গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।
শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
তাপসকিরণ রায়
ধারাবাহিক
হ্যান্টেড কাহিনী--৩০
হেস্টিংস হাউজ--মিস্টেরিয়াস
ওয়ারেন
হেস্টিং ছিলেন বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল। তিনি তাঁর বেশীর ভাগ সময় যেখানে বাস
করে গেছেন সেটা হল কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত হেস্টিংহাউজ। শশীভূষণ নেটে হেস্টিং
হাউজের ওপর কোন হ্যান্টেড কাহিনীর ভিডিও খুঁজে পেলেন না। তবে সেখানকার কিছু অলৌকিক
রহস্যের কথা নিয়ে লেখা কিছু আর্টিকেল তাঁর চোখে পড়ল। হেস্টিংহাউজ ও তার আশপাশের
রহস্যজনক ব্যাপারগুলি ছিল অনেকটা এই রকম--হেস্টিং তাঁর জীবনের কিছু মূল্যবান কাগজপত্র ও জিনিস হেস্টিং হাউজে রেখে
ছিলেন। মৃত্যুর পরে নাকি তাই তিনি এ হাউজে এসে গভীর
রাতে সে সব ফাইল ও জিনিস পত্র খুঁজে বেড়ান। হেস্টিং যে ঘোড়ার গাড়িতে মাঝে মাঝে
যাতায়াত করতেন সেই চারটে সাদা
ঘোড়ায় টানা গাড়িটাকে আজও নাকি কোন কোন মাঝ রাতে দেখতে পাওয়া যায়। সে গাড়ি থেকে
হেস্টিংকে উঁকি মারতেও কেউ কেউ নাকি দেখেছে বলে দাবি করে। আরও একটা দৃশ্য
হেস্টিংহাউজ সংলগ্ন মাঠে দেখা যায়। সেটা হল--মাঝ রাতে
একটা ছেলে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার বন্ধুদের আসার অপেক্ষা করতে থাকে। কাউকে যেন সে
হাত ছানি দিয়ে ডাকে। সেই ছেলেটি নাকি একদিন এই মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলার সময়
বুকে বলের আঘাত লেগে মারা গিয়ে ছিল। এ ঘটনার পর থেকেই তাকে অনেক রাতে হঠাৎ হঠাৎ
এমনি ভাবে দেখতে পাওয়া যায়!
শশীভূষণ
ঘটনাগুলি পড়ার পর থেকেই সেখানে যাবার পরিকল্পনার কথা ভাব ছিলেন। তারপর একদিন তিনি যথারীতি তাঁর বন্ধু জনান্তিক ও অর্ণবকে জানিয়ে হেস্টিংহাউজ ভিজিট
করার দিন স্থির করলেন।
শশীভূষণ
অকৃতদার। অর্ণব বিপত্নীক আর জনান্তিকের স্ত্রী আছেন কিন্তু ছেলেপুলে না হওয়ায়
সংসার নিয়ে তিনি তত জড়িয়ে পড়েননি। কাজেই একমাত্র তাঁদের দ্বারাই সম্ভব এ ধরনের
মিস্টিরিয়াস ঘটনার পেছনে ছুটে ফেরা। ওঁদের নিজস্ব পেশা থাকা সত্যেও
নেশা হিসাবে এই কাজটা তাঁরা মাঝে মাঝেই চালিয়ে যান।
রাত তখন
এগারোটা বেজে গেছে। তিন বন্ধু এসে হাজির হলেন হেস্টিংহাউজের সামনে। এখানে
বিল্ডিংয়ের সামনে বিস্তৃত জাগা বিছিয়ে আছে সাজানো গাছপালা ও ফুলের বাগান, তার একপাশে বড় খোলা ময়দান। অনেক
রাত বলেই হবে সামান্য টিম টিমে আলো এখানে ওখানে জ্বলছে। বিল্ডিঙে তিনটে সাবেকী
প্রকাণ্ড প্রবেশ পথের দরজা, একাধারে দুই পরতে লোহার ও কাঠের তৈরি। মাঝের অপেক্ষাকৃত বড় দরজাটাই প্রধান বলে
মনে হয়। এক দিকে দু দরজার মাঝখানে বেশ বড় সর কালো পাথরের প্লেটে কিছু একটা লেখা
আছে। হেস্টিংহাউজ ও তার স্থাপনার কথাই লেখা থাকবে। তা ছাড়াও দরজার উপর ও পাশে অফিস
ও কোম্পানির সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। অস্পষ্ট অন্ধকারে সেগুলি পড়ে ওঠা যাবে
না। অন্যদিকের আশপাশে
