
গয়া বাউরির ভাবনা - চিন্তা
তার দাদু এক বর্ষণ সিক্ত দিনে মাঠে
ক্ষেত মজুরের কাজে গিয়ে অক্কা পেয়েছিল । অক্কা মানে পটল তুলেছিল আর কি ! গয়ার বাপ
বাদনা তখন সবে ডাগরটি হয়েছে ।ঘরে একটি ফুটফুটে বউ এনেছে ।সবে সুখের মুখ দেখতে
পাচ্ছে গাঁয়ের মানুষ । মানে ক্ষেত মজুরদের মাইনে বাড়ছে । সরকার থেকে গরীবদের ঘর
তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে । আর সেই সময়ে কি না বাজ পরে মরে গেল ! ব্রই আভাগা ছিল লোকটা ।
গয়ার বাপ বাদনা সদ্য জোয়ান ।
গাঁয়ের লোকে নানা জন নানা কথা বলতে লাগল । অপঘাতে মৃত্যু । তাই বাদনাকে যেতে হল
পিণ্ড দান করতে । খুব কেঁদেছিল বাদনা । মনে মনে প্রার্থনা করেছিল , 'পরজন্ম বলে যদি কিছু
থাকে ,তাহলে বাপ আমার! তু
আমার কাছে আসিস কেনে !'কথা শুনেছিল সদ্য প্রয়াত পিতা । কিছুদিনের মধ্যেই খবর হল যে বাদনা
বাপ হতে চলেছে । ঠিক তখনই বাদনা ভেবে রেখেছিল ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন , তার নাম রাখা হবে গয়া ।
গয়া বাউরি অনেক কিছু দেখেছে । তার
চিনতে বাকি নাই কিছু । জাত-পাতের ভয়াল রুপ তাকে চিনতে শিখিয়েছে মানুষকে ।সে এই
সাড়ে চার বছরে চিনেছে ছিনে জোঁকদের ।মদতদাতা কারা ? কারা নারী দেখলেই হামলে পরে ? ছোট ছোট ছেলেদের
বেয়াদপি যদি খোদ প্রশাসনের প্রধানের আশকারা পায় ,তাহলে সাধারন মানুষ কোথায় যাবে ?
গয়া ভুল করেছিল । বাপের কথা না
শুনে সে পরিবর্তনের স্রোতে ভেসেছিল । কন্যাশ্রীর সাইকেল পেয়েছিল ।সেই সাথে পেয়েছিল
শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ ।বাপ নেতা হলে ছেলে ছাত্র নেতা । মুম্বাই সিনেমার মতো
ব্যাপার আর কি ! তাগড়াই ছেলের জন্য তার পিতা এই গয়ার মতোই এক জনকে খুঁজছিল
।পুরুষের হাজার নেশা থাকতে হয় ।সুমন সাঁতরা তাকে আদৌ ভাল বেসেছিল কিনা কে জানে ? ওর বাপ এক পুটলি টাকা
এনে গয়ার পায়ের কাছে ফেলে বলেছিল , ' তুই যা চাইবি তাই দেব । শুধু আমার একমাত্র ছেলেকে ভিক্ষা দে !' ছেলেও কেমন ভেড়া ! সেই
দিন থেকে আর তার সাথে দেখাটি পর্যন্ত করে নি ।
না, গয়া টাকা স্পর্শ করে নি ঘৃণাভরে
প্রত্যাখান করেছিল । তার ফল পেয়েছিল হাতে নাতে। ইন্দিরা আভাস যোজনায় তাদের যে
বাড়ির টাকা পাবার কথা হয়েছিল , তা এক অজ্ঞাত কারনে পেল বাদল মুচি । আর বাউরি পাড়ার যে ঢালাই রাস্তা
হবার কথা ,
তা চলে
গেল সুমনদের খামার বাড়ির দিকে ।