গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

১০ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ২৬শে মে ২০২১


 এই সংখ্যায় ১১টি গল্প লিখেছেন ঃ তাপসকিরণ রায়, নীহারচক্রবর্তী, ভীষ্মদেব সূত্রধর, মীনা দে, রত্না বড়ুয়া (মজুমদার), সজল কুমার মাইতি, পার্থ রায়, স্তুতি সরকার, সৌমিত্র চৌধুরী, মনোজিৎ কুমার দাশ ও ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।

নীহার চক্রবর্তী

 


কেয়ামত


 আমাদের এলাকার প্রায় সর্বজনের হরিদার আর বাঁচতে ইচ্ছা হয় না। মাঝেমধ্যেই বিরস-মুখে কাউকে-কাউকে শোনায়।তখন হরিদা বেশ আশার আলো দেখাতে চায় অন্য পক্ষ।

মোটামুটি সবার মুখে এককথা, ‘তুমি তো অসুখী নও। দুই ছেলে তোমার চাকরী করে। মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছ। আমরা যদ্দুর জানি বৌদি খুব ভালোমানুষ। পেনশন তো কম পাও না।তাহলে? এসব একদম ভেবো না।‘

সৌমিত্র চৌধুরী

 


রোদ বৃষ্টি

ভীষ্মদেব সূত্রধর

 


তিমিরান্ধস্য


মুষলধারে বৃষ্টি নেমে এলো, আশ্রয়ের জন্যে ভাঙা স্কুল ঘরে জনা কতক ছিল বটে, এখন মাত্র দুজন বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এর থেকে। বিভু আধ ভেজা কিন্তু অন্যপ্রান্তে যে যুবতী দাঁড়িয়ে ছিল তার শরীর জবজবে ভেজা, চুল থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে বুকে, অন্তর্বাসহীন বুক জেগে উঠছে চরের মতো, বিভু সেদিকেই তাকিয়ে আছে নিষ্পলক, না মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই যুবতীর, সে দাঁড়িয়েই আছে। বিভুর হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যায়, শরীর তেতে ওঠে, স্তনবৃন্তে হা করে চেয়ে থাকে উঠতি যৌবনের স্বাদে, ভেতরে প্রতঙ্গটি নড়েচড়ে ফের শান্ত হয়। বৃষ্টির ছাঁট আসে গায়ে পড়ে, থামবার বিরাম নেই। যেন আরো কষে মেঘ গলছে, একটা অটো এসে সামনে দাঁড়ালে যুবতী তাতে ওঠে এবং মুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে যায় অটো, আবছা অন্ধকারে আর বেশিদূর দেখা যায় না, পৌরসভার বাতিগুলো একে একে জ্বলে, কাঁদা পথে দুটো গাড়ি ছুটে চলে যেতে জলকাদা ছুঁড়ে মারে এবং মিলিয়ে যায়। বিভু হাতঘড়ি দেখে, আর থাকা চলে না, ওদিকে চারদিক ফাঁকা আর গুমোট অন্ধকার, পা ফেলে এগোয়, কিছুদূর যেতে থমকে দাঁড়ায়। উফ শিট! চটির ফিতে ছিঁড়ে গেছে, অগত্যা খুরিয়ে চলতে চাইল, যেহেতু দ্রুত যাওয়া চাই তাই জুতো জোড়া হাতে নিয়েই চলবার কথা ভাবল সে। কলেজ স্ট্রীটের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ বা যে কটা দোকান খোলা আছে সেখানেও ভিড়ের বালাই নেই, এমন বৃষ্টি অনেকে উপভোগ করছে , অনেকের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। 

রত্না বড়ুয়া (মজুমদার)

 


এক বিন্দু নয়নের জল

 

 আজকাল দেখি ধর্ষণ নিয়ে খুব আলোচনা। আগে যে হত না, এমন নয়। কিন্তু মিডিয়া সোচ্চার খুব এখন।

 

এমন একটা গল্প এটা যে, একটু ভাবার আছে। ওপার বাংলার সুবিখ্যাত এক পরিবার। আর যাকে কেন্দ্র করে এই গল্প, সে এক নাবালক মেয়ে। কৈশোর পার না হওয়া।

স্তুতি সরকার

 