এদিক ওদিক দু-চারটে বড়
গাছ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক নির্জনতা ভরে আছে।
হেস্টিংহাউস
সংস্কারের পর আগের মত আর পোড়ো বাড়ি নেই। এখানে দু'একটা ব্রাঞ্চ কোম্পানির অফিস ছাড়াও রয়েছে ওমেন কলেজ ও ছাত্রীদের থাকার
ব্যবস্থাও। বিল্ডিংয়ের ওপরের তলার দু-একটা ঘর থেকে তখনও আলোক রশ্মি বাইরে এসে পড়ছে। তার মানে, হোস্টেলের ছাত্রীদের কেউ কেউ এখনো জেগে আছে। নিচে প্রধান প্রবেশ দ্বারে কিছু
কম পাওয়ারের আলো জ্বলছে। দ্বারের এক পাট খোলা আছে বলে মনে হচ্ছে।
তিন বন্ধু
খানিক দাঁড়িয়ে থাকলেন, তাকিয়ে থাকলেন সামনের বিল্ডিং, রাস্তা ও আধ অন্ধকারের দিকে। আশপাশে দু তিন কামরার ছোট বড় বিল্ডিং আছে বটে তবে
তা হেস্টিংহাউজের অফিস বা হোমগার্ডদের জন্যেই তৈরী করা হয়ে ছিল হবে। এ ছাড়া আর কোনও ঘর বাড়ি বা লোকালয়ের
অস্তিত্ব নজরে পড়ে না।
এর মধ্যে
নির্জনতা ভেঙে হঠাৎ অর্ণব ফিসফিসিয়ে উঠলেন,
ওই ওই, ওই দেখো একটা কালো ছায়া--
--কোথায়? জনান্তিক
যেন আঁতকে উঠলেন।
শশীভূষণ
চাপা স্বরে বললেন, মনে হচ্ছে গার্ড হবে--কোন
অশরীরী নয় ! শশীভূষণ এবার সেই ছায়াকে লক্ষ্য করে এগিয়ে চললেন। বন্ধুরা একটু থমকে থেকে তারপর বিনা
বাক্যব্যয়ে হাঁটতে লাগলেন শশীভূষণের পেছনে পেছনে। তিন বন্ধুই একেবারে নীরব।
হঠাৎ
প্রবেশ দ্বারের পাশ থেকে গার্ড ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো--কে ? কে ওখানে ? আর সঙ্গে
সঙ্গে আরও দুজন গার্ড হবে বিল্ডিংয়ের ভেতর থেকে প্রবেশদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে
এলো।
--আমরা--শশীভূষণ চাপা গলায় বলে উঠলেন।
--তোমরা কারা ? এত রাতে ! একজন
গার্ড ভীত জড়ানো স্বরে বলে উঠলো।
ইতিমধ্যে
তিন বন্ধু গার্ডদের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
--কোথা থেকে আসছেন--কে আপনারা? গার্ডের মধ্যে থেকে একজন প্রশ্ন করল।
--বলছি, এবার
শান্তস্বরে নিজেদের আগমনের কথা শশী বাবু গার্ডদের সামনে খুলে বললেন।
জনান্তিক
প্রশ্ন করলেন, আপনারা
এখানকার--
--নাইট গার্ড, একজন
গার্ড বলে উঠল।
অন্য একজন
গার্ড শশীবাবুদের দিকে তাকিয়ে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে বলল, আপনাদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নেই
তো ?
--না, সার্চ করে
দেখতে পারেন, অর্ণব এবার
বলে উঠলেন।
এবার নাইট
গার্ডরা যেন কিছুটা আশ্বস্ত হল।
শশী বললেন, আচ্ছা বলুন তো হেস্টিং সাহেবের
আত্মাকে নাকি মাঝে মাঝে এই হাউজে দেখতে পাওয়া যায়--কথাটা কি সত্যি ?
গার্ডরা
পরস্পরের দিকে একবার তাকিয়ে নিলো। তারপর তাদের মধ্যে থেকে একজন বলল, না আমরা দেখিনি, তবে রাতে একবার তার পায়ে চলার আওয়াজ শুনেছি !
জনান্তিক
বলে উঠলেন, সে আওয়াজ
তো বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের কারও হতে পারে ?
একজন
গার্ড বেশ গম্ভীর হয়ে বলল, না--সে আওয়াজ একদম অন্য রকমের ছিল--
আর এক
গার্ড বলল, সে ছিল গা
ছমছম করা আওয়াজ--
শশী বললেন, আপনারা গিয়ে দেখেন নি কখনও ?
