গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।
শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮
সম্পাদকীয়

দেখতে দেখতে ‘গল্পগুচ্ছ’ সাত বছর
পূর্ণ করে আট বছরে পা দিল । ১৯১১র ১৪ই অক্টোবর পাক্ষিক ‘গল্পগুচ্ছ’র পথ চলা শুরু হয়েছিল । আজ ১৯১৮র ১৪ই অক্টোবর প্রকাশিত হল গল্পগুচ্ছর
৮ম বর্ষের প্রথম সংখ্যা ।
সাত বছর আগে ভাবিনি একটা গল্পের ওয়েবপত্রিকা চালাতে পারবো । নিজের লেখা একটি মাত্র গল্প দিয়ে ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম । সাত বছর আগে গল্পগুচ্ছর প্রথম সংখ্যার একমাত্র গল্পটি এই সংখ্যাতেও দিলাম ।
স্বীকার
করতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত অনেক গল্পের কাহিনী কিংবা
গল্পের বাঁধুনির মান হয়তো উত্তীর্ণ হয়না, আবার বেশ কিছু উৎকৃষ্ট ছোট গল্পও প্রকাশিত
হয়েছে । আমি তৃপ্ত । অন্তত বাংলা ছোট গল্প লেখার, নবীন গল্পকারদের একটা প্ল্যাটফর্ম হিসাবেই দেখতে চাইছি ‘গল্পগুচ্ছ’কে । ‘গল্পগুচ্ছ’
এই সাত বছরে ১৩০০ গল্প অন্তর্জালে পাঠকের ঠিকানায় পৌছে দিয়েছে
এবং পত্রিকার পৃষ্ঠাদর্শন প্রায় তিন লক্ষ ছুয়েছে, এটাই বা
কম কি ?
শারদোৎসব
আগত । গল্পগুচ্ছর পক্ষ থেকে গল্পগুচ্ছর পাঠক-লেখক ও সকল শুভানুধ্যায়ীকে জানাই শারদ
শুভেচ্ছা । ভালো থাকুন ‘গল্পগুচ্ছ’র সঙ্গে থাকুন ।
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
সত্যপ্রকাশকে
নিয়ে কিছু লেখার আগ্রহ বা ইচ্ছে কিছুই ছিল না , বরং নীলমণিকে নিয়ে কিছু লেখার কথা ভাবছিলাম । নীলমনি মহাতো –
পুরুলিয়ার এক গন্ডগ্রামের আদিবাসী লোকশিল্পী । আমি তখন
রাড় বাংলার লোকগান নিয়ে একটা কাজ করছিলাম,সে কাজেই বাঁকুড়া পুরুলিয়ার গ্রামগুলিতে
যেতাম প্রায়ই । তখনই নীলমণির সঙ্গে আলাপ হয় । পুরুলিয়ার রুখা শুখা মাটি থেকে
সুর তুলে আনত নীলমনী । ওকে একদিন বলেছিলাম কলকাতায় একদিন প্রাণভরে তোমার গান
শুনবো নীলমনি । নীলমনি বলেছিলো, কলকাতার জলসায় আমি গান গাইবো না, টাকা দিলেও না । বলেছিল,শহরে ইট কাঠের জঙ্গলে মানুষের প্রাণের মধ্যি কোনো সুর লাই গো দাদা । বলেছিল,
ইদিকটা একটুন শান্ত হোলি,এস, আমার কুঁড়ে ঘরে বসে তোমায়
প্রাণ ভরে গান শুনাবো ।
অদিতি চক্রবর্তী
আগডুম বাগডুম
(সব চরিত্র কাল্পনিক)
এতো যুদ্ধ
সাজাই রোজ
প্রতিদিন তবু
একমুঠো ফুল হাতে
পাঁজর ভাঙা
পিচ্ছিল উত্তাপে
বৃদ্ধ সময়
খাচ্ছে পংক্তিভোজ।
বাবার কোলে চেপে,
মায়ের সাথে ‘যমের বাড়ি’ এসেছে
পাঁচ বছরের বিকাশ। ‘যমের বাড়ি’ নামটা আমরা যারা
এ বাড়িতে বসবাস করছি
তাদেরই দেওয়া।এবাড়ির কারো চোখে
ঘুম আসেনা।খাঁড়া সিঁড়ির কোনায়
কোনায় রাতবিরেতে ফুসুরফুসুর আওয়াজ
শোনা যায়।কেননা প্রতিটি ঘরে
একটি করে ক্যানসার রোগী।
আর রোগীর সামনে রোগের
ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা একেবারেই
চলেনা।বিকাশ উঠে গেলো আট
নং রুমে। চিলেকোঠার এই ঘরটি
যেমন অপরিষ্কার তেমনি ধেড়ে
ইঁদুরের উপদ্রব।এখানে, মানে মুম্বাইতে আবার ইঁদুর,
বিড়ালের সহাবস্থান। দুজনে একসাথে
ভাগ করে খায়,খেলে। ইঁদুর মারা
নিষেধ। গণেশের বাহন কিনা! আর মুম্বাই মানেই
গণপতি বাপ্পা।
বিজয়া দেব
গৌহাটির বাসটা ছাড়ল শেষ পর্যন্ত । খানাপাড়া আই এস বি টি –তে দাঁড়িয়ে আছে সেই তখন থেকে । রাইয়ের ভয় করছিল । সাথে মা রয়েছে । আর কেউ নেই
। কে-ই বা থাকবে !
