লেখক
জয় স্বভাবে কবি মানুষ। লিটিল
ম্যাগাজিন আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য। টিউসনি করে যা পায় সেটা ওদের লিটিল ম্যাগ অহমের
পেছনেই যায়। হাতখরচাটা এখনো বাবার পকেট কেটে মানে মায়ের হাত থেকেই নেয়।আজই ওর হাতে
একটা নতুন ম্যাগাজিন এসেছে। প্রয়াস।রোজকার খেটে খাওয়া , নাম না জানা ,অতি সাধারণ কাজপাগল কিছু মানুষের লেখা কবিতা ,গল্প
নিয়ে দুর্দান্ত এক সঙ্কলন।কবি লেখকদের কেউ ট্রেনে হকারি করেন,কেউ বাজারে সব্জি বেচেন, কেউ রাস্তায় রুমাল
বেচেন, কেউ মালা গাঁথেন, রিক্সা
চালান, মাছ ধরেন। কেউ রঙ মিস্তরী তো কেউ ছুতোর। কেউ বা
কাঠবেকার।অথচ কলমের কালিতে ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের রামধনু।
বেলঘরিয়া নতুনবাজার থেকে মাসকাবারি
মুদির জিনিষপত্র নিয়ে নন্দননগরের বাসায় ফিরছিল জয়। রিক্সায় ব'সেই মন দিয়ে
ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাচ্ছিল।
মাঝবয়সী রিক্সাওয়ালা বারবার সেটা
লক্ষ্য ক'রে হঠাৎ হেসে বলে উঠল, - ''বাবু গো , পড়াশুনা কত্তিও কত কষ্ট কন দেহি ! রিস্কোতেও শান্তি নাই'' জয়ের কথাটা বিশেষ ভালো লাগলোনা।গম্ভীরমুখে বইটা বন্ধ ক'রে ব'লল, - ''কষ্ট
কিসের ? ফাঁকা একটু সময় পেলাম, তাই।তা
তোমার সব ব্যাপারে নাক গলানোর কি দরকার?'' প্রায় ছেলের
বয়সী সওয়ারীর ‘আপনি তুমি’-র
প্রভেদ গায়ে না মেখে প্যাডেল ঠেলতে ঠেলতে মুচকি হেসে রিক্সাওয়ালা বললো, -
''বাবু, খামোকা রাগ কচ্ছিন আমার
ওপর।কইছিলাম কি বইয়ে চোখদু’খান না রাহি রাস্তায় রাহেন।
কুথায় নামবেন খেয়াল না রাহিলি মুসকিল।ভুলভাল বেশি রাস্তা গেলি কি হবে বেশি পয়সা তো
আর দিবেন না। ''
জয় ব্যাজারমুখে আধপড়া গল্পের শেষটা
না পড়ার তৃষ্ণা মনে চেপে ম্যাগাজিনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান
দিল। কি টানটান লেখা।গল্পের হিরো প্রাইমারী স্কুলটিচার অমরেশকে যেন চোখের সামনে
দেখতে পাচ্ছে।মনে মনে গল্পের শেষটা কি হতে পারে ভাবতে ভাবতে আবার ও আত্মমগ্ন হয়ে
পড়লো। সামনে চালকের সীটে বসা রিক্সাওয়ালা লেখক মুকুল দাস জানতেও পারলো না ওর লেখা
পাঠকদের কতটা ভাবাচ্ছে,
কতটা ভালোলাগায় ভরিয়ে তুলছে।এও যেন এক নতুন গল্প!!!!