--হ্যাঁ গিয়েছি বটে কিন্তু কিছু দেখতে পাইনি, শুধু আওয়াজ শুনেছি--
কথার
মাঝখান থেকে এক গার্ড বলে উঠলো, তোরা দেখিস নি, কিন্তু আমি দেখেছি ! আমি বড়
একটা পায়ের ছাপ দেখেছি--
আশপাশে
আবার স্তব্ধতা নেমে এলো। খানিক স্তব্ধতার মধ্যে থেকে জনান্তিকের গলা শোনা গেলো, আপনারা আর কিছু দেখেননি ?
--না, তবে উপরের
দিদিমণিরা একদিন চীৎকার দিয়ে উঠেছিল, তারা নাকি কেউ কেউ হেস্টিং সাহেবের সাদা ছায়াকে দেখতে পেয়েছে, এক গার্ড বলে উঠল।
আর এক জন
গার্ড বলে উঠলো, এক
ম্যাডাম বলেছে, হেস্টিং
সাহেব নাকি প্রায়ই আসেন, ঘরের আসবাবপত্র, ফাইলপত্র খুঁজে
বেড়ান।
শশীভূষণ
এবার বলে উঠলেন, আর ওই
বাইরে,
সামনের ময়দানে--ওখানের ভূত-ভৌতিক ব্যাপার কিছু আছে কি ?
গার্ডের
মধ্যে একজন বলে উঠলো, আমরা এক বছরে কিছুই দেখতে পাইনি, তবে শুনেছি আগের গার্ডরা নাকি দেখেছে--
--কি ? শশীভূষণের
মুখ থেকে প্রশ্ন বেরিয়ে এলো।
--ঘোড়ার গাড়ি চলার শব্দ--ঘোড়ার
খুরের খটখট শব্দ। যেন এক সঙ্গে তিন চারটে ঘোড়া গাড়ি টেনে ছুটে যাচ্ছে! ওরা নাকি একদিন রাতে চারটে সাদা ঘোড়াকে গাড়ি টেনে নিয়ে যেতেও দেখেছে। আর সেই গাড়িতে নাকি বসে ছিল এক জন ইংরেজ সাহেব ! তারপর
দেখতে দেখতে সে ঘোড়া ও গাড়ি সবকিছু কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল !
--আমরা আজ ভৌতিক কিছুই কি দেখতে পাবো না?
শশীভূষণ ব্যগ্র স্বরে বলে উঠলেন।
--আপনারা একবার বিল্ডিংয়ের লনগুলি আমাদের সঙ্গে ঘুরে যেতে পারেন! কোন ঘরের মধ্যে ঢোকা তো এত রাতে সম্ভব না. এক গার্ড বলল।
তাই হল।
শশীভূষণ, অর্ণব ও
জনান্তিক তিন গার্ডের সঙ্গে বিল্ডিংয়ের লন ধরে ঘুরে বেড়ালেন। নিচের ও ওপর তলার
সবকটা লন ওরা নিরীক্ষণ করলেন। না কিছুরই
আভাস ওরা টের পেলেন না। বিল্ডিং থেকে বেরোবার পথে একটা ঘর শশীবাবুর চোখে পড়লো, মস্ত একটা তালা ঝুলছে তার দরজায়।
তার কাছে এসে হঠাৎ দরজায় কান পাতলেন তিনি। কিছু শব্দ হচ্ছে না ? হ্যাঁ ভেতরের শব্দ টের পাওয়া
যাচ্ছিল। শব্দটা ক্রমশ বেড়ে যেতে লাগল, সে শব্দ উপস্থিত সবার কানে এসে পৌঁছল।
কেউ আছে
কি এই ঘরের মধ্যে ? জনান্তিক ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন।
বিস্মিত
গলায় একজন গার্ড বলে উঠল, না !
বহুদিন খালি পড়ে আছে ! ওর মধ্যে
পুরনো ফাইল-পত্র, সাবেকি কিছু আসবাবপত্রর স্টক রাখা আছে শুনেছি।
শশীভূষণ
ঘোর ঘোর গলার স্বর নিয়ে বলে উঠলেন, ঘরটা খোলা যাবে কি একবার ?
