ডায়োজিনেস
ফার্মগেট এলাকায়
যাদের যাতায়াত আছে তাদের চোখে নিশ্চয়ই পড়েছে। পাগলটির বয়স কত হবে? দেখে
তো ত্রিশ/পয়ত্রিশ বলেই মনে হয়। সম্পূর্ণ দিগম্বর। সুঠাম দেহ। গ্রীকভাস্কর্যের কথাই
মনে করিয়ে দেয়। ভদ্রলোকেরা না দেখার ভান করে। আশেপাশে হেঁটে চলা মহিলাদের দেখি
আড়চোখে একবার দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিতে । নাহ্, পাগলটা
মোটেই ভায়োলেন্ট নয়। মাঝে মাঝে সে অট্টহাসি দিয়ে ভরাট গলায় চিল্লায়, 'মানুষ
কই গেল রে? মানুষ কই গেল রে?' সেদিন
দেখি এক গামছা বিক্রেতা লাল টকটকে নতুন গামছা লোকটিকে দিয়ে বল, 'এই
নেও ...গামছাটা দিয়া সতর ঢাইক্যা ফালাও এলা!' পাগলটি
এবার হাঃ হাঃ হাঃ করে হেসে বলে ওঠে, 'হারামজাদা, তুই
কী পাগল হইছোস? আমি কাপড় পড়ুম কেন? কারে
দেইখা আমি শরম পামু? মানুষ কই? মানুষ
কই রে?'
আমার চোখে ভেসে
ওঠে মানুষ খোঁজার তপস্যায় হারিকেন হাতে গ্রীক দার্শনিক ডায়োজিনেসের মূর্তি।
বসন্তকালে
আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছাড়া বিবাহিতাদের 'তুমি' করে
বলতে আমার বাঁধো বাঁধো লাগে। জামালপুর থেকে আসছি ট্রেনে, মুখোমুখি
সিটে বসা সে । আমার হাতে জীবনানন্দের কবিতাসমগ্র। ট্রেন চলছে, আনমনে
চোখ বুলাচ্ছি কবিতার পর কবিতায়। 'ভাইয়া, আপনি
বুঝি কবিতা খুব ভালোবাসেন?', ট্রেনের শব্দ
ছাপিয়ে আচমকা সুরেলাকন্ঠে সম্বিৎ ফিরে পাই। হ্যা, সামনের
সিটে বসা মেয়েটিই বলছে। বালিকা বালিকা চেহারা। বললাম, 'হ্যা, ঠিকই
ধরেছো, কবিতা আমার প্রিয় বিষয়। তোমারও কি তাই?' সরাসরি
কোন উত্তর না দিয়ে সে বলে, 'জীবনবাবুর দিন
কিন্তু ফুরিয়ে যাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মতোন উনিও একদিন
পুরানো হয়ে যাবেন.. এখন নতুনদের পালা.' মন্তব্যে খিঁচড়ে
গেল মন, কবিরা তো কখনো পুরানো হয় না! তবে মেয়েটি যে কবিতা নিয়ে
ভাবে এটা বুঝতে পেরে ভালো লাগলো।
কথায় কথায় জানতে.
পারি সে বিবাহিতা, দশ বৎসরের মেয়েও আছে ওর। বিশ্বাস হতে চায়
না। আমার অবাক হওয়াতে সে বলে, 'আপনার মত অনেকেই
এ ভুল করে। আমার বয়স কিন্তু ত্রিশ পেরিয়ে গেছে ... এই যে দেখেন আমার মেয়ের ছবি।' , টাচ
ফোনটি বাড়িয়ে ধরে সে। হোঁচট খাই আমি-
- আপনি
বিবাহিতা জানলে তো তুমি করে বলতাম না ..
- বলেই
যখন ফেলেছেন, বলতে থাকেন, আমার তো শুনতে
বেশ লাগছে ...
- না, না
... এটা কি করে হয়, একজন বিবাহিতা মহিলাকে ...!
- নো
প্লোব্লেম ... আমিও আপনাকে তুমি করে বলছি, ... এসো
একই সমতলে নেমে আসি দুজনে।
মেয়েরা কেন যে
এতো প্রগলভ হয় ভাবতে না ভাবতেই, বগির অন্য
প্রান্ত থেকে 'কুহু কুহু' ভেসে আসে। কারোর
মোবাইলের রিং টোন। হ্যা, বসন্তকালই চলছে
এখন।