
পালোয়ান
লুঙ্গিটাকে কষে কোমরে বাঁধতে গিয়ে বিরজুর লুঙ্গিটা একেবারে
ল্যাঙট হয়ে কোমরের কাছে ঝুলে রইল। বিরজু
একসময়ের সেরা পালোয়ান, স্যাঙ্গাতের দিকে চেয়ে হাসলে---ই সালা...লুঙ্গি ল্যাঙ্গট হইছে রে...!’
মোসাহেবী হাসি হেসে পিংলু বললে—তা গুরু আমাদের সিটাই পহেচান’
খুশি হল বিরজু—তবে!’ ঝিলিক মারল চোখে।
পিংলু ভিন্গাঁ থেকে সাতসকালে বায়নার জন্য
লোক নিয়ে এসেছে। গাঁয়ে-ঘরে খেলা
দেখিয়েই রোজগার করতে হয়। পিংলু ভাগ পায় টাকায় ছয় আনা। খেলা দেখালে মন্দ আয় হয় না, খেয়ে পরেও পিংলুর হাতে যা থাকে
তাতে রাতে মদের আসর বসাতে পারে। গুরু এসব খায় না, খেলে নাকি গায়ের জোর কমে যায়।
তিনদিন পর খেলার বায়না পেল। এবার আর শুধু টাকা নয়, সঙ্গে লুঙ্গি আর গেঞ্জিরও আবদার
আছে। পিংলু কিছু দাঁও মারবে ভেবেছিল, বুঝে নিয়ে বিরজু বলে—আধা কাটিয়ে লিবি, একটা লেংটি তুর, আর বাকি আধা হামার। তু তো আমার লঙ্গুটা ইয়ার আছিস রে পিংলু...’ লজ্জ্বা পায় পিংলু।
খেলার দিন ভিন্গায়ে খেলা, বিরজু আগেও খেলা দেখিয়েছে এ
গাঁয়ে। এবার গিয়ে অবাক। ইয়া তাগড়া এক জোয়ান, সারা গায়ে তেল চুক্চুক্ করছে। ভরসা পেল না বিরজু। হায় রাম, সেই দিন কি আর আছে বিরজুর। লেকিন, বিরজু না খেললে দুনিয়া বলবে কি! হঠাৎ চোখে পড়ে তাগড়া জোয়ানের
হাতে ধরা তামাকের কৌটো, তামাক দিয়ে মুখ ধোওয়ার স্বভাব। কি, পালোয়ানের তামাকের নেশা!
নহী খেলেগা, কভী নহী!
বিরজু একবগ্গা। লুঙ্গি, গেঞ্জি, টাকাপয়সার মায়া কাটিয়ে সন্ধ্যে
নাগাদ ঘরে ফিরে এল।
পিংলু অবাক—এ কি করলে গুরু!’
অন্ধকারে হাত বাড়ায় বিরজু, পিংলুর কাঁধের কাছে হাত রাখে---উ লেংটি মিলত নারে পিংলু... উ তাগড়াই জোয়ান আছে...লেকিন বিরজু কভী হার মানতা নহী রে...’বলেই ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়।
অন্ধকারে হাত বাড়ায় বিরজু, পিংলুর কাঁধের কাছে হাত রাখে---উ লেংটি মিলত নারে পিংলু... উ তাগড়াই জোয়ান আছে...লেকিন বিরজু কভী হার মানতা নহী রে...’বলেই ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়।
ছায়াছবি
সিনেমা দেখে ফিরছিল ওরা। ওরা মানে রণেন আর মালিনী। হাঁটছিল
পাশাপাশি, মালিনীকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে বাড়ি
ফিরবে রণেন। সিনেমাটা রণেনের মগজে শুধু নয়, হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ঢুকেছে। এমনও
হয়, হতে পারে!
একজনকে না দেখে শুধু সারাজীবন তাকে ভেবে, তাকে ভালবেসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়!
চলতে চলতে মালিনী বলল—চা খাবে?’ রণেন অন্যমনস্ক। আবার বলল—এই, চা খাওয়াবে? আচ্ছন্নের মত তাকাল রণেন। এবার
ঠ্যালা দিল মালিনী—কি ভাবছ!
বাব্বা, সিনেমা যেন কেউ দেখে না’ বলেই রনেনের বুকে হাত দিল—কেউ আছে নাকি এখানে?’চোখ নাচাল মালিনী। মৃদু হাসল
রণেন।
মালিনীর বাড়ির দরজা থেকেই ফিরল রণেন। আজ না, অন্যদিন ভিতরে গিয়ে বসবে। আজ
নিজেকে নিয়ে থাকতে চায় রণেন। সিনেমাটা যেন তার কোথাও আঘাত করেছে, সে ভাবছে...ভাবতে
চায়।
এখন অনেক রাত। বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে একজনের কথা
ভাবছিল রণেন। বড় বড় চোখ,
হাসি মুখ, একমাথা চুলের একটা বিনুনি। সমস্ত
মুখে কি যেন একটা মায়াময় হাসি ছড়ানো।
রণেন ভালবেসেছিল তাকে,
ভালবাসে, এই ছবিটাকে। না তাকে দেখেনি
কখনও। তবুও ভালবেসেছিল পাগলের মত। তাই নিয়ে কত রঙ্গ, রসিকতা, বন্ধুদের হল্লা...আরও কতকি! মালিনীর
সঙ্গে আলাপ, হয়ত বা ভালবাসাো, কিন্তু তার পরেও তাকে ভুলতে পারল
কই! অদেখা, অচেনা একজনকে এভাবেও ভালবাসা যায়? মেয়েটির ছবি, তার সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তা, তার গলার স্বর, তার হাতের লেখা সব যেন চোখের
সামনে ভেসে উঠল। আজকের সিনেমা তাকে যেন নাড়িয়ে দিয়ে গেল। কি করে ভুলে রইল সেই
মেয়েটিকে!
নতুন করে অনুভবের আশায় দুচোখ বন্ধ করল রণেন...সে আসুক...!