বেফাঁস
ঝন
ঝন ঝন...... আওয়াজটা পাওয়া মাত্রই পেছনের বারান্দায় চলে এলেন অণিমা। প্রায়
নিঃশব্দেই বলা চলে, বারান্দার একটা কোণে প্রায় মিলিয়ে রইলেন। সন্ধ্যে হয় গেছে,
আলোও জ্বালাননি, অণিমাকে কারুর দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। অথচ অণিমা কিন্তু
অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছেন।
একতলার
একটা অংশে অণিমা আর বিমল থাকেন, অপর অংশে রুমকি, সৌরভ আর তাদের বছর চারেকের মেয়ে
মিষ্টু। এই অভ্যেসটা অনিমা কিছু দিন হল রপ্ত করেছেন। ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলেই কান
খাড়া করা, শব্দহীন লঘু পায়ে বারান্দায় এসে নিজেকে যতটা সম্ভব আড়াল করে উঁকি মারা। রুমকিদের
ডাইনিং স্পেস, রান্নাঘর তো বটেই একটা ঘরেরও কিছুটা অংশ দেখা যায়। বিমল না থাকলে তো
আরো বেশী করেন। বিমল আর সারাদিন থাকেনই বা কোথায়? সকালে বেরিয়ে যান, ফিরতে ফিরতে
সন্ধ্যে কাবার।
বাসনের
আওয়াজ পেয়ে অণিমা তাই দ্রুত বারান্দায়। হ্যাঁ ঠিক যা ভেবেছেন তাই, সৌরভ মনে হচ্ছে
অফিস যায়নি আজ। কীসব কথাবার্তার আওয়াজ আসছে। ধুর, ভালো করে শোনাও যাচ্ছে না, ও
ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা ডেকচি আর হাতা মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে আছে। কিছু তো
হয়েছে বটেই।
বেশ
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু বুঝতে না পেরে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন অণিমা আর
ঠিক তখনই রুমকির গলা শোনা গেল। শুধু শোনা গেল না, দেখাও গেল তাকে।
“আমি
এসে গেছি কাকীমা, আপনাকে আর ওই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতে হবে না।
মেয়েটাকে আঁকার স্কুল থেকে আনতে গেছিলাম। এইটুকু যাব আর আসব। এই গরমে দরজা জানলা
বন্ধ আর কে করে! জানি তো একটু আওয়াজ হলেই আপনি চলে আসবেন। তাই ডেকচি আর হাতাটা
মেঝের ওপর দড়াম করে ফেলে সামনের দরজাটা শুধু টেনে দিয়ে চলে গেছিলাম। ও ঘরে টিভি তো
চলছেই। সত্যি আপনার মতো এত খেয়াল কেউ রাখে না!”