কাকডাকা
কা কা কা,এই কর্কশ কাকের ডাক শুনলেই হেডমাস্টারনীর মেজাজটা সপ্তমে
চড়ে যায় l মার মার ওটাকে মার বলে হাঁক ছাড়তে থাকেন
প্রাথমিক স্কুলের হেডমাস্টারনী কমলা সোম l গত ফাল্গুন মাসে উনি কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন কিন্তু বিশ্রাম
করার সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি l উনার স্বামী অসিত সোম পাঁচ
বছর আগেই সরকারী কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়ে বেশ ভালই আছেন l ৩০ বছর আগে এই তরুণ দম্পতি সোনারপুরের একটু ভেতরে এই বাড়িটা করেছিলেন l
বাড়ি করার
সময় মোটামোটি একটা পুকুর,এবং কিছু ফলের চারাগাছ
ও লাগিয়েছিলেন l
সময়ের পরিবর্তনে এই চারা গাছ গুলি বর্তমানে বৃক্ষে পরিনত হয়েছে l এবং তারফলে বিভিন্ন পাখির সাথে কাকের ও সমাগম হয়েছে l এই কাক ই
হেডমাস্টারনীর মাঝে মাঝে মাথা গরমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অসিত সোম পুকুরে মাছ ধরে, ফুলের বাগান আর
খবরের কাগজ পড়ে সময়টা সুন্দর ভাবে ই কাটাচ্ছেন কমলাসোমের ৯০ বছরের বৃদ্ধl
মা বহুদিন ধরে যমরাজের সাথে যুদ্ধ করছিলেন l যখনই সময় মিলত ছুটতেন যাদবপুরে মাকে দেখতে l বৈশাখ পরতেই
বোঝা গেল এই বছরটাই উনার মায়ের শেষ বছর l চার দিন হয়
কমলা মাকে হারিয়েছেন,
কিন্তু তিনি বাস্তববাদী বলে অকারণে হা হুতাশ করছেন না l
বয়স হয়েছিল কষ্ট পাচ্ছিলেন তার থেকে মুক্তি হলো সেটাই বর্তমানে কমলার
কাছে স্বস্তির কারণ l নিজে ধর্মীয় ক্রিয়া কলাপে খুব
বিশ্বাস না করলেও মায়ের বিশ্বাসকে সম্মান জানাতে চান I দিদার কাজ হবে
বলে নীল, বউ ও ছেলে মেয়ে কে নিয়ে বালিগঞ্জ থেকে এসেছে I
বিকেল ৪:৩০ টা বেজে গেল কমলা এখনো না খেয়ে বসে আছেন I উনার মায়ের এক
অত্ভূত আবদার ছিল একমাত্র কন্যা সন্তান কমলার কাছে। মায়ের মৃতুর পর
কমলা যেন কাক বলির কাজটি ও করেন। উনি মাকে বলতেন যে কাকদের উনি পছন্দ করেন না তাকে
ডেকে খাওয়াতে হবে কেন? মায়ের স্বর্গ প্রাপ্তির বিশ্বাস ই
এই অনুরোধের কারণ ছিল । দশটার আগেই উনি মাটির থালাতে করে কাকের জন্য খাবার সাজিয়ে
দিয়ে এসেছেন কিন্তু
কোনো কাকেরই খাওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না I বার বার উঠে গিয়ে দেখে আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন i তিনটের পর থেকে নাতি নাতনিদের ওপরে কাক আসলো কিনা দেখে আসার দ্বায়িত দিলেন I প্রতি পাঁচ দশ
মিনিট অন্তর অন্তর দেখতে দেখতে ওরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ল I
অনেক্ষণ পর নাতনি হেসে বল্ল আমরা আসলেই আগে
তুমি শুধু বলতে যা কাক তাড়িয়ে
আয়, এখন আবার বলছ যা ডেকে নিয়ে আয়। ওদের অভিমান হয়েছে ওরা আর আসবেনা। নাতি বললো এবার বোঝো মজা, যাও হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে খেতে বল। ওদের কথায় ক্লান্তি এবং ক্ষিদের মধ্যেও কমলা হেসে বললেন তোদের কথাই ঠিক । দেখি কিভাবে উনাদের সন্তুষ্ট করা যায় , তোরা বস আমি আসছি এই বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করেদিলেন।
আয়, এখন আবার বলছ যা ডেকে নিয়ে আয়। ওদের অভিমান হয়েছে ওরা আর আসবেনা। নাতি বললো এবার বোঝো মজা, যাও হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে খেতে বল। ওদের কথায় ক্লান্তি এবং ক্ষিদের মধ্যেও কমলা হেসে বললেন তোদের কথাই ঠিক । দেখি কিভাবে উনাদের সন্তুষ্ট করা যায় , তোরা বস আমি আসছি এই বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করেদিলেন।