গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়



বুদ্ধ পূর্ণিমার গল্প

॥১॥
একটা অন্ধকার রাস্তায় বিড়াল ছিল । পূর্ণিমা বুঝতে পেরেছে ওটা রাস্তা কেটে গেল ।তাহলে কিছু একটা হবে ।স্কুটি থামালে দেরি হয়ে যাবে ।একটু সাহসী হলে কি ক্ষতি ! সে একটু বেপরোয়া ভাবেই ফাঁকা রাস্তায় চালাচ্ছে । পাঁচটা ছেলে দাঁড়িয়ে রাস্তার উপর যে ওদের কাটানো বিপদজনক । হর্ণটা একটু জোরেই হয়ে গেলো । ছেলেগুলো চমকে ঘুরে দাঁড়ালো । তারপর এদিক ওদিক ছিটকে গেলো । পূর্ণিমা মাঝখান দিয়ে চালিয়ে দিল । শুনতে পেলো না কিন্তু বুঝে নিলো যেন বলছে,উরিব্বাস কি মেয়ে মাইরি ! মেরে দেবে নাকি ! হেলমেটের জন্যে ওর ঠোঁটের হাসি ওরা দেখতে পেলো না ।
॥২॥ পূর্ণিমা বুঝতে পারছে না আজকে বাড়িতে বুদ্ধকে কেমন দেখবে । হয়তো সামনে মদের গেলাস , ল্যাপটেপ নিয়ে বসে আছে । একটা গল্প লিখছে বলে মনে হয় ।কাল গল্পের মেয়েটা স্বামীর কাছে ধর্ষিতা হয়ে বেরিয়ে এসেছিল ।তারপর উদভ্রান্তের মতো একটা ব্রীজ আর ব্রীজে সেই পাঁচটা ছেলে । পূর্ণিমা তার দেখা পাঁচটা ছেলের সঙ্গে বুদ্ধের গল্পের পাঁচটা ছেলেকে গুলিয়ে ফেলে । না বুদ্ধ আজ কিছুই করছে না,শুয়ে আছে চিত হয়ে আর কানগান তাকে গান শোনাচ্ছে মৃদু আলোয় । ভালোবাসার দিনগুলো মনে পড়ছে আর পাল্টে যাওয়া বুদ্ধ পূর্ণিমার সংসার । কোথায় যে কুয়াশা আর মেঘ চুপিসাড়ে ঢুকে পড়ে আর একটা দেওয়াল উঠে যায় ।
॥৩॥
বুদ্ধ দরজা খুলে দিল পূর্ণিমা একটু অবাক হলো । সন্ধ্যার এই শান্ত বুদ্ধ মূর্তি কখনো দেখে নি সে। ঘরে ঢুকে ওয়াশরুমে সোজা চলে যায় এবং একটা সতেজ পূর্ণিমা বেরিয়ে এসে আলো ঝরাতে থাকে সারা বাড়িতে । বুদ্ধ খাবার সাজিয়ে ওকে টেবিলে ডাকে । অনেক দিন বাদে আদর ফিরে আসছে বুদ্ধ পূর্ণিমার সংসারে । অন্তর্বাসহীন রাত্রিবাস পরে সে আজ বেশ লাজুকভাবে এসে টেবিলে বসে । বুদ্ধ কোনো কথা বলছে না,তার মুখে আজ মৃদু মৃদু হাসি । বুদ্ধের হাসি দেখলে বুক কেঁপে ওঠে পূর্ণিমার ।
॥৪॥
বুদ্ধের গল্পের স্বামী জোর করে,একরকম হিংস্র হয়ে অধিকার করেছিল স্ত্রীর শরীর তার অসম্মতিতে । গল্পটা কি তবে সত্যি হতে চলেছে । কিন্তু সে তো স্বেচ্ছায় সরে এসেছে,বুদ্ধকে চলতে দিয়েছে নিজের মতো করে বাঁচতে তবে আজকে কেন দেয়াল ভেঙে আদরের আয়োজন । আলমারিতে পোরা আছে সেইসব ভালোবাসার অ্যালবাম । সাজানো জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো তারা । একটা অলিখিত চুক্তি চুপচাপ সই আর সম্মতি পেয়ে গেছিলো । আজকের এই ভোলবদল সত্যি আশ্চর্যের । বুদ্ধ কি খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ইদানিং । জানে না পূর্ণিমা,অনেক রাত করে বাড়ি ফেরা ,মধ্যরাত পর্যন্ত মদ্যপান আর ল্যাপটপ একটা উদসীনতা অসহ্য মনে হতো তার । আজ বুদ্ধ সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান থেকে তাকে ছুঁতে এগিয়ে আসছে ।
॥৫॥
না বুদ্ধ কিছুই করলো না । পূর্ণিমাকে অতিক্রম করে সে তার তাক থেকে একটা ডাইরি খুলে বসল । এইভাবেই হয়তো গল্পটা শেষ হয়ে যেতে পারতো কিন্তু পূর্ণিমা দেখলো বুদ্ধের ডাইরিতে তাদের একটা পুরনো সাদাকালো ছবি বিয়ের পর পর তোলা । সেটা একটা গল্প যেটা এখনও চলছে আর ডাইরির প্রতিটি পাতা কখন শান্ত আলোময় কবিতা হয়ে উঠেছিল তারা বুঝতেই পারছিল না । হয়তো এরপরেও আরো অনেক গল্প তৈরি হয়ে যাবে কিন্তু এই মুহূর্তটাকে কিছুতেই হারাতে চাইছিল না দুজনেই । আপাতত যে অবস্থা একটা উপন্যাসের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সেইসব অলিখিত ঘটনা ।