--না, স্যার এ ঘরের
চাবির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা, গার্ড বলল।
হতাশ হলেন
শশী বাবু। আর কান পাততে হচ্ছে না--ঘর থেকে বেশ জোরে জোরে আওয়াজ ভেসে আসছে। কেউ যেন ফাইল-পত্র
ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে ! এক সময় কাঠের বাক্স টানার ঘষ-ঘষ আওয়াজ হল--
জনান্তিকের
গলা থেকে আওয়াজ বেরিয়ে এলো, কে ? কে ভেতরে ? ব্যাস,
আর কোন শব্দ নেই, এক নিস্তব্ধতা আবার বিল্ডিংকে যেন ঘিরে ধরল।
সবাই বিল্ডিং থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। না, আজ বিনা দর্শনেই ঘরে ফিরে যেতে
হবে, এমনি
চিন্তা করে শশীভূষণরা গার্ডদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেশ কিছুটা দূরে রাখা তাদের
নিজেদের কারের দিকে হাঁটতে লাগলেন।
রাতের
ছায়াও কখনও ধূসর হয়ে ওঠে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোনও মাঝামাঝি রাত্রি হবে। সামনের বিস্তৃত খোলা ময়দান যেন খা খা করছে ! ঠিক এমনি একটা অবস্থাতেই বুঝি পৃথিবীতে অলৌকিকতা নেমে আসে ! কিছুটা
দূরে ওঁদের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। বাইরের রঙের সঙ্গে মিলেমিশে গাড়িটা কেমন ভারী
কুয়াশা আকৃতি ধারণ করে আছে। অর্ণব হঠাৎ আঙুল দেখিয়ে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন, ওই ওই--বাকি শব্দ আর ওর মুখ থেকে যেন বের হতে পারছি না।
শশী ও
জনান্তিক অর্ণবের দেখানো আঙুলের দিশা মত তাকিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলেন, মাঠের ঠিক মাঝখানটায় একটা ছেলে
দাঁড়িয়ে আছে, ও যেন
ম্লান চাঁদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে চাঁদকে ডেকে চলেছে ! নিঃশব্দতার মাঝে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। মুহূর্ত কয়েক পরে মনে
হল ছেলেটার ঈষৎ সাদা ছায়া আদল কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে।
তিন
বন্ধুর মুখ থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। অর্ণব শশীকে জড়িয়ে ধরে আছেন। ওঁর
শরীরের কাঁপন শশীভূষণ স্পষ্ট টের পাচ্ছিলেন। আর অন্য দিকে ছেলেটার শরীর তেমনি ভাবে
কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ কোথাও যেন মিলিয়ে গেল !
সুবীর কুমার রায়

সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য বলতে পারবো না, তবে আশির দশকের শেষভাগে কর্মসূত্রে আমাকে পূর্ব মেদিনীপুরের
একটা সদর শহরে প্রায় তিন বছর কাটাতে হয়েছিল। আমার অফিসটি যদিও প্রায় আঠারো-উনিশ কিলোমিটার দূরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে ছিল, তবু সারাদিনের
পরিশ্রমের শেষে দু’চার ঘন্টা একটু
বিদ্যুৎ-এর আলোর আশায়, একটু আরামের আশায়, একটু ভালো খাবারের আশায়, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে প্রতিদিন এই দীর্ঘ পথ যাতায়াত করতে
হতো। প্রায় চোদ্দ কিলোমিটার ভাঙাচোরা পথে আরও ভাঙাচোরা বাসে গিয়ে, মোহানা লাগোয়া এক নদী পার হয়ে, আবার প্রায় চার-সাড়ে চার
কিলোমিটার পথ বাস বা ভ্যান রিক্সায় অফিস যেতে হতো। আবার সন্ধ্যার পর ওই একই
প্রক্রিয়ায় সদর শহরে, তিন তলার ওপর এক লজে ফিরে আসা।
