গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

প্রদীপ ঘটক



দাম্পত্য

মীরা আমাকে তিনদিন কথা বলেনি। রেগেই হোক আর আমার কপালে ওর সৃষ্ট ক্ষতচিহ্নের লজ্জাতেই হোক । অবশ্য তাতে আমার খাওয়া বা ঘুমনোর কোন ব্যাঘাত ঘটেনি । যথাসময়ে খেতে পেয়েছি, কলেজ যেতে পেরেছি, বিছানাও পেয়েছি । শুধু বাইরে মিথ্যা বলতে হয়েছে কপালের সাদা ব্যান্ড-এড এর ব্যাপারে ।

মীরার অভিযোগ মূলত দুটো । প্রথমত ও কেন আমার কোন গল্পের নায়িকা নয় । দ্বিতীয়ত সামনের বাড়ির মুখার্জিদার মতো কেন আমি ওকে ভালোবাসি না । মুখার্জিদা প্রতিদিন অফিস যাবার আগে ও অফিস থেকে ফিরে ওর স্ত্রীকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে । আমি মীরার মুখে কথাটা বহুবার শুনেছি কিন্তু অনুকরণ করিনি মুখার্জিদাকে।

মীরার এই অভিযোগের পিছনে আরো গূঢ় কারণ আছে। তা'হল ওর মা হতে না পারা । পাড়ার লোকে ওকে দায়ী করে আর ও আমাকে। আসল কারণ ডাক্তার জানে । মীরা মোটা শরীর যে বাচ্ছা হওয়ার পথে অন্তরায় বহুদিন বলেছি আমি এবং ডাক্তারবাবুরাও। মীরা ভাবে মুখার্জিদার মতো ওকে ভালোবাসলেই হয়তো ও মা হতে পারত ।

আমি বরাবরই লাজুক এবং নির্বিবাদী মানুষ । মীরার উচ্চগ্রামের গলার সঙ্গে কোনদিনই পাল্লা দিই নি। অন্য পুরুষের মতো বিপুল সহবাসই আমার দাম্পত্যের মোহ নয় । মীরাও যে এসব খুব বেশি পছন্দ করে না । আমার ছোট্ট ঘরে কাঁচের চুড়ি সহজ সরব । কখনো কখনো বাড়াভাতে মাছি বসে না তা নয়।
আজ দুপুরে গল্প লিখতে বসেছি । বাইরের কোলাহল কোনদিনই আমাকে খুব বেশি টানে না । মীরা বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ । কম্পিউটারে গল্প লেখা শেষের পথে মীরা আমার গলাটা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কেঁদে বলতে লাগল "আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ"

        আমি কিছু বুঝিনি । মীরাকে শান্ত করে জানতে চাইলে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, মুখার্জিদাদের নাকি আজ ডিভোর্স হয়ে গেল । আমি আরো জোরে মীরাকে জড়িয়ে ধরলাম ।