গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

পলাশ কুমার পাল



 অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা পেয়েই ছুটে যায় সুমন। যখন পৌঁছাল মরদেহ তখন তুলে নিয়ে গেছে। কিছু স্থানীয় মানুষের জটলা সেই রক্তস্নাত রাস্তাটার ধারে। পাশে হত্যাকারী লরিটা দাঁড়িয়ে। বিবেক আর নেই -এটা বিশ্বাসই করতে পারে না সুমন। দু'জনের গ্রামের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার হলেও দু'জনে ছিল খুব ভালো বন্ধু। আত্মীয়ের মতো।
বিবেকরা ছিল দরিদ্র। তার বাবা চালকো করেও তাদের আর্থিক অবস্থাকে উন্নত করতে পারেনি। পাঁচকাঠা চাষের জমি আর বাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না। এই কারণে বিবেক মানসিকভাবে ভেঙে পরে। তারপর থেকে তার চিকিত্সার জন্য তাদের পরিবার আরও কোনঠাসা হয় পরে। বিবেক সুস্থ হলেও  নিয়মিত ঔষধ খেতে হত।
রক্তস্নাত স্থানটা দেখার সাহস হয় না সুমনের। বিষন্ন মনে সে রাস্তার একধারে বসে পরে। পুরানো স্মৃতিগুলো ওল্টাতে থাকে। ঠিক তখন তার কানে এলো, "ওর মাথার ডিফেক্ট ছিল। পাগল তো! কোনোভাবে লরির সামনে চলে এসেছিল।"

"না! পাগল ছিল না। আমি ওকে চিনি!" সুমনের কণ্ঠ দৃঢ় হয়ে ওঠে। সে বিবেককে ছোটো থেকে জানত। পারিবারিক আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করতে করতে একসময় বিবেক মানসিকভাবে এলোমেলো হলেও তার আচরণে কখনো পাগলামি ধরা পড়েনি। বরং সে পরিবারের কথা ভাবত। তার ছোট্ট ভাই পড়াশোনা করবে কীভাবে সেকথা চিন্তা করত।
একদিন সে যখন বলেছিল, "জানিস, আমার জন্য আমার পরিবারটাও শেষ হয়ে যাবে বোধ হয়! কাঁড়ি কাঁড়ি ঔষধ গিলছি। টাকা গিলছি, টাকা!" তখন সুমনেরও কিছু করার ছিল না। তারও তো আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আজ যেন সে নিজেই তার উপায় বের করে নিল।

"তুমি কতটুকু জানো হে খোকা! আমি ওদের পাড়ার লোক!" ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ যেন বলে উঠল।
কলেজ ছাত্র হলেও ব্যঙ্গার্থক 'খোকা' শব্দটা মন থেকে মানতে না পারালেও প্রতিবাদের উপায় ছিল না। এই আত্মহত্যার ঘটনাকে সবাই পাগলামি বলে চালাচ্ছে! সুমন এটাকে আত্মহত্যাই মনে করে। পরিবারকে বাঁচাতে নিজের বলিদান। অথচ মানুষগুলো কী বলছে?

সুমন নিরুপায়ভাবে তাদের কথাগুলো শুনতে লাগল। মানুষ মানুষের ভিতরটা দেখল না! বাইরের অসঙ্গতিই এত বড় হল? আসলে কে পাগল বা পাগলের সংজ্ঞা কী? -এই প্রশ্নগুলো ধাক্কা দিয়ে গেল। যেন অ্যাক্সিডেন্ট।