠের গল্প
“চাচা এতো জোরে
হেঁটো না। খালি পায়ে এতো জোরে হাঁটতে পারছি না।”, রামানুজ বলে। এহাসান পেছন ফিরে,
একমুখ হাসি নিয়ে দাঁড়ায়।“ এখুন তো আড় কোলে লিতে পাড়বো না ...... বুর্হা হোয়্যাছি।”দুজনেই হেসে ফ্যালে। রামানুজের চপ্পল
টা রাতের ট্রেনে গায়েব। এই ছোট স্টেশনের কাছে কোন দোকান নেই। অগত্যা। রামানুজ বহু
দিন পর গ্রামে ফিরল । এহাসান পুরনো মুনিশ। স্নেহের সম্পর্ক। কোলে চেপে ঘুরেছে বনে
বাদাড়ে। “ ই ভাতার খাকীর মাঠ খান এত্তু কষ্ট করে চলহ্ ।”বিরাট মাঠ সকালের রোদে
চকচক করছে। মাঠটা পার হওয়া বেশ সময় সাপেক্ষ। “ভাতার খাকীর মাঠ” নাম টা সেই
ছোট্টবেলা থেকে জানে। কিন্তু এই অদ্ভুত
নাম টা এই সদ্য যৌবনে একটা জিজ্ঞাসা আনলো।“ ভাতার খাকী ক্যানো বলে চাচা?” “ভাতার
খেয়াছিল এই মাঠ” শক্ত শরীরের বৃদ্ধ একটু রহস্য করে বলে। পায়ে ঘাসের ছোঁয়া লাগে
রামানুজের । আরাম হয়। সে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।“ তা পাকিস্থান তখুনও হয়নি । ই মাঠ
তখুন ধরবাবুদের সম্পত্তি। মাঠের ইদিকে ভুঙ
আড় উদিকে হোল গিয়া গেরাম।”
রামানুজের গ্রাম বনতুলসী। “ তখুন ই গেরামে মোসলমান চার পাঁচ ঘর। কাহার দের দশ বারো ঘর ছিল। ভোলা কাহার হোল গিয়া বড় কাহারের বড় নাতি। এই পালুয়ান। ওড় হেব্বি হাঁকডাক । কিন্তু সি বার নাকি খুব খরা। পানি নাই । সব পুখর একিবারে শুকিয়ে কাঠ। তুমার দাদুর বাবাড় কাটানো বোলপুখড়ে যা পানি আছে। তাই পাঁচ ছটা গেরামের মানুষ লিয়ে যায়।” এহাসানের মাথায় মাথাল। ছায়াপড়া মুখটা চকচক করে। “ ভোলাকাহার ভুঙ্গে কাম করে। পালুয়ানও হাপ্সে জেছে। এমুন কঠিন খরা। অর বহু দুপহ্রে ভাত আড় পানি লিয়ে আসতো । সি দিন সব আগুনের মতুন অবস্থা। কাহারের শরীর সুকিং গেছে। বহু কে পানি লিয়ে আসতে দেখে মাঠের ইদিক থেকে চিল্লিয়ে বুলতে লাগলো, তাড়াতাড়ি লিয়ে আয় ... হাতে হঁওশা ”। ঢোঁক গিলে এহাসান মাথা নিচু করে মাটির দিকে। “ হাতে অস্তর দেখ্যা বহু ভয় পেয়্যা ভাবে পালুয়ান ই বার মেরে ফেল্লে । পানি ফেল্যা দে দউর।কাহার পানি না পেয়া টুটি সুকিং মরে গ্যাল। মাঠ ভাতারখাকী ...ভাতার খেং লিল” ।
“ তুমি কি করে জানলে এতো কথা।”রামানুজ অবাক হয়ে
জিজ্ঞাসা করে।
“ পালুয়ানের বহু
কে কাহার রা ঘরে লেয় নি। আমার দাদাজান নিকা করে”এহাসানের মুখে এক মুখ হাসি।