গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

রুখসানা কাজল



  
রেন্ডি 

        দুই দোকানের মাঝখানে একফালি খালি জায়গা। আশেপাশের দোকান মালিক-কর্মচারীরা সকালবিকাল খাল্লাস হয় সেখানে। একদিন ভোরে দেখা গেল সেখানে একটি হোগলাঘর। রাতারাতি হোগলাঘর এলো কোত্থেকে? রেরে করে ছুটে আসে নুরুমিয়া আর ঠান্ডুকাজি, কে কে এই কে আছিস বদনখান দেখা ত দেখি!

        হোগলার কানি তুলে বেরিয়ে আসে জমিলা। পেছনে কিশোর দেওর লিকলিকে জব্বার। চাটাই বিছানায় ঘুমুচ্ছে পাঁচ বছরের ছেলে জুম্মন। হাঘরে, অভাবী, স্বামীহীন তরুণী বিধবা। ছেঁড়াফাটা আঁচল টেনে বলল, বড়কাজী থাকতি দিসে! কি কবেন কন!”  

        ভেটকে যায় ঠান্ডুকাজী। টুপির গর্তে ফু দিয়ে ভাবে, খচ্চরের খচ্চর হারামখোর  বড়ভাই কেমনে দখল করে নিল জায়গাটুকু!”
       নুরুমিয়ার শ্লথ শরীর অনেকদিন পর টানটান হয়ে যায়। কি ফিগার! যেন  কালনাগিনী ফণা তুলে দুলছে। বুক দেখো, আহহহা কি গড়ন! যেন ডাকছে ওরে আয় আয়—চরে খা—
       ঠান্ডুটা গাড়ল!জমিজিরেতের ধান্দাবাজ! মেয়েমানুষ বোঝে ছাই । জমিলা আর জব্বারকে কাজ জুটিয়ে দেয় নুরুমিয়া। দোকানেগুলোর ঝাড়পোঁছ,জলটানা, চা দেওয়ার কাজ।জব্বার তো রাতদিন নুরুমিয়ার দোকানেই পড়ে থাকে। টিভি দেখে! জুম্মও  টিভিপোকা। চাচার সাথে দোকানেই ঘুমোয়।

       রাতে হোগলাঘরে নুরুমিয়াকে হিসহিসিয়ে পেচিয়ে ধরে জমিলা। স্বামী হারানো, ভিটেমাটি জমি হারানো জমিলা বুঝে গেছে তার শরীর বড় অমূল্য জমিন। কড়ায়গণ্ডায় আদায় করে নেয় শরীরজমির খাজনা। যার কিছু নেই তার আবার লজ্জা, ভয়, ইজ্জতের বালাই! বাঁচতে হবে, বাঁচাতে হবে যে! নুরুমিয়া গাল দেয়, রেন্ডিমাগী! জমিলা হাসে, তোর ভাইবন্ধুও, তারবেলা ?

         

কি খেনে
          
সাদা রোদ্দুরে ডুবে গেছে রাস্তা। ঝলসে যাচ্ছে চোখ। হাঁসফাঁস করছি। এরমধ্যে দেখি রোদজ্বলা রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অগুন্তি মানুষ। ধূলি-ধূসরিত  নগ্ন পাগুলো চলছে, চলছেই। যেন অদৃশ্য হাতছানিতে কেউ ডাকছে, ওরে আয় আয়। 
    
        কপালে তিলক। একজনকে বলি, কোথায় যাচ্ছ ?” কপালে হাত ছুঁইয়ে আকাশ দেখায়, তিনি যে ডেকেছেন।” যুবকের কানের নীচে ঘামের ঝর্ণাধারা তুলসির মালা ভিজিয়ে নেমে যাচ্ছে । জলের বোতল তুলে ধরি। অমৃত জলরাশি ঝরে পড়ার মূহূর্তমাত্র, চমকে বলি, আমি মুসলিম! পাপ হবে তোমার।” রোদপোড়া চরাচরে হেসে উঠে যুবক, তুমি যে জলদাত্রী। মেঘমায়া। জলের আবার জাত কিগো!” 
    
        আগুনলাল দুপুরে আর্দ্র হয়ে যাই। সহস্র নদীউপনদী বয়ে যায় শরীরে। যেন আমিই গঙ্গাগঙ্গোত্রী, ফল্গুসম যমুনা, সরস্বতী, পদ্মা দুহিতা গেরুয়াজল পুস্পিতা  চঞ্চলা মধুমতি! আমিই কি সুজাতা ? নিরঞ্জনা নদীতীরে বুদ্ধের অন্নদাত্রী পরাণ বন্ধুয়া ?  
    
                         “তালি যাই গো!” রোদ্দুরপুত্রের হাতে তুলে দিই জলের বোতল, এসো তবে  বৈষ্ণব!” থমকে থেমে যায় সে । দীঘল পায়ের আঙ্গুল। তাতে জমে আছে কালোমাটির অমিতশক্তি। ঘোরবর্ষায় এই আঙ্গুলে কাদামাটি কামড়ে পথ হাঁটে ওরা। হোগলাকাছনির ঘরে বসে গলা খুলে গায় বর্ষাগীত। ঈশ্বর তখন নেমে বসে ওদের পাশে। 

                            ঝরাপাতা সুরে বলে যুবক, সে ভাগ্যি কি আমারে দেছে তোমার ঠাকুর?”    অথচ স্পষ্ট শুনলাম যুবকের চরণস্পর্শ পেয়ে ঘাসেরা পদাবলী গাইছে,
“কি  খেনে হইল দেখা নয়ানে নয়ানে, অগাধ সলিলে  মীন  মরে যে পিয়াসে—