বিবর্ণ পাতা



"ঝরা পাতা গো আমি তোমারি দলে।"
আজকাল তৃষিতার প্রায়ই মনে হয় কথাটা। মনের ক্লান্তি যেনো কাটতে চায় না। প্রায়ই কাজ সারা হয়ে গেলে মনে মনে বলে রবি ঠাকুরের গানের একটা লাইন- ‘আমার হলো সারা‘।
তৃষিতার জীবনে প্রেম এসেছিল তার সেই ছোট্ট বেলায়। যখন ওর বয়স ১৩ বছর। বাবা, কাকা , জ্যাঠারা মিলিয়ে বিরাট জয়েনট ফ্যামিলি। একান্নবর্তী পরিবার। খুড়তুতো জাড়তুতো ভাই বোন মিলিয়ে অনেক বড়ো ফ্যামিলি। তার মধ্যে কেমন করে যেনো জীবন সোমের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলো তৃষিতার। সেই ভালো লাগার থেকে প্রেম- গভীর প্রেম। তৃষিতার থেকে বয়সে বেশ কিছুটা বড় জীবন ওকে একদিন এ বিষয়ে জিগেসও করেছিলো। ‘এটা কি ঠিক হচ্ছে?‘ ‘কোনটা।‘ ‘তোমার আর আমার বয়সের এতো ডিফারেন্স!‘ ‘আমার তো কিছুই মনে হয় না?‘ তৃষিতা বলল। সত্যি বলতে কি জীবন সোম অতি সাধারণ একটা ছেলে। ওর মধ্যে প্রেমে পড়ার মতো কি পেয়েছিলো তৃষিতা! হ্যাঁ, কথা বলতে পারতো জীবন। জমিয়ে দিতে পারতো ঘরোয়া আড্ডা। সেটাই তো সব নয়। জীবনের চলার জন্য দরকার একটা স্টেডি ইনকাম। সেখানেই তো সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। বাবা মা ভালোবাসার ধন একমাত্র মেয়েকে ওরকম পাত্রে কিছুতেই বিয়ে দেবেন না। সেটা ওরা দুজনেই জানতো। সুতরাং অপেক্ষা করতেই হবে তৃষিতার ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত।

মীনা দে

 


অঘটনঘটনপটিয়সী


আজ বইমেলার চতুর্থ দিন। অর্ণব খুব এক্সাইটেড,

আজ তার পঞ্চম কবিতার বই প্রকাশ হবার দিন। বিশিষ্টজনেরা সবাই মঞ্চে উপস্থিত। একটু পরেই এসে পড়বেন স্বনামধন্য কবি,সুবিমল সমাদ্দার। তিনিই মোড়ক উন্মোচন করবেন। আরও কিছু উঠতি লেখক, কবির বইয়েরও তিনি মোড়ক উন্মোচন  করবেন। 

পার্থ রায়

 


রামধনু


বৃষ্টির পরে রোদ্দুর উঠেছে। এখন সবকিছুই যেন ছাড়া ছাড়া। আধ ঘণ্টা এক টানা বৃষ্টি হলেই মনে হয় আষাঢ়ে বৃষ্টি বুঝি খুব ঝাঁপিয়ে হল। পায়ে পায়ে ব্যাল্কনিতে এসে দাঁড়ায় শিঞ্জিনী। ফুলের টবগুলোর একটু পরিচর্যা করে আকাশের দিকে দৃষ্টি মেলে। খুশির চোখে দ্যাখে রামধনু উঠেছে। রামধনু ওর খুব প্রিয়। কারণ রামধনু যেদিন ওঠে সেদিন ও কোন ভাল খবর পায়। সে আকাশে দেখা যাবার আগেই হোক বা পরে। রামধনু দেখা গেলে ওর স্কুলবেলার প্রিয় বন্ধু রিমির সাথে আড়ি থেকে ভাব হয়েছে। এক পশলা বৃষ্টির মাঝে সেবার বি.এর রেজাল্ট বের হল। খুব ভাল ভাবে পাশ করেছিল। ও মা! শেষ বিকেলে তিনি ঠিক উদয় হলেন। আকাশ আলো করে। শিঞ্জিনীর ভাল লাগা তখন উড়ন্ত প্রজাপতির ডানায়। এমন আরও উদাহরণ আছে। আজ দুপুরে পুলিশ স্বামীর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে ওর মনে হচ্ছিল আজ তো ওনার উদয় হবার কথা। ঠিক তাই। এক পশলা ঝিরঝিরে বৃষ্টির পরে বিকেল গড়ানো আকাশের বুকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট শিশুর মতো খিলখিল হাসি মুখে তেনার আবির্ভাব। আকাশের বুকে এই রামধনুটার সাথে সাথে আর একটা রামধনুও খিলখিলিয়ে ওঠে। সেটা ওর মনের আকাশে।     

