গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

সৌমেন্দ্র লাহিড়ী



হ্যালুসিনেশন

নিউ ইয়ারের পার্টি । সুভাষের বাড়িতে আমরা জনাদশেক বন্ধু আর তার পরিবার মিলে । সন্ধ্যা থেকে জমায়েত। নাচ গান সব চলছে। রাত সাড়ে এগারটা নাগাদ খাওয়া সেরে মদের গ্লাসে মন দিলাম বন্ধুরা। বারটা বাজার হুল্লোরের সাথেই নেশাও ভাল চড়ল। সুভাষের স্ত্রী বাচ্চাদের একটা ঘরে শুইয়ে বেরিয়ে এলো। রাজা অনি কুমার আর সাদিকের স্ত্রী ছিলোই , এবার সুভাষের বউও গ্লাস হাতে তাদের পাশে বসল। বাকিরা এতক্ষণে চলে গেছে। আমি একমাত্র অবিবাহিত । আগে বিয়ে করব না ঠিক করেছিলাম , কিন্তু এখন খুব ইচ্ছে করে। কখনও কখনও মনে হয় আমার জন্যেও ঘরে আমার স্ত্রী অপেক্ষা করে আছে । সামনে বন্ধুদের স্ত্রীরা মদ খাচ্ছে, এবার কেন জানি আমার খুব অস্বস্তি হতে লাগল। রাজার স্ত্রী কেমন যেন খোলামেলা একটা পোশাক পড়েছে, আমার বউ থাকলেও কি ? একটা জোর বিষম খেলাম , সবাই ছুটে এলো । সবার চেষ্টায় আস্তে আস্তে ঠিক হলো। চোখের সামনে বউ গুলো কেমন ঢলাঢলি করে হাসছে, আমাকে দেখেই কি? মানতে পারলাম না, উঠে দাঁড়াতে গেলাম, টাল খেয়ে সোফায় পড়ে গেলাম । - কিরে এমনি করে অন্যের বউ দেখেই নেশা করবি? - শালা , আটচল্লিশ তো হলো, আর কবে করবি, এরপর আর জোর পাবি ? - হতভাগা, আমাদের বউ দেখে তো এতদিন কাটালি এবার তো নিজের বউ আন - নতুন ইয়ার নতুন বউ আর কি চাই ? - এ বয়সে বিয়ে করলে তো বউয়ের পিছনেই স্যরি স্যরি সামনেই ঘুরে বেড়াবি
সুভাষদের ইয়ার্কি একদম সহ্য হচ্ছে না। সামনের টি-টেবিলে রাখা আর্ধেক রামের বোতলটা সোজা গলায় ঢাললাম। ভেতর থেকে শরীরটা কেমন গুলিয়ে উঠল, পড়তে পড়তে ছুটে গেলাম বেসিনে, হড়হড় করে বমি উঠে আসল।

   অফিস থেকে ফিরছি। সিটি মল থেকে এমাসের কোটা বউয়ের শাড়ির প্যাকেট হাতে, ও দেখলে খুব খুশী হবে। সেদিন থেকে আস্তে আস্তে বন্ধুদের ছেড়েছি। সুভাষ একদিন অনেক বোঝানোর পর আমাকে বলেছে - প্রতীক তুই ভুল করছিস, তুই অসুস্হ ।
আমি কোনও কথায় কান দেইনি। ওরা মাঝে মাঝে আমার ফ্ল্যাটে চলে আসত, তাই একদম অনেক দুরে নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে চলে এসেছি। কেউ এর ঠিকানা জানে না। আমি খুব সুখে আছি, আমি আর আমার বউ। ফ্ল্যাটটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছি। আমার বউয়ের খুব পছন্দ । আমার বউ সাজুক আমি চাই, তাই ড্রেসিং টেবিলে রাজ্যের কসমেটিকস কিনে রেখেছি । রাতের বেশ কয়েকটা খোলামেলা পোশাক কিনে দিয়েছি, কেউ হিংসে করলে করবে, আরে বাবা আমার বউ আমাকে খুব ভালবাসে আর আমিও।
চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকলাম, পকেট থেকে একটা চিরকুট ডাইনিং টেবিলে একটা কাঁচের গ্লাস চাপা দিয়ে রাখলাম । ঘর গুলি খুঁজে দেখলাম কোথাও সে নেই। শোবার ঘরে এসে কাপড়ের প্যাকেটটা যত্ন করে আলমারীতে তুলে রাখলাম। এটা নিয়ে এগারটা প্যাকেট হলো একটাও শাড়ি সে পরেনি। ড্রেসিং টেবিল খুব সুন্দর করে সাজান। ড্রয়ার হাতড়ে বের করলাম একটা নামী কোম্পানির দামি লিপস্টিক, ক্যাপটা খুললাম , রঙটা খুব সুন্দর , ওভাবেই ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিলাম । নাহ, বোধহয় কোথাও বেরিয়েছে । ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলাম। শাওয়ারের আওয়াজে বৃষ্টির আওয়াজ পেয়ে রোমান্টিক হয়ে উঠলাম।
ভেজা গায়েই বেরিয়ে আসলাম। শোবার ঘরে এসে দেখি ড্রেসিং টেবিলে নতুন লিপস্টিকটা খোলা, যাক তাহলে রঙটা পছন্দ হয়েছে। যত্ন করে লিপস্টিকটা বন্ধ করে রাখি। যেখানেই যাক ফিরে আসলে যতই মানা করুক অনেক আদর করব।চুল আঁচড়ে, রাতের পোশাকে ডাইনিং রুমে যাই। একি! ডাইনিং টেবিলে কাঁচের গ্লাস চাপা একটা চিরকূট - বাপের বাড়ি গেলাম, আজ আর ফিরব না।