লজটায় আমরা দু’জন একটা বেশ বড় ঘরে থাকতাম, ফলে আমাদের বাইরে কোথাও খেতে যেতে হতো। আমার রূমমেট তার সময় মতো সকালে কোথাও খেয়ে, পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটে অফিস যেত, আবার
রাতেও নিজের সময় সুবিধা মতো কোথাও খেতে যেত। আমার যেহেতু অনেক দূরে অফিস, তাই সকালে খেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। চোদ্দ কিলোমিটার
পথ বাসে গিয়ে, নদী পার হয়ে সুধাংশু আচার্যর দোকানে একটা বালি মিশ্রিত স্থানীয় কোন বেকারির তৈরি কোয়ার্টার
পাউন্ড পাঁউরুটি, একটা ডিম সিদ্ধ, ও চা খেয়ে, আবার
ভ্যান রিক্সা ধরে অফিস যাওয়া। কারণ বলতে পারবো না, তবে আচার্য বাবু একটা ডিম সিদ্ধ করতে যা সময় নিতেন, ওই সময়ে
একটা বিয়ে বাড়ির রান্না স্বচ্ছন্দে হয়ে যাওয়ার কথা। তার ওপর ডিমসিদ্ধটা একটা
চায়ের গ্লাসে একটা চামচ সমেত দিতেন। অতক্ষণ ধরে সিদ্ধ করা আধসিদ্ধ ডিম, চামচ দিয়ে কাটতে গেলেই গ্লাসময় মাখামাখি হয়ে যেত। কাজেই
হয় চামচ দিয়ে কেটে যেটুকু খাওয়া যায় খেয়ে, বাকিটা গ্লাসের ভিতর জিভ ঢুকিয়ে চেটে খেয়ে, আঁশটে
গন্ধযুক্ত ডিম মাখা চড়বড়ে আঠালো কাচের গ্লাস রেখে এসো, নাহয় চামচ দিয়ে তুলে আস্ত ডিমটা একবারে মুখে পুরে, শুকনো
পাঁউরুটিটা চা দিয়ে খাও। কাচের গ্লাসে ডিমসিদ্ধ দেওয়ার কারণটাও অদ্ভুত, তা নাহলে
নাকি ডিমটা চামচ দিয়ে কাটতে গেলে ছিটকে পেইলে যাবে।
প্রথম প্রথম তিলোত্তমা নামে একটা হোটেলে রাতে খেতে
যেতাম। শেষে তিলোত্তমা ছেড়ে কোর্ট চত্বরে চন্দনের ঝুপড়ির স্মরণাপন্ন হলাম। ওই
হোটেলে আমার মতো গৃহহীন, ভাগ্যহীন
অভাগা খদ্দেরের অভাব ছিল না। বাঁশ, টিন, দর্মা দিয়ে বেশ বড় আকারের হলেও,
সেটা ঝুপড়ি প্রজাতিরই অন্তর্গত।
ঢোকার মুখেই মাটিতে একটা কল লাগানো মাঝারি আকারের জলের নোংরা ড্রাম, কল খুলে সেই জলে হাত ধোয়া,
মুখ ধোয়া, নিয়ম
রক্ষার্থে এঁটো থালা কোনরকমে ধোয়া,
এমনকী জলকাদা মাখা প্যান্ট ও পা ধোয়ারও
সুব্যবস্থা ছিল। খান তিনেক উঁচু বেঞ্চে খাবার থালা রেখে, অপেক্ষাকৃত নীচু বেঞ্চে বসে খাওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা।
একধারে পাশাপাশি তিনটি বেশ বড় মাটির উনুন, পাশে খাবারের পাত্র রাখার ব্যবস্থা।
দোকানের মালিক-কাম-পাচক-কাম-পরিবেশক-কাম সবকিছুর নাম, চন্দন। চন্দনকে চেনে না, এমন লোক শহরে খুঁজে পাওয়া ভার। চন্দনের সাহায্যকারী দু’জন। এক, একজন কর্মচারী,
নাম জানি না, তবে তার চেহারা ও হাবভাব দেখে মনে হবে, তার বয়স পাঁচ থেকে পঞ্চান্ন বছরের মধ্যে কিছু একটা হবে। আমি তাকে পঞ্চান্ন
বলে ডাকতাম, সেও সেই
ডাকে সাড়া দিতো। আর দুই, স্বয়ং চন্দন-নন্দন। কুড়ি-বাইশ বছরের যুবকটি রাতেও কায়দা করা রোদ চশমা পরে দোকানে থাকতো। চুল কাটার ধরণ, বিশেষ করে জুলপি ছিল, সত্তর দশকের অমিতাভ বচ্চনের মতো। বাবার সাথে দোকানে থাকতে সে
যথেষ্টই লজ্জা পেত। আর চন্দন খালি গায়ে একটা মেরুণ রঙের লুঙ্গি ভাঁজ করে হাঁটুর
ওপর পর্যন্ত পরে থাকতো। অবশ্য শীতের সময় একটা জামার ওপর কচি কলাপাতা রঙের মোটা
সোয়েটার ও লাল রঙের হনুমান টুপি পরে থাকতো। কিন্তু তার ওই প্রিয় লুঙ্গিটির ইতিহাস, বা রাতে সে ওই লুঙ্গিই পরে শুতে যেত কী না, জানা না থাকলেও, প্রায় তিন বৎসরকাল ওখানে থাকাকালীন, একদিনের জন্যও সেই লুঙ্গি পরিবর্তন করতে দেখিনি।
