গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

পার্থ রায়



নিশিগন্ধা


লেডিজ কামরাটা বেশ ফাঁকাই । আসলে অফিস ফেরতা স্রোতের উল্টোদিকের ট্রেনতো। একটা জানালার ধারে সিট পেয়ে গেলো নিশিগন্ধা। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে বাইরের দিকে তাকালো । পুজোর পরে হলেও প্রকৃতির গায়ে এখনও শরতের পারফিউম মাখা বাইরের মিষ্টি সৌন্দর্য আর ভিতরের ভালো লাগা মিলে মিশে একাকার। ওর ব্যাগেও যে এখন সাত রাজার ধন। ইয়েস,
 প্রথম চাকুরীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার রয়েছে যে সেখানে। পে প্যাকেজ বেশ ভালই। সেল ফোন থেকে মা-বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে সুখবরটা। রিটেন একজামে ওপরের দিকেই নাম্বার ছিল । ইন্টারভিউর নাম শুনলেই যেমন বেশীর ভাগেরই বুক দুরু দুরু করে, নিশিগন্ধার সেরকম ব্যাপার নেই। নিজের ওপর বরাবরই ভীষণ আস্থা ওর । যাকে বলে এ টু জেড পজিটিভ। ঠিক হোলও তাই। বোর্ডের পাকা মাথাগুলোকে ঘোল খাইয়ে দিয়েছে, ওর গালের মিষ্টি টোল দুটো দিয়েই- হুম, এরকমই ধারণা ওর নিজের।খুব আস্থা ওর নিজের গালের টোল পড়া হাসির ওপর।আর একজন ও বলে, মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে।ওর ইংলিশের টিচারটা।নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করল-শুধুই বুঝি ইংলিশের টিচার? নিশিগন্ধার মুখে গোধূলির লাল আভা ছড়াল।উহু, না তো-আর টিচার নেই হাঁদাটা।ইংরেজি গ্রামার, কন্সট্রাকশন আর ইংরেজিতে কথা বলা শেখাতে শেখাতে কখন যে হাঁদাটা নিশিগন্ধার মনের ভেতরটা দখল করে নিয়েছে, টেরই পায় নি  একদিন মা এর সামনে বলে ব্যাপক ঝাড় খেয়েছে । হাঁদাই তো। ঠিক মতো চুমু খেতে শেখেনি এখনো। প্রথম চুমুতেই ডাহা ফেল। আনাড়ি কোথাকার !একটা চুমু খাবার সাহস অর্জন করতে খোকা বাবুর বছর দেড়েক লাগল। কেমন ডাকাতের মতো জাপটে ধরে চুমু খেতে গেলো সেদিন, ত্রস্ত হয়ে অপ্রস্তুত নিশিগন্ধা মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল। আর তাতেই বাবুর রাগ। তিনদিন ধরে নো ফোন, নো মেসেজ, নো রিপ্লাই, নো বেস্ট অব লাক। ঠিক আছে হাঁদারাম, আজ ফিরে গিয়ে আমি তোমার গুরুদক্ষিণাও দেবো, চুমু খাওয়া শেখানোর টিচারও হবো । ও বিশ্বাস করে এই চাকুরীটা পাবার পেছনে ওর আদরের হাদুরামটারও বিরাট অবদান রয়েছে । ইংরাজি সাবজেক্টটার প্রতি ভয়ই শুধু কাটিয়েছে তাই নয়, ইংরেজিতে কথা বলা শিখিয়েছে ও । আজ চাকুরি পাওয়ার খবরটা পেট ভর্তি চুমু দিয়ে তবেই দেবো আমার হাঁদা গঙ্গারামটাকে । ভাবনাটা মাথায় আসতেই একরাশ রুমঝুম আবীর ওর সারা মুখে মাখামাখি হয়ে গেলো।