গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

৯ম বর্ষ ১২তম সংখ্যা ৯ই অক্টোবর ২০২০


 এই সংখ্যায় ৮টি গল্প । লিখেছেন : তাপসকিরণ রায়, সুধাংশু চক্রবর্তী, নীহার চক্রবর্তী, সুদীপ ঘোষাল, আফরোজা অদিতি, শান্তিময় কর, রত্না বড়ুয়া (মজুমদার) ও ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় ।

সুধাংশু চক্রবর্তী

পম্পাই এসেছে


আজ কেন জানে না মন প্রচণ্ড অশান্ত হয়ে উঠেছে । মহীতোষ দেখে মেঠোপথটা এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে দিগন্তরেখায় । স্ত্রী সম্পূর্ণা এই পথ দিয়েই একদিন হাসতে হাসতে গিয়েছিলো হাসপাতালে । সহসা অদূরেই একটা বটগাছের পাতার আড়ালে একটা কোকিল কুহু-কুহু রবে ডেকে উঠলো । দূরে কোথাও সঙ্গিনীটি সাড়া দিলো । মহীতোষ জানে, এবার দু’জনে মিলে রচনা করবে নতুন নতুন জীবনের কথা । তারপর সেই নতুন জীবনও একদিন...

নীহার চক্রবর্তী

হীনশ্রী


বাজপুর মাঠে ভিখারি-সম্মেলন হচ্ছে শুনে তারাপদ হালদারের মাথায় যেন বাজ পড়ে গেলো ।

সে পাশের বাড়ির রমেন সাহাকে চোখ বড়-বড় করে বলল,'এও সম্ভব ? ওরা কি ভিক্ষে পায় না ? এত কী চাই ওদের ?

রমেন সাহা মুচকি-হেসে উত্তর দিলো,'সে পাবে না কেন । ভালোই পায় । তবে ওদের চাহিদা বুঝি পূরণ হয় না ।'

সঙ্গে-সঙ্গে তারাপদ হালদার বিরক্তির সুরে বলে উঠলো,'ঝ্যাঁটা মার । মানুষে আর কত দেবে ? সম্মেলন-ফম্বেলন করে কিচ্ছু হবে না । তবে একবার দেখলে হয় ওরা কি বলে । তুমিও চল আমার সাথে । শুরু হয়ে গেছে না ?'

সুদীপ ঘোষাল

 

এক কবির গল্প 

শরীরটা আছে।সে সম্ভোগে ব্যস্ত।দেহের অণু পরমাণু  অংশ ভিজে।কিন্তু মন যে শুষ্ক।মনের শূণ্য অংশও অধিকারে নেই তার।সে ছুটেছে পদ্মবনে। সেখানে তার রূপ দর্শনে মোহিত তার মন। এদিকে শরীরলোভি সে খবর রাখে না। ভিজে ভিজে ভালোলাগা শেষে বিরক্তির বিশ্রাম।আর মনলোভি নাগর দখল করে নেয় প্রিয়ার মন। শরীরে তার আসক্তি নেই।ক্ষণিকের আনন্দ নয়, অসীম আনন্দের অনুসন্ধানী তার মন। 

আফরোজা অদিতি

রেবতি

আজ সকালেই চা খাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিল রেবতি চায়ের কোন গন্ধ আছে তা পাচ্ছে না! দুপুরে খেতে বসে মাছ-ডাল-নিরামিষ কিছুরই গন্ধ পাচ্ছে না! কাগজে যেন পড়েছিল বা শুনেছিল কোভিড হলে খাবারের গন্ধ পাওয়া যায় না! গত সপ্তাহে যে দুই পাটি দাঁতই মাড়িশুদ্ধ বের হয়ে এসেছিল পরে হাত দিয়ে ঠেলে ঢুকিয়েছে ভেতরে আর চেপে চেপে জায়গা মতো বসিয়ে দিয়েছে! বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল তবে এখন পর্যন্ত দাঁত নিজের জায়গায় ঠিকঠাকই আছে! একথা বলেনি কাউকে; বললে তো কেউ বিশ্বাস করবে না; বিশ্বাস করাতে পারবে না কাউকে। কেউ বিশ্বাস করুক না করুক নিজে তো জানে রেবতি দাঁত খুলে এসেছিল। দাঁত খুলে আসা, চায়ের গন্ধ না পাওয়া, দুপুরের খাবারেও কোন গন্ধ নেই এসব কথা ভাবতেই মনে ভয় হলো! কিন' ভয় পেলে তো চলবে না! ভয় পেলে অসুখ জেঁকে বসে শরীরে! 