আমি ছিলাম এই চন্দনের এক বড় খদ্দের, বড় মুরগি বললেও ভুল বলা হবে না। অফিস থেকে ফিরে পোষাক পরিবর্তন করে, স্নান সেরে বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে বই পড়ে, তার দোকানে গুটি গুটি পায়ে জবাই হতে যেতাম। আমাকে দেখে সে যারপরনাই খুশি হয়ে
পঞ্চান্ন বা গুণধর পুত্রকে চিৎকার করে বলতো, “বাবু
আয়েটে,
টেবিল পরিস্কার করে দে”। আর তারপর
বাইরের সেই ড্রামে কল খুলে থালাটা একবার ধরে, চারটে রুটি থালায় দিয়ে দেওয়া হলো। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্যত্র। নিরীহ খদ্দের পেয়ে, ও আমাকে মুরগি করার বাসনায়, সে আমাকে প্রায় প্রতিদিনই মুরগির মাংস চাপাতো। আর সেই সুযোগে তার ডেকচি থেকে
মুরগির মাংসের যত গলার অংশ থাকতো, বিদায় করতো। জানি না ওই অংশের পরিমাণ বেশি থাকলে সে
পরের দিন আমায় দেওয়ার জন্য রেখে দিত কী না।
কতদিন আর সহ্য করা যায়? শেষে একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে, বিদ্রোহ করে বসলাম। তারপর থেকে মেনু পরিবর্তন করে শুরু
হলো আলুভাজা, রুটি, ও পেঁয়াজ।
বেশ চলছিল, হঠাৎ একদিন এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে মনটা ভেঙে গেল। চন্দন
বাইরের ড্রামে থালা ধুয়ে আমার সামনেই নিজের পশ্চাদ্দেশে লুঙ্গিতে থালার জল মুছতে মুছতে
গিয়ে, দিব্যি
চারখানা রুটি ও আলুভাজা দিয়ে আমায় দিয়ে গেল। ঠিক করলাম আর নয়, এবার চন্দনকে ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এতো
দিনের সম্পর্ক, চাইলেই কি
কাউকে ত্যাগ করা যায়, না ত্যাগ করা উচিৎ? অতএব আবার আগের মতোই চললো। এরপরেও সহ্য করে ছিলাম, যদিও নিন্দুকেরা বলে, আমার নাকি সহনশীলতা খুবই কম।
বেশ কয়েকদিন পঞ্চান্নর অনুপস্থিতি দেখে চন্দনকে একদিন
জিজ্ঞাসা করলাম যে, পঞ্চান্ন কাজ ছেড়ে দিয়েছে কী না। চন্দন জানালো যে পঞ্চান্ন খুব
অসুস্থ,
তাকে একটা খ্যাপা কুকুরে
কামড়েছে। ঠিকই আছে, বুঝলাম রতনে রতন চেনে। কিন্তু
হঠাৎ একদিন পঞ্চান্নর পুনরাগমন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে ডাক্তার দেখিয়েছে বা ইনজেকশন্ নিয়েছে কী না। উত্তরে সে বিজ্ঞের মতো জানালো, যে তার
কিছু হবে না। তাকে কামড়ে কতো কুকুর মরে গেল, ইত্যাদি ইত্যাদি! এরপর দোকানে আসা বন্ধ করা ছাড়া আর কিছু বলার থাকতে পারে না। বাস্তবে কিন্তু এরপরেও জলাতঙ্ক রোগভীতি নিয়েও, চন্দনের
দোকান ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া হলো না।
এরপর থেকে চারটে রুটি আর আলুভাজা, একটা কাগজে মুড়ে, লজে নিয়ে গিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু আলুভাজায় এতো
তেল, যে ওপরের রুটিটা আর খাওয়ার অবস্থায় থাকে না। শেষে পাঁচটা
করে রুটি নিয়ে যাওয়া শুরু করলাম। ওপরের তেলমাখা রুটিটা ইউজ অ্যান্ড
থ্রো কন্টেনারের কাজ করে। লজে গিয়ে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম রুটিটা, প্রথম রুটির ওপরের আলুভাজা দিয়ে খেয়ে, তেলমাখা
প্রথম রুটিটা ফেলে দিতাম। দিন কয়েক পরে এই রুটি আলুভাজাও অসহ্য হয়ে দাঁড়ালো। বাধ্য