 

সজল কুমার মাইতি

 


রসিক লাল


নামটা রসিক লাল l রসের ভাঁড়ার l রসে বসে থাকতে ভালো বাসে l যদিও ইংরেজী বানান অনুযায়ী নামের উচ্চারণ হওয়া উচিত রসিকা , তবে সবাই তাকে রসিক লাল ই বলে l রসিক সুরা বিলাসী, সুরারসে আকণ্ঠ সিক্ত থাকাটা তার চিরকালের অভ্যাস l রসিক লাল অবাঙালি হলে কি হবে বাংলায় বহুদিনের বাসিন্দা l বাংলা ও মোটামুটি ভালোই বলতে পারে, যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাঙালি টান পরিস্কার বোঝা যায় l তা সেই রসিক লাল পড়াশোনায় যত না দড়, তৈল মর্দনে একেবারে শিল্পী l রসিক লালের বহিরঙ্গ অনেকটা অসুরের মতো l কেউ কেউ আবার এই নিয়ে গল্প ফেঁদে বসে, বলে কিনা পাড়ার দুর্গাপূজোর শিল্পী শুভ পাল অসুরের জায়গায় রসিক লালকে মায়ের পায়ের তলায় বসিয়ে দিয়েছিল l যা দেখে প্রথমে দর্শনার্থীদের অনেকেই আসল না নকল বুঝতেই পারে নি l

মনোজিৎকুমার দাস


 জন্ম পরিচয়ই মুখ্য নয়,মানুষ পরিচয়ই প্রধান

                                           বীণা সাত আট বছর বয়স থেকে জোয়ার্দার বাড়ি কাজ করে। সকাল থেকে গভীর রাত অব্দী কাজের বিনিময়ে আধা পেট ভাত আর দুখানা পুরাতন কাপড় পায়। অধিকাংশ সময় বাসি বা আঁচড়া ভাত তরকারি খেতে হয়। পান থেকে চূন খসলে বকাঝকার অভাব নেই। গায়ে হাত তুলতেও অনেকের বাঁধের না! বাড়ির ছোট বড় সবায় যেন একই শিক্ষায় শিক্ষিত। সবার রক্ত গরম এই একজনের উপরে! প্রত্যকের ব্যক্তিগত কাপড়, সকালের কাপড়, যাবতীয় জিনিস ধুতে হয়, লন্ড্রি করতে হয়, রান্না-বান্না গৃহস্থলীর কাজের কোন শেষ নেই! তবে মাঝে মধ্যে মাছ মাংস থাকলে কাউকে না বলে কয়ে দু এক পিচ খেয়ে নেয়! খাবেই বা না কেন? এত খাটুনির পরও নিজ হাতে কেটেকুটে রান্নাবান্না করার পরও নিজের ভাগ্যে বেশি কিছু জোটে না  বললে চলে!  কখনো কখনো  উটকো লোকজন কিংবা কুকুর বিড়ালে খাবার খেয়ে ফেললে তার দোষও কাজের মেয়ের কাঁধেই চাপে! এর জন্য মাঝে মাঝে দু চারটে চড় থাপ্পরও খেতে হয়! 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

১০ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা ।। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এই সংখ্যায় ৮টি গল্প । লিখেছেন : তাপসকিরণ রায়, সুধাংশু চক্রবর্তী, সজল কুমার মাইতি, কৃষ্ণা মালিক, কাজী লাবণ্য।মনোজিৎ কুমার দাশ, জয়দেব সূত্রধর ও গোপেশ দে ।

তাপসকিরণ রায়

 হ্যান্টেড কাহিনী--৫৭

আক্রান্তকাল 



--ভ্যাকসিন তো বেরিয়ে গেল--
 

কে? কে?? রোহিত চমকে উঠলোl 

খানিক স্তব্ধতার পর বাতাসে ইকো সাউন্ডের মত ভেসে এলো, আমি রে রোহিত, তোর দাদু--

রোহিতের দাদু পরেশ বাবুর বয়স সত্তরের কাছাকাছি। রেস্টিকসানে থাকা সত্ত্বেও কি ভাবে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তা জানা নেই।

সুধাংশু চক্রবর্তী


 পদ্মার ইলিশ


 

মাছের থলেতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ধাঙ্গিনী ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, মাছের থলি ফাঁকা কেন ? মাছ পাওনি ? নাকি সব টাকা সবজীর পিছনে ঢেলে এসেছো ?