গৌহাটির পাঞ্জাবাড়িতে থাকে সে , মানে রাই
ও তার মা । ভাড়াবাড়ি । পাশের বাড়িতে কাকা রয়েছে । কাকা ত তার নিজের ছেলেমেয়ে বউ
নিয়েই ব্যস্ত । রাই অন্যত্র থাকতে পারত , কাকার পাশের বাড়িতে ভাড়া নিয়েছে এই ভরসায় যে হাজার হোক কাকা ত ,
আপদবিপদ হলে ফেলতে পারবে না , কিন্তু কার্যত তা হয়নি ।
কৃষ্ণা দাস
ভুবা
“দেখিস বাবা মাথায় ফেলিস না ।”
“তুমি বসে বসে দেখো পিসি, আমি সব ঠিকঠাক নামাব ।”
“তবু সাবধানে নামারে,…দেখেশুনে বাবা ।”
“ও পিসি তুমি দেখ না….।” বলতে
না বলতে বিতানের পায়ের
তলার টুল গেল নড়ে
আর ওর হাতে ধরা
টিনের জং ধরা ছোট্ট
বাক্সটা বিকট শব্দ করে
পড়ে গেল মেঝেয় ।
মুহূর্তে ভেতরের কাগজ পত্র
ছড়িয়ে পড়ল ঘরময় ।
আনন্দিতা চমকে উঠে বিতানকে
জড়িয়ে ধরে ফেলল ।
মুহূর্তের পতন থেকে রোধ
পেয়ে পিসির কাঁধ ধরে নেমে এল নীচে ।
“দেখেছ ছেলের কাণ্ড, কী
অঘটনটাই না ঘটছিল এখন, খুব বাঁচা
বেঁচেছিস তুই।”
“দুস্ পিসি, আমি ঠিক
লাফিয়ে পড়তাম, তুমি পাশে
ছিলে বলেই তো লাফালাম না ।”
“অনেক হয়েছে বাবা, তুই যা আর
তোকে ডাকব না ।”
বিতান অপরাধী মুখ করে মেঝে থেকে ছড়ানো কাগজ গুলো তুলে টিনের বাক্সে ভরতে ভরতে
বলল, “তুমি এতবার সাবধান করলে বলেইতো
অন্যমনষ্ক হয়ে গেলাম ।”
“ওরে আমার বীরপুরুষ রে, নে হয়েছে
এবার পালা, আর তোকে
খেলা থেকে ডাকব না ।”
“আর আমার গিফ্ট?”
আফরোজা অদিতি

একটি দিন ও ছিনতাইয়ের গল্প
দুপুরের খরতাপ। ঝাঁঝাঁ রোদ্দুর
চারদিক। রাস্তার চলমান গাড়িগুলো
থেকে গরম ভাপ এসে
লাগছে চোখে-মুখে।
মাথা থেকে ঘাম তিরতির
করে নামছে পিঠ বেয়ে।
অস্বস্তি লাগছে ইমলির। তাছাড়াও
রিকশাওয়ালার শরীর থেকে ঘামে
ভেজা গন্ধ এসে লাগেছে
নাকে। বিশ্রি অবস্থা।
ধীর গতি রিকশার। এই
গরমেও রিকশাওয়ালার অবস্থাও তথৈবচ।
বারবার কপালের ঘাম মুছছে
সে। রিকশাতে উঠতেই ভয়
পায় ইমলি। আজ সঙ্গে
আছে ওর মেয়ে অনুশ্রী।
খুব আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বসে
আসে মেয়েকে এক হাতে
ধরে। ইমলি সব সময়
সিএনজি’তে যাওয়া-আসা করে আজ
সিএনজি না পাওয়াতে
‘অগত্যা
মধুসুধন’ এই রিকশা। ইমলির রাস্তার
দিকে মন নেই,
শুধু মনে হচ্ছে একটু
রিলাক্স হলেই পড়ে যাবে
রিকশা থেকে। ওর আড়ষ্টভঙ্গি
দেখে অনুশ্রী বলে,
‘মা, তুমি কি ভয়
পাচ্ছ? ভয় পেয়ো না
ভালো হয়ে বসো।’
মেয়ের কথাতে একটু লজ্জা
পায় ইমলি। একটু সোজা
হয়ে বসে তরপর বলে,
‘নারে, ভয় পাবো কেন;
এই তো, তুমি
ধরে বসো না হলে
পড়ে যাবে।’ ইমলি মেয়েকে
কথাগুলো বললেও মন থেকে
ভয় যায় না।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)