গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

সীমা ব্যানার্জীরায়



ছায়ার পাখী

হ্যালো”, ওদিক থেকে ভেসে এল এক পরিচিত পুরুষকণ্ঠ, “এটা কি মিঃ সোমের বাড়ি?” -হ্যাঁ, আমি রিপন সোম; আপনি কে কথা বলছেন? -ও রিপ? এত সকালে তোমাকে ঘুম থেকে তুললাম না তো? -কিন্তু আমাকে আজ সারাদিন কনফারেন্সে থাকতে হবে; আর সকালের ভোরেই চলে যাব। এখন ছাড়া আর সময় হত না, তাই... রিপনের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি তখনও; লোকটি পরিচয় দিলেন নিজের, “আমার নাম স্টুয়ার্ট ক্লিন্টন। তোমার কলেজবান্ধবী আরনেস্টিনা ছিল আমার স্ত্রী।এতক্ষণে রিপন ওই 'রিপ' সম্বোধনের কারণটা খুঁজে পেলেন। গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, “হ্যালো মিঃ ক্লিন্টন...স্টুয়ার্ট বাধা দিয়ে বললেন, “না রিপ, শুধু স্টুয়ার্টই যথেষ্ট। আচ্ছা দরকারী কথাটা বলে নিই। আমার মিটিং শুরু হবে ঠিক আটটায়।রিপন বাধা দিয়ে বললেন, “আরনেস্টিনার কী খবর? কেমন আছে সে? সেও কি এসেছে তোমার সঙ্গে?” স্টুয়ার্টের গলায় হঠাৎ কেমন যেন বিষণ্ণতার সুর বাজল , “না রিপ, আরনেস্টিনা আর নেই। ওর ক্যান্সার হয়েছিল; ধরা পরেছিল গত গ্রীষ্মে; করারও বিশেষ কিছু ছিল না। খ্রীস্টমাসের আগেই সব শেষ হয়ে গেল।রিপন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন; স্টুয়ার্ট বলে চলেছেন তখনও, “ও খুব চেয়েছিল তোমার সাথে একবার দেখা করতে। তোমাকে ও একটা চিঠি লিখেছিল। তোমাদের প্রথম দেখার দিনগুলোকে আরেকবার ছুঁতে চেয়েছিল। রোজ আশায় থাকত; হয়ত উত্তর আসবে তোমার। কিন্তু এলো না; তুমি কি চিঠিখানা পেয়েছি্লে, রিপ?” রিপনের চোখদুটো অশ্রুর বন্যায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল; কোনমতে সামলে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ, পেয়েছিলাম,। কিন্তু উত্তর দেওয়া হয় নি। আমারই দোষ, আমারি ভুল। কী করে যে ক্ষমা করব নিজেকে। জানি না।স্টুয়ার্ট সান্ত্বনার স্বরে বললেন, “দুঃখ দুঃখ কোরো না বন্ধু। অনেক সময় চাইলেও সবকিছু করা সম্ভব হয়না। যাই হোক, আরনেস্টিনাকে কথা দিয়েছিলাম ওর চলে যাওয়ার খবর টা জানিয়ে দেব। যদি কখনও মিসিসিপিতে আসো, আমার কাছে উঠো; আমি তো এখন একেবার একা। আরনেস্টিনা ভেবেছিল চিঠিটার উত্তর পেলে তোমাদের একবার যেতে বলবে ও থাকতে থাকতেই। সে আর হল না। এবার চলি আমি। অল দি বেস্ট টু ইউ বোথ, রিপ।ফোনটা ছেড়ে দিলেন স্টুয়ার্ট। রিপন ততক্ষণে বসে পড়েছেন সামনের চেয়ারটাতে। এতদিন পরে লিলির ওপর একটা সূক্ষ্ণ অভিমানে মনটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল, আর নিজের ভেতরটাকেও যেন ক্ষমা করতে পারছিলেন না রিপন। লিলি কেন না পড়ে চিঠিগুলো ছিঁড়ে ফেলেছিল? বারবার মনে হতে লাগল তাঁর সেই অমূল্য স্মৃতিগুলো চিরদিনের মত্যোই মিলিয়ে গেল; উড়ে গেল তারা ছায়ার পাখী হয়ে কোন দিগন্তে, যেখান থেকে কোনও কিছু আর ফিরে আসে না কোনও দিন।