
ছুঁৎমার্গ
অফিসে ঢুকে ব্যাগটা চেয়ারে রেখে একছুটে
বাথরুমে রাজীব। বাঁহাতে আলগোছে ধরা খুচরো পয়সাগুলো ডিস্পেনসার থেকে সাবান নিয়ে ঠান্ডা
গরমজলে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলল।
মালতীদি আসেনি বলে আজ লাঞ্চ করতে বাইরে
বেরতে হল। ঘেন্নায় মুখটা কুঁচকে খাবার দোকানের সামনে থেকে ফিরে গেল। একটা কলা আর একটা
আপেল কিনে ধীরেধীরে ঢুকে গেল ফের অফিসে।
রমেশ বাড়ি চলে গেছে, ছেলে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গেছে
বলে। আজ নিজে ড্রাইভ করে যেতে হবে। স্টিয়ারিংটা কলিন আর ডাস্টার দিয়ে ঘষে ঘষে মুছেই
যাচ্ছে রাজীব।
আজকাল শুধু ঘেন্না না, বমি পেতে শুরু করেছে রাজীবের
অন্যের ব্যবহার করা জিনিসে হাত দিতে।
ছমাস
আগে মিসক্যারেজ হয়েছে সুনীতার।
তারও দুমাস আগে ডাক্তার রাজীবকে গোপনে
বলেছিল সে কোনোদিন বাবা হতে পারবে না।
আত্মরক্ষা
রেললাইনের ধারে বস্তির সার সার ঝুপড়ির
শেষেরটাতে,
ছোট্ট ডোবাটার
পাশে সুখমণির মাথা গোঁজার ঠাঁই। সবুজ পানায় ঢাকা নোংরা ডোবাটা ব্যবহার করে না কেউ।
জোঁকের উৎপাত সামলাতে নুন রাখে হাতের কাছে সুখমণি। তিন হাত বাই তিন হাত ঘরটায় অবশ্য
হাতের কাছেই সবকিছু।
এর ওর বাড়ি কাজ করে চলে যায় কোনোরকমে, চলে না শুধু যেন সময়। ষাটোর্দ্ধ্ব
সুখমণির তেল ফুরিয়ে আসা লণ্ঠনের নিভু নিভু আলোটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে একসময় মনে
হয় ছেলেটা পাশে এসে বসেছে যেন। কাঁদছে বিনবিনিয়ে। থেঁতলানো মুখটা রক্তে, লালায় একাকার। হাতে, পিঠে, পায়ে - সারা গায়ে পাথরের, জুতোর, লাঠির মারের চিহ্ন। বিড়বিড়
করে একটানা সুরে বলতেই থাকে জিতু, "মাঈ, ম্যায় চোর নেহি হুঁ", "মাঈ, ম্যায় চোর নেহি হুঁ"...
বস্তির
ছেলেগুলো খেলাধূলো, মারপিট, ঝগড়া শেষ হলে শেষবেলায় লাফাতে লাফাতে আসে পুরো মজাটা লুটে নেবার তাগিদে।
দূর থেকে দাঁত বের করে চেঁচিয়ে বলে, "সুখি কা বেটা চোর হ্যায়"!
চেঁচিয়ে
শাপশাপান্ত করে সুখমণি, ছুটে যায় ছেলেগুলোর দিকে। ঠান্ডা জল ছুঁড়ে দেয় কখনো, শুকনো চোখ দিয়ে হলকা বেরয়
তখন তার।
জল
ফুটছে ছোট্ট মাটির উনুনে। একমুঠো নুন ফেলে দেয় তাতে সুখমণি। আসুক জোঁকগুলো আজ।