মিকি-সৃজন
সাড়ে তিন বছরের সৃজন পাক্কা সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠেছে। ঠাম্মা-দাদু,
মা-বাবাকে সে রাতদিন সন্ত্রস্ত করে রাখে। তরল যা কিছু – জল থেকে শুরু করে
সাবানগোলা, হাতের নাগালে পেলে সে মেঝেতে ঢালবেই। তার ভাষায় ‘শুকনো পাতা’ – যেমন
দাদুর ডাইরি লেখার সাদা পাতা, বাবার হিসেবের খাতা, বিছানার সাদা চাদর, ঘরের দেওয়াল
বা মেঝে, কিংবা দাদুর খোলা পিঠ, - দেখতে পেলেই তাতে রঙ-পেনসিল দিয়ে ছবি সে আঁকবেই।
বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে নিমেষেই সে ‘ছোটা ভীম’ হয়ে বাধাদানকারীকে আক্রমণ করবে।
এসব দুষ্টুমি সৃজন করে না কিন্তু। সব করে মিকি। সৃজনের তিন সঙ্গীর
একজন হল মিকি। অন্য দু’জন ভলু আর ডগি। তিনজনের মধ্যে মিকিই হল একমাত্র ভিলেন।
সারাদিনে দাদু, ঠাম্মা আর মাকে অন্তত একবার করে সে মিকির যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী
কাজকর্মের খতিয়ান শোনায়। মিকি মেঝেতে সাবানজল ফেলে রেখেছিল বলেই না আছাড় খেয়ে
মায়ের পায়ে লাগল! কাজেই মিকির শাস্তির ব্যবস্থাপত্রে কাউকে না কাউকে স্বাক্ষর
করতেই হয়। তবে মিকিকে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হবে, নাকি অন্ধকার ঘরে ‘আউল’-এর কাছে ছেড়ে
দেওয়া হবে সেই চরম সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত সৃজনের ইচ্ছানুসারেই নিতে হয়। ছবি এঁকে
দেওয়াল নোংরা করার জন্যে মিকিকে কী শাস্তি দেওয়া হবে সেটা সে অনির্দেশ্য কোন
ব্যক্তির সঙ্গে ফোনালাপ করেই ঠিক করে। মিকির হাত থেকে কীভাবে সে ভলু আর ডগিকে
রক্ষা করবে, সেই দুশ্চিন্তার সাতকাহন তার দাদুকে মনোযোগ দিয়ে শুনতেই হয়। বেলনা
ছুঁড়ে ঠাম্মার মাথায় আলু করে দেওয়ার পর তাতে কাল্পনিক ওষুধ সৃজনকেই লাগাতে হয়।
মিকি সেটাও পারে না কিনা!
কাল রাতে শুতে যাওয়ার সময় দাদু দেখলেন, ভলু, ডগি আর মিকি তার
বিছানায় শুয়ে আছে। সকালে উঠেই তিনি সৃজনের কাছে অভিযোগ জানালেন, -- দাদুভাই, তুমি
মিকিকে আমার বিছানায় কেন শুইয়েছিলে? রাত্তিরে হিসি করে আমার বিছানা ভিজিয়েছে ও।
খুব সুন্দর একটি হাসি মুখে এনে
সৃজন বলল, -- যাঃ – মিকি তো হিসি করতেই পারে না।
যে এত সব করতে পারে, সে হিসি কেন
করতে পারে না – সৃজনের সেই মনোহর হাসিটি দুচোখ ভরে দেখতে দেখতে সেই প্রশ্নটি করতেই
ভুলে গেলেন দাদু।