গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

কাওসার পারভীন



জল কেতকীর কথন   

গ্রামের ধারে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটা নদী।
বর্ষার পানি অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। পুকুর-ডোবা গুলিতে পানির টইটুম্বুর অবস্থা এখন আর নেই । ঋতুবদলের রঙে রঙিন প্রজাপতিরা এখন ডানা মেলে উড়ছে। ফুটন্ত কদম কেতকী সৌরভ ছড়িয়ে আবার এক বছরের বিরতিতে যাবে।
নদীর জল- 'কি রে ! তোর থোকা ফুলের বাহার কই? এমন চুপসে যাচ্ছিস যে বড় !'
কেতকী - 'আমার ফুলের বাহার এখন কমে আসছে গো! তবে তুমি যে একেবারে শুকিয়ে মরা কাঠ হয়ে যাচ্ছ ! কিভাবে চর পড়ছে দেখেছ তোমার বুকে? লোকজন নৌকো নিয়ে চলাফেরা করবে কেমন করে ! এই শুষ্ক দিনগুলোতে তোমার সময় কাটবে কি করে ? এ যাত্রা আর কারো মন পাবে না।সময় চলে গেলে আর কেউ ফিরেও তাকায় না।'
নদীর জল - ' বলিস কি ! তাই তো! আমার দিন ফুরাবে কেমন করে ? নৌকো পারাপারের সময় মাঝিদের হৃদয় চে্রা ভাটিয়ালী গানের সুরে মন জুড়াব কেমন করে? সারাদিন কত কত সওয়ারী পারাপার হয় আমার বুকের উপর দিয়ে।এই ক'মাস কেমন করে যাবে রে আমার দিনগুলি? তুই তো ভারি চিন্তেয় ফেলে দিলি।'
কেতকী - ' বৃথা তুমি ভাবছো। আমায় দেখো,আবার বছর ঘুরে আসলে আমার মত ফুলেরা ফুটবে, পাখিরা গাইবে আবার,এ ডাল ও ডাল ঘুরে তিরিং বিরিং লাফিয়ে কিচির মিচির করবে । শুধু আমি কেন, আমার আরও কত সঙ্গী থাকবে তখন। কদম, কামিনী, গন্ধরাজ। তবে- তবে-'
নদীর জল - 'তবে কি? হতচ্ছাড়ি বলেই ফেল না!'
মন ঝিমিয়ে যায় কেতকীর, চোখ ছলছল করে।
-'আসছে বছর কি আর আমি থাকব? আমি তো ঝরে যাব এই তো আর কিছুক্ষ পরেই। তখন নতুন করে মেতে উঠবে সবাই সদ্য ফোঁটা বর্ষা ভেজা কদম, কেতকী নিয়ে।আর তুমিও থাকবে কত আনন্দে। তোমার বুকে আবার মাঝি গান গেয়ে নতুন উদ্যমে নৌকো পারাপার করবে। আমি হারিয়ে যাবো বিস্মৃতির অন্তরালে। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম গো !'