শান্তিময় কর


 স্বপ্ন পূরণ 


বৃহৎ পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য তন্ময় । ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল সে । তার ইচ্ছা ছিল ভবিষ্যৎ জীবনে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার । কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হঠাৎ তার বাবার মৃত্যু হওয়ায় একেবারে নির্মম সত্যের  মুখোমুখি পড়ে গেল সে । মা, দুই বোন আর ছোট এক ভাই এর দায়িত্ব তার উপর এসে পড়লো । মাঝ পথে লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়ে তাকে রোজগারের রাস্তায় নামতে হল । তা ছাড়া অন্য আর কোন পথ খোলা ছিল না তার সামনে । অদৃষ্টের কী নিষ্ঠুর পরিহাস ! পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহৃদয় এক ব্যক্তির সহায়তায় একজন মাঝারি শিল্পপতির অফিসে সে হিসাব রক্ষকের কাজে নিযুক্ত হল । সেখান থেকে যা রোজগার হত, তাতে বহুকষ্টে কোন রকমে সংসারটাকে সে টেনে নিয়ে চলছিল । তার যা পড়াশুনা তাতে যে এর চেয়ে ভাল মাইনের চাকরি পাওয়া যায় না, তা তন্ময় ভাল করেই জানে । তাই এ সবের মধ্যেই প্রাইভেটে বি-এ পাশ করে একটি সওদাগরি অফিসে বেশী মাইনের কেরানীর চাকরিতে বহাল হয় সে । অফিসের চাকরি ছাড়াও বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রাইভেট টিউশন করে অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জন করা শুরু করে সে । তারপর থেকে মোটামুটি কিছুটা স্বচ্ছলতা দেখা দেয় তার সংসারে । অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় তন্ময় তার বোনদের ভাল পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় । ভাইয়ের পড়াশুনা তখনও চলছিল ।

রত্না বড়ুয়া (মজুমদার)

 

নিশানায় আঁধারমানিক

আমি কেবল চেয়ে আছি লাল নিশানাটার দিকে। মোবাইল ট্র্যাকার। আমার মোবাইল আমাকে ছাড়াই দিব্যি এগিয়ে যাচ্ছে একা একা। ও তো আমারই। কে যেন ফিসফিস করে বলল, ‘যখন যার হাতে থাকে তার, তোমার আবার কি?’

চারদিকে চেয়ে দেখলাম। না, কেউ নেই। তবু শুনতে পেলাম। একটু আগে আমার পকেট থেকেই ওটা তুলে নেওয়া হয়েছে। কারা করল? কে জানে কারা! আমি এসে দাঁড়ালাম মেট্রো স্টেশনে ঢোকার মুখটাতে। সিঁড়ি বেয়ে নামা। কথা বলছিলাম ফোনে। ঘণ্টায় অন্তত চোদ্দবার কল আসে। সবই কাজের কথাবার্তা। টেলি-কমিউনিকেশন আমার পেশা। ভারত-সরকারের স্বাধীন এক সংস্থায়। আমার অধীনে কর্মী অনেক। আমাকেই চালাতে হয় প্রায় একটা আস্ত অফিস। বিশ্রাম নেই। ফোন বন্ধ করা বারণ। অজস্র রিপোর্ট, কৈফিয়ত চলতেই থাকে।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়


 শেষ ইচ্ছে


অমিত বোধহয় বুঝেছিল এই ধাক্কাটা সুধীরেন্দ্র আর শেষ পর্যন্ত সামলে উঠতে পারবেন না । জিজ্ঞাসা করলো, ‘জেঠু অনির্বাণদাকে আসতে বলবো ? আমি তো নেট ব্যবহা করি । আমাকে ফোন নম্বরটা জানালে ফোনও করতে পারি । বলবো জেঠু’ ? অমিত ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞাসা করেছিল কথাটা । ও জানতো সুধীরেন্দ্র তার আমেরিকায় থাকা ছেলে অনির্বাণের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখতে চান না । তবু, একমাত্র ছেলে তো !

তাপসকিরণ রায়

 হ্যান্টেড কাহিনী--৫৩


 
ট্রি হাউস


জীবন বাবু একটু আধটু লেখালেখি করেন। কবিতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভূতের গল্পও লেখেন। অলৌকিক ঘটনা তার জীবনে  অনেক বারই ঘটেছে। তবে বিচার বিশ্লেষণ করলে সে সব ঘটনা বেশির ভাগই মনে হয়েছে মানসিক ভীতি থেকে তৈরি হয়েছে। আসলে অনেক ক্ষেত্রে ভাবনা থেকেই আমরা মানসিক ভাবে পীড়িত হয়ে পড়ি। আর এ কারণে ভুয়ো দর্শনের  মত ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ভয়ের কারণে আমরা আমাদের সামনে কার্যকারণহীন কিছু দৃশ্যাবলী দেখতে পাই। আমরা সামান্য ছায়াকে ভূত, স্বাভাবিক শব্দকে স্থান-কাল-পাত্রের অন্তরায় অলৌকিক পর্যায়ে টেনে নিই। এ ধরণের ঘটনা আমাদের নিজেদের দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার নামান্তর বলা যায়। তবে জীবন বাবুর জীবনে বাস্তবিকই অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটেছে যাকে কার্যকারণের আওতায় কিছুতেই বেঁধে নেওয়া যায় না।