হয়ে চন্দনের কাছ থেকে চারটে রুটি কিনে লজে ফেরার পথে দু’তিনটে কলা কিনে এনে, শুকনো রুটি চিবিয়ে একটু করে কলা খেতে শুরু করলাম। কলাগুলো
তরকারির কাজ করতো।
কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝলাম, এ জিনিস বেশিদিন চলতে পারে না। তখন কলার বিকল্প হিসাবে পোড়া পিঠে নামক
একপ্রকার মিষ্টি, কিছুটা করে কিনে আনা শুরু করলাম। মিষ্টি আমার মোটেই
পছন্দের খাদ্য নয়, তাই এবার
কি করা যায় যখন ভাবছি, ঠিক তখনই আমারই এক সহকর্মী, দেবাশীষ সেই সুসংবাদটি দিলো—আমার লজের কাছেই নাকি একটা মাদ্রাজি রেস্টুরেন্ট খুলেছে। দেবাশীষ আমার লজের কাছেই একটা ঘর
ভাড়া নিয়ে একা থাকতো, ও রাতে
আমার মতোই বাইরে খেতে যেত। মনে বেশ পুলক জাগলো, ঠিক করলাম, কাল থেকেই
রাতে ধোসার ওপরে থাকবো, তা আবার যে সে
ধোসা নয়,
খোদ মাদ্রাজি
রেস্টুরেন্টের ধোসা। পরদিনই দু’জনে গিয়ে হাজির হলাম। জানা গেল মাদ্রাজ থেকে কারিগর না আসায়, এখনও ধোসা বানানো শুরু হয়নি, তবে কয়েকদিনের মধ্যেই সে চলে আসবে। সবুরে
মেওয়া ফলে,
তাই অপেক্ষা করতেই হবে। আরও জানা গেল
যে এখন গরম গরম পরোটা ও আলু কষা পাওয়া যাবে। অত্যন্ত আনন্দের খবর, আমরা তো হাত ধুয়ে,
সানমাইকা লাগানো পরিস্কার
পরিচ্ছন্ন টেবিলে বসে পড়লাম। তেলের আধিক্য থাকলেও পরোটাগুলো বেশ ভালো, সঙ্গের আলু কষাটা আবার মটন্ কষার থেকেও ঝাঁজাল মশলাদার। এহেন আলু কষাকে
দেবাশীষ পেটপচা আলুর দম নাম দিলো, কারণ এই আলুরদম নাকি কয়েক দিন খেলে আলসার ধরবেই। তবু পরম তৃপ্তি সহকারে পরপর
তিনদিন তাই খেলাম, মাদ্রাজ
থেকে মাদ্রাজি ধোসা বিশেষজ্ঞের দেখা নেই। ইচ্ছা না থাকলেও, বাধ্য হয়ে
পরপর দু’দিন আবার রুটি কলা খেয়ে, সেই মাদ্রাজি রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুঁ মেরেই বুঝলাম, যার কেউ
নেই তার মাদ্রাজি ধোসা প্রস্তুতকারক আছে। হ্যাঁ, ট্রেনে না প্লেনে জানি না, তবে তিনি এসেছেন।
জয়
কাপালেশ্বরের জয়।
জিভে জল নিয়ে মনের আনন্দে টেবিলে বসলাম। এখান থেকে ফিরেই
সুসংবাদটা দেবাশীষকে দিতে যাব কী না ভাবছি, এমন সময় সুদৃশ্য প্লেটে তাগড়াই এক ধোসা এসে উপস্থিত, সঙ্গে আনুষঙ্গিক
উপকরণ। সময় নষ্ট না করে বেশ বড় একটা অংশ কেটে মুখে পুরে, দু’চামচ সম্বর ও একটু নারকেল চাটনী মুখে দিয়ে, প্রথম
যেটা মনে হলো — না, অমৃত
খাচ্ছি নয়, মাদ্রাজে বসে আছি। খাওয়া শেষে “হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;-তা সবে,(অবোধ আমি!) অবহেলা
করি, পর-ধন-লোভে মত্ত,…..” আওড়াতে আওড়াতে পাশের
পানের দোকান থেকে একটা পান কিনে মুখে পুরে দুবার চিবিয়ে ফেলে দিলাম। ফেলে দিতে
বাধ্য হলাম, কারণ ধোসা
খেয়ে দাঁত এতো টকে গেছে যে পান সুপারি চিবানোর ক্ষমতা পর্যন্ত
লোপ পেয়েছে। চকচক করলেই সোনা হয় না কথাটার অর্থ, মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে লজে ফিরলাম। তবে একটা কথা
স্বীকার করতেই হবে, যে আর
পাঁচটা দোকানের মতো এই দোকানেও “সততাই আমাদের মূলধন”
লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও, দোকানের
মালিক প্রকৃতই সৎ ও সত্যবাদী। সত্যিই সুদুর মাদ্রাজ থেকে সে কারিগর নিয়ে এসেছিল। সত্যি, দুনিয়ায় কত কিছু শেখার আছে, জানার আছে, সেইসব ছেড়ে আমরা
