গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী



আত্মরক্ষার অস্ত্র

বিভু পাগলা ফর্মে এসে গিয়েছে দেখে পাড়ারই তরুণ, মৃণাল, হাবলু-রা হা হা করে হাসতে হাসতে ছুট লাগালো দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। আর দাঁড়ানোর উপায় নেই। এক্ষুনি কানের ভেতর এসে ঢুকবে জ্বলন্ত অঙ্গার। নোংরা শব্দের আগুন। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে মাথা থেকে পিত্তি পর্যন্ত। সেইসাথে জুটবে উপস্থিত দর্শকদের অহেতুক বকবকানি ।

ওদের ছুটতে দেখেই বিভু পাগলা নোংরা কথার ফোয়ারা ছুটিয়ে দিলো। সবাই জানে এই ফোয়ারা থামতে সময় নেবে। আজও উপস্থিত দর্শকেরা যখন সেই ভয়ে সিটিয়ে রয়েছে বিভু পাগলা তখনই সবাইকের অবাক করে দিয়ে ঝপ্‌ করে কান্না জুড়ে দিলো! কত দুঃখে কাঁদছে তা কেউ জানতেও পারছে না। জানার চেষ্টাও করলো না। বিভু পাগলা কাউকে বলতেও পারছে না যে, অহেতুক গালাগাল দিতে কত কষ্ট হয় ওর। না দিয়েও যে পারে না। আত্মরক্ষার অস্ত্রটা ব্যবহার যে করতেই হয় অসভ্য ছেলেগুলোর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য। কেউ বোঝে না ওর দুঃখ। বরং ওকে আরও কষ্ট দিয়ে আনন্দ লুটতে চায়। বিভু পাগলা কাঁদতে কাঁদতে একজন প্রকৃত মানুষকে খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে। অবশেষে নিরাশ হয়ে কাঁদতে বসে রাস্তার ধারে পা ছড়িয়ে বসে।

পুলকিত শশীবালা

সাতাত্তর বছরের বুড়ো হরেকেষ্ট পাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানা নিয়েছেন । ধরে বসিয়ে না দিলে বসতেও পারেন না। একমাত্র পুত্র বিদেশ সুদূর মুম্বইয়ে সোনার দোকানে কাজ করে । বিদেশের স্ত্রী বিমলা বৃদ্ধ শ্বশুরকে অসুস্থ দেখেই সোজা বাপের বাড়ী । ঘরে এমন কেউ নেই যে বুড়োর দেখাশোনা করে । বৃদ্ধা স্ত্রী শশীবালা একলার হাতে আর কত করবেন ? তাঁরও বয়স কম নয় । সত্তর ছুঁই ছুঁই করছেন ।
আজ ভোররাতে শশীবালার কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ঘরের বাতাসে ভেসে থাকা কটু গন্ধের তাড়নায় । দ্রুত বিছানা থেকে নেমে এসে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বাললেন । সেই আলোয় দেখলেন বুড়ো হরেকেষ্ট গুয়েমুতে মাখামাখি হয়ে পড়ে আছেন বিছানায় । দেখেই মাথার ভেতর আগুন । আর কত করবেন ? নিজের শরীরও যে বসি বসি গাইছে কদিন ধরে । নিরুপায় হয়ে গনগনে গলায় বললেন – “আত্মহত্যা ছাড়া পরিত্রাণের আর কোনো উপায় দেখছি না । এই নররক যন্ত্রণার হাত থেকে নিস্তার পাবার জন্য সেই পথটাই বেছে নিতে হবে আমাকে

শুনে বুড়ো হরেকেষ্টর গলায় ঘড়ঘড়ে হাসির ফোয়ারা – “খামোখা অপরাধের বোঝা মাথায় তুলে নেবে কেন? আর দুটো দিন সবুর করে যাও শশী। দুজনেরই যাবার সময় যে হয়ে এলো। বলে সেকি হাসি বুড়োর ফোকলা মুখে। 

শশীবালা দেখে পুলকিত হলেন। কে যেন তাঁকে বলেছিলো - যে যতটা পারো হাসো। হাসলে শরীর ভালো থাকে