কফি
হাউস এবং ভালোবাসার গল্প
কফি
হাউসের টেবিলে ওরা মুখোমুখি বসে। লীনা আর রবিউল। চিকেন ওমলেটে গোলমরিচ ছড়িয়ে দেয়
লীনা। ছুরি-কাঁটাটা নাড়তে নাড়তে রবিউল বলে, আমি যে জায়গাটায় থাকি সেটা একটা চড়া
বুঝলেন দিদি। আশপাশে সব জেলেদের ঘর। ওখানে জেলেরা সব হিন্দু। বড় গরীব জানেন ওরা।
অল্পবয়সে একটি মেয়েকে ভালোবাসতাম আমি। অনু হিন্দু ছিল। তাই আমাদের বিয়া হয় নাই।
জানেন তো হিন্দু-মুসলমান। ওর এক জেলের সঙ্গে বিয়া হয়েছিল। দুই ছেলেমেয়ে। বড়টা ছেলে
সে বাপের সঙ্গে মাছ ধরতে সমুদ্রে যায়। ছোটটা মেয়ে। ওর খুব অসুখ করেছিল জানেন। আমার
এক বন্ধু খবর দিল যে আমাকে দেখতে চায়। বুঝছেন তো ছোটবেলার ভালোবাসা। মারা যাওয়ার
সময় মেয়েটারে আমাকে দেখতে বলে গেছে। আমি তারে নিয়ে এসেছি। বোনের বাসায় থাকে। আমার
বোন, ইস্কুলের টিচার। অনুর মেয়েটা এখন ক্লাস ফোরে পড়ে, চতুর্থ শ্রেণী। আমি মাঝে
মাঝে যাই, দেখে আসি। অনুরে নিয়ে আমি একটা গল্প লিখেছি, আমার প্রথম গল্প। পড়ে
দেখবেন দিদি।
আপনাদের
এখানে হিন্দু-মুসলিম বিয়ে হয়? ‘হয়, আবার হয় নাও।
রফিকুলের ঘটনাটা জানেন তো? তবে ওটার ওপর ধর্মের প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। ক্লাস
ডিফারেন্সটাই আসল কারণ – বড়লোকের মেয়ে আর গরীবের ছেলে। ছেলেটাকে খুনই করে দিল
মেয়ের বাবা।’
কফির
মধ্যে চামচটা নাড়তে নাড়তে অন্যমনস্ক গলায় লীনা বলে, ‘আমার গল্পটা একটু অন্যরকম।
ছেলেটি আমার ক্লাসমেট তহমীনার ভাই। আমি তাকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখেছিলাম। সে নাকি
একটি হিন্দু মেয়েকে ভালোবাসত। ডাক্তারের মেয়ে, বড়লোক। সম্পর্ক শুরুতেই শেষ আর কী।
তাকে নাকি আমার মতো দেখতে, তহমীনা বলেছিল। যোগাযোগ ছিল, আমার বিয়ের পরেও। বুঝেছিলাম
আসলে ও আমাকে ভালোবাসত, শুধু মুখেই দিদি বলতো। এরকমটা হতেই পারে। বিয়ে করতে
বলেছিলাম অনেকবার। কী অদ্ভুত যুক্তি, মুসলীম মেয়েরা নাকি হিন্দু মেয়েদের মতো হয়না।
শেষে এমন কিছু আচরণ করতে শুরু করেছিল, বাধ্য হয়ে ওকে চলে যেতে বলেছিলাম। আমার খুব
খারাপ লেগেছিল জানেন? ওর ধারণা মুসলমান বলেই এই ব্যবহারটা করেছিলাম। মানুষ কত সহজে
ধর্ম নিয়ে আসে সমস্তকিছুতে।’
কথার
মধ্যেই ফোন আসে রবিউলের। ফোনটা নামিয়ে রেখে হাসিমুখে বলে, উত্তরপাড়ায় আমি যাদের
বাড়িতে উঠেছি। সুবীর বসু। ভারী ভালো মানুষ। ফেসবুকে আলাপ। এখন এদেশে এসে ওনাদের
বাড়িতে না উঠলে ভারী রাগ করেন। আজ ঈদ তো বিরিয়ানি-মাংস রান্না করেছেন। তাড়াতাড়ি
ফিরতে বলে দিয়েছেন বারবার করে।
দুটো
কফি আর চিকেন অমলেটের দাম দিয়ে ওরা উঠে যায়। আর দুটি ছেলে-মেয়ে ওই চেয়ারে এসে বসে।
ভালোবাসার
আরেকটা কোনও গল্প শোনায় তারা পরস্পরকে।