গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

তাপসকিরণ রায়



কান্না

বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখলাম রাস্তা দিয়ে শব কাঁধে নিয়ে চলেছে।
মড়া দেখলে কার না মন দুর্বল হয় ! চলতাফিরতা মানুষকে একদিন প্রিয়জনদের ছেড়ে চলে যেতে হয়। মৃত্যু জীবনের এক আর্ত পরিণতি।
--বলো হরি, হরি বোল, শব যাত্রীরা গলা ছাড়লো। তার একটু পরেই কান্নার রোল পড়ে গেল। অনেকেই কাঁদছে , ভাবলাম, নিজের আত্মীয়স্বজন তো কাঁদবেই ! কান্না বেশ সুর নিয়ে হচ্ছিলো। এই প্রথম মনে হল যে কান্নারও সুর আছে ! আমি কেমন বিহ্বল হয়ে পড়লাম। কখন যেন আমার চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে এলো।
--এ কি আপনি কাঁদছেন ? আপনাদের কেউ মারা গেল বুঝি ?
চোখ তুলে দেখলাম, আমার পাশের বাড়ির ভজন বাবু গম্ভীর মুখ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে।
নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বললাম, না, না, আমাদের কেউ নয়--
--তবে ?
--ঐ ওদের কান্না দেখে--সামনের শব যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে আমি বললাম।
ব্যাপারটা উপলব্ধি করে নিতে ভজন বাবু সামান্য সময় লাগলো, তিনি হেসে উঠলেন, বললেন, দূর মশাই  আপনিও পারেন বটে ! ওরা তো ভাড়া করা কান্নার লোক। দেখছেন না, কেমন সুর করে তাল তুলে কাঁদছে ?
ভজন বাবু জানালেন, অনেক সমাজে এমনি হয়, ঘরের লোক কান্নাকাটি শেষ করার পর শব যাত্রার সঙ্গে ভাড়া করা কান্নার লোক নিয়ে যায়।
আমি হতবাক হলাম।



 বোঁচি

মুখমণ্ডল, নাক, মুখ সব মিলিয়ে বোঁচি খেঁদি-বোঁচা ধরণেরই একটি মেয়ে।
বোঁচি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে উঠলো।
বোঁচির মা তার ছোটবেলাতেই মারা গিয়ে ছিল। তার বাবাই তাকে মানুষ করেছে। বোঁচি জানে তার বাবার অনেক টাকা পয়সা আছে। বিয়ের বয়েস হয়েছে বোঁচির কিন্তু সে জানে তার মত অসুন্দরী মেয়েকে ছেলেরা পছন্দ করবে না। তবু দেখতে শুনতে সুন্দর, ভাল একটা ছেলে তাকে বিয়ে করতে চাইলো।  বোঁচির বাবা খুব খুশি হল। কিন্তু বোঁচির মন ভাল হবার জাগায় কেন যেন বেশ খারাপ হয়ে গেল। সে বাবাকে বলল, না বাবা, আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।
বাবা আশ্চর্য হল--কেন মা ?
বোঁচি বলল--ও ছেলে আমাকে না, তোমার ধন-সম্পত্তিকে পছন্দ করেছে।
বাবা বলল--তবু ছেলে শিক্ষিত, দেখতে শুনতে ভালো--
বোঁচি বলল--সে জন্যেই বাবা, আমি তো খেঁদিবুঁচি ,আমি তো তা জানি !
বাবা খুব দুঃখ পেল, বলল, তা হলে তোর বিয়ে কি করে হবে, মা ?
বোঁচি খানিক চুপ থেকে বলে উঠলো, আমি মোহন চাচুর ছেলেকে বিয়ে করতে চাই, বাবা !
মেয়ের কথা শুনে বাবা আঁতকে উঠল।
বোঁচি তখন ধীরে ধীরে বলে চলেছে--ও ছেলে বিকলাঙ্গ হলেও আমায় খুব ভাল চোখে দেখে বাবা ! ওর সেবা-শুশ্রূষা করেই আমি আমার বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই,,বাবা !