
বুদ্ধ পূর্ণিমার গল্প
॥১॥
একটা অন্ধকার রাস্তায় বিড়াল ছিল ।
পূর্ণিমা বুঝতে পেরেছে ওটা রাস্তা কেটে গেল ।তাহলে কিছু একটা হবে ।স্কুটি থামালে দেরি
হয়ে যাবে ।একটু সাহসী হলে কি ক্ষতি ! সে একটু বেপরোয়া ভাবেই ফাঁকা রাস্তায় চালাচ্ছে । পাঁচটা ছেলে দাঁড়িয়ে রাস্তার উপর যে ওদের কাটানো
বিপদজনক । হর্ণটা একটু জোরেই হয়ে গেলো । ছেলেগুলো চমকে ঘুরে দাঁড়ালো । তারপর এদিক
ওদিক ছিটকে গেলো । পূর্ণিমা মাঝখান দিয়ে চালিয়ে দিল । শুনতে পেলো না কিন্তু বুঝে নিলো
যেন বলছে,উরিব্বাস কি মেয়ে মাইরি ! মেরে দেবে নাকি
! হেলমেটের জন্যে ওর ঠোঁটের হাসি ওরা দেখতে পেলো
না ।
॥২॥ পূর্ণিমা বুঝতে পারছে না আজকে
বাড়িতে বুদ্ধকে কেমন দেখবে । হয়তো সামনে মদের গেলাস , ল্যাপটেপ নিয়ে
বসে আছে । একটা গল্প লিখছে বলে মনে হয় ।কাল গল্পের মেয়েটা স্বামীর কাছে ধর্ষিতা
হয়ে বেরিয়ে এসেছিল ।তারপর উদভ্রান্তের মতো একটা ব্রীজ আর ব্রীজে সেই পাঁচটা ছেলে ।
পূর্ণিমা তার দেখা পাঁচটা ছেলের সঙ্গে বুদ্ধের গল্পের পাঁচটা ছেলেকে গুলিয়ে ফেলে ।
না বুদ্ধ আজ কিছুই করছে না,শুয়ে আছে চিত হয়ে আর কানগান
তাকে গান শোনাচ্ছে মৃদু আলোয় । ভালোবাসার দিনগুলো মনে পড়ছে আর পাল্টে যাওয়া বুদ্ধ
পূর্ণিমার সংসার । কোথায় যে কুয়াশা আর মেঘ চুপিসাড়ে ঢুকে পড়ে আর একটা দেওয়াল উঠে
যায় ।
॥৩॥
বুদ্ধ দরজা খুলে দিল পূর্ণিমা একটু
অবাক হলো । সন্ধ্যার এই শান্ত বুদ্ধ মূর্তি কখনো দেখে নি সে। ঘরে ঢুকে ওয়াশরুমে সোজা
চলে যায় এবং একটা সতেজ পূর্ণিমা বেরিয়ে এসে আলো ঝরাতে থাকে সারা বাড়িতে । বুদ্ধ
খাবার সাজিয়ে ওকে টেবিলে ডাকে । অনেক দিন বাদে আদর ফিরে আসছে বুদ্ধ পূর্ণিমার
সংসারে । অন্তর্বাসহীন রাত্রিবাস পরে সে আজ বেশ লাজুকভাবে এসে টেবিলে বসে । বুদ্ধ কোনো
কথা বলছে না,তার মুখে আজ মৃদু মৃদু হাসি । বুদ্ধের হাসি দেখলে বুক কেঁপে ওঠে
পূর্ণিমার ।
॥৪॥
বুদ্ধের গল্পের স্বামী জোর করে,একরকম হিংস্র
হয়ে অধিকার করেছিল স্ত্রীর শরীর তার অসম্মতিতে । গল্পটা কি তবে সত্যি হতে চলেছে । কিন্তু
সে তো স্বেচ্ছায় সরে এসেছে,বুদ্ধকে চলতে দিয়েছে নিজের মতো
করে বাঁচতে তবে আজকে কেন দেয়াল ভেঙে আদরের আয়োজন । আলমারিতে পোরা আছে সেইসব
ভালোবাসার অ্যালবাম । সাজানো জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো তারা । একটা অলিখিত চুক্তি
চুপচাপ সই আর সম্মতি পেয়ে গেছিলো । আজকের এই ভোলবদল সত্যি আশ্চর্যের । বুদ্ধ কি
খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ইদানিং । জানে না পূর্ণিমা,অনেক রাত
করে বাড়ি ফেরা ,মধ্যরাত পর্যন্ত মদ্যপান আর ল্যাপটপ একটা
উদসীনতা অসহ্য মনে হতো তার । আজ বুদ্ধ সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান থেকে তাকে ছুঁতে
এগিয়ে আসছে ।
॥৫॥
না বুদ্ধ কিছুই করলো না ।
পূর্ণিমাকে অতিক্রম করে সে তার তাক থেকে একটা ডাইরি খুলে বসল । এইভাবেই হয়তো
গল্পটা শেষ হয়ে যেতে পারতো কিন্তু পূর্ণিমা দেখলো বুদ্ধের ডাইরিতে তাদের একটা
পুরনো সাদাকালো ছবি বিয়ের পর পর তোলা । সেটা একটা গল্প যেটা এখনও চলছে আর ডাইরির
প্রতিটি পাতা কখন শান্ত আলোময় কবিতা হয়ে উঠেছিল তারা বুঝতেই পারছিল না । হয়তো
এরপরেও আরো অনেক গল্প তৈরি হয়ে যাবে কিন্তু এই মুহূর্তটাকে কিছুতেই হারাতে চাইছিল
না দুজনেই । আপাতত যে অবস্থা একটা উপন্যাসের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সেইসব অলিখিত ঘটনা
।