এখনও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য নিয়েই পড়ে আছি।
আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে...... জয় চন্দনের জয়, জয় পঞ্চান্নর জয়। আমাকে আবার দেখে, চন্দন হাসি মুখে চিৎকার করলো, “বাবু (মুরগি) আয়েটে, টেবিল পরিস্কার কর্”। আবার সেই রুটি, আর বাধা দিতে অক্ষম হলে, মুরগির
গলা চলতে লাগলো। দুঃখ, কষ্ট, মানসিক
অশান্তি নিয়েও বেশ চলছিল, কিন্তু সে সুখও কপালে টিকলো না।
কয়েকদিন পরে অফিস থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায়, লজে না
ঢুকে সরাসরি চন্দনের ঝুপড়িতে চলে গেলাম। ইচ্ছা ছিল একবারে খাওয়ার পাট চুকিয়ে
লজে ফিরে বিশ্রাম নেবো। ঝুপড়িতে গিয়ে দেখি দোকান থেকে সুন্দর একটা গন্ধ বার হলেও
আবহাওয়া খুবই উত্তেজিত, কারণ সেই
মেরুণ লুঙ্গি পরিহিত চন্দন এক নাগাড়ে চিৎকার করে বাপ মা মাসি তুলে কাঁচা খিস্তি
করে যাচ্ছে।। দোকানের বেঞ্চে সামান্য লোক বসে থাকলেও, দোকানের বাইরে অনেক খদ্দের অপেক্ষারত। তিনটি উনুনই
জ্বলছে। একবারে বাম দিকেরটায় একটা বিরাট হাঁড়িতে টগবগ্ করে জল ফুটছে। মাঝের ও ডান
পাশের উনুনে দু’টো বড় বড় কড়ায় গরম তেলে পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, তেজপাতা, ছোট এলাচ, দারচিনি, ইত্যাদি ভাজা
হচ্ছে। সব্যসাচী চন্দন দুই হাতে দুই বিরাট খুন্তি নিয়ে একভাবে নেড়ে যাচ্ছে, আর তার
থেকেই খিদে বাড়িয়ে দেওয়ার মতো, জিভে জল এসে যাওয়ার মতো, একটা সুঘ্রাণ বার হচ্ছে। এতো সুন্দর একটা পরিবেশে সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে বা বসে
থাকলেও,
চন্দনের খিস্তিবাণ কার উদ্দেশ্যে
ঠিক বোঝা গেল না।
এমন সময় চন্দন-নন্দন তার তেরি কাটা চুল পরিপাটি করে আঁচড়ে, কায়দা করা একটা কালো চশমা পরে, হাতে
কয়েকটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে, দোকানে ঢুকলেন। ছেলেকে দেখে ছেলের উদ্দেশ্যে খিস্তির
মাত্রা যেদিকে মোড় নিল, তাতে
ছেলের মা, এমনকী মাসি বা ঠাকুরমার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠতেই পারে। এতো মুখ চললেও, তার হাত কিন্তু থেমে থাকলো না। একটা ব্যাগ থেকে সরাসরি অনেকটা চাল হাঁড়ির ফুটন্ত জলে
ঢেলে দিয়ে, অন্য দুটো
ব্যাগ থেকে শালপাতা মোড়া অনেকটা পরিমাণ মাংস, আগের মতোই সরাসরি দুটো কড়াইতে ঢেলে দিয়ে, আবার দু’হাতে দুই খুন্তি নিয়ে, নির্বিকার ভাবে নাড়তে শুরু করে দিলো। চাল বা দুই
শালপাতায় মোড়া খাসি ও মুরগির মাংস একটুও ধুয়ে বা বেছে পাত্রে ঢালার কথা সে চিন্তাও
করলো না। বাজার থেকে ছেলের ফিরতে দেরি হওয়ায় ঘটনাটা আজ অনেকের চোখের সামনে ঘটলেও, হয়তো রোজই
এইভাবেই রান্না করা হয়, তাই আমি সেদিন
ওখানে কিছু না খেয়ে ফিরে এসেছিলাম ও আর কোনদিন চন্দনের দোকানে খেতে যাইনি।
এরপর থেকে যতদিন ওই শহরে ছিলাম, অফিস যাওয়ার পথে সুধাংশু আচার্যর দোকানে কোয়ার্টার পাউন্ড পাঁউরুটি ও কাচের
গ্লাসে করে একটা বা দুটো ডিম সিদ্ধ ও রাতে লজে ফেরার পথে একটা ছোট বিস্কুটের
প্যাকেট নিয়ে গিয়ে, রাতে তাই খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)