গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

আল হাসির গুঞ্জন



বিচার

চৌধুরী বাড়ির আগনেভর্তি একগ্রাম লোক। ছোট ছোট বাচ্চা পোলাপান থ্যাবড়া পেতে বসে আছে। ত্রিশ-চল্লিশ ছুঁই ছুঁই লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকে। কামলারা বিড়ি ধরায়, কানাঘুষা করে। লাল-নীল প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে এলাকার ময় মুরুব্বী আর মানিগুণী লোকেরা। বাড়ির ঘুপচিগুলোতে নাকেমুখে কাপড় দেয়া মহিলাদের অভাব নাই। মাথা তুলে সামনে তাকায়।

জটলার মাঝের ফাঁকা জায়গাটায় আসমত চৌধুরীর বড় ছেলেরে ধরে এনে বেঁধে রাখা হয়েছে। কানাঘুষায় ছিঃ ছাঃ শোনা যায়। "চৌধুরী বাড়ির পোলা হয়া ক্যামনে পারলো?" -ছ্যাব ছিটাতে ছিটাতে এক বুড়া জানতে চাইলো। পশ্চিমপাড়ার আবুল চোখ গরম করে কইলো, "ওর লিঙ্গ কাইট্ট্যা কুত্তারে দিয়া খাওয়ান সবাই।" সাথে সাথেই আবুলের রায়ে সায় দিয়ে উঠলো সবাই। বাচ্চা পোলাপান মুখ ঠেসে ফিচিক করে হেসে ওঠে।

মেলাদিন পর আসমত চৌধুরীরে বাগে পাইছে গ্রামের লোকজন। তার কুকীর্তির জ্বালায় এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। একটা সুযোগের অপেক্ষা ছিল মাত্র। চৌধুরীর বড়ছেলেরে দুপুরবেলা যখন কুলসুমের ঘর থেকে আটক করা হলো, তখনই
প্রতিশোধের আগুনে এলাকা কাঁপছিলো। এবার কই যাইবো হালায়?

হোসেন চাচা হাত উঠিয়ে সবাইকে থামার ইঙ্গিত দিলেন। সবাই চুপ হয়ে গেলে, ছেলের এমন খারাপ কাজের জন্য তার বাপের কাছে বিচারের দায়ভার দিলেন। মাথা হেট করে থাকা আসমত চৌধুরী কিছু না বলে সবার মতের শাস্তি মাথা পেতে নিতে চাইলেন। গ্রামের বেবাকই যা কয়, তাই হইবো।

সবার মত শোনা হলো। কেউ কয়- তিনদিন গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বান্ধা হোউক। জরিমানা করা হোউক। ঘোর শত্রুরা ক্ষ্যাপ নিয়ে কইলো- গ্রামছাড়া হোউক। শ্যাষম্যাষ চেয়ারম্যান সাহেবের সিদ্ধান্তে সবাই মাথা ঝাঁকালো। "কুলসুমের লগে চৌধুরীর পোলার বিয়ে দেওয়া হোউক।" এই একটা সিদ্ধান্ত এতক্ষণ তো কারো মাথায় আসে নাই। "হা, ঠেক, ঠেক"-- বলে মত দেয় সবাই। কিছুক্ষণ পর একঝলক হাসি নিয়ে জটলা ভাঙ্গলো।

"কাজটা তুমি মোটেও ভালো করলা না চেয়ারম্যান।" - চৌধুরী বাঁকা চোখে শাসালো। মোছের নিচে একটা ভিলেনী হাসি দিয়ে চেয়ারম্যান চলে গেলো।

মেলাগুলা গেন্দা দিয়ে সাজানো চৌধুরীর বড় পোলার ঘর। ভ্যানঅলা মানিক মিয়ার মেয়ে কুলছুম অহন চৌধুরী বাড়ির বউ। বাসর রাতে কুলছুমের হাতটা ধরে টান দিয়ে চৌধুরীর পোলা হাসে আর কয়, "ভালো হইছে না? পলায় পলায় আর
কতদিন!"