গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়



ভিখিরি

ব্যাতিক্রমী বাদ দিলে সব ব্রাহ্মনই ভিখিরি। জীবনের কোন না কোন এক সময় তাকে ভিক্ষে করতেই হয়।
উচ্চারণ করতেই হয় "ভবতি ভিক্ষাং দেহি.......
এ হেন ভিখিরি আমি। ভিখিরি হয়েও রাস্তায় ভিখিরি দেখলেই গা পিত্তি জ্বলে যায়। ভিক্ষে আমি কোনদিন দিইনা। বরং মুখে বুলি কপচাই, "কাজ করে খেতে পারোনা, যত্তোসব ?"
শহরের আনাচে কানাচে ভিখিরির অভাব নেই। পানুক্ষ্যাপাকে দেখে মায়া হয় বটে কিন্তু ভিক্ষে দিই না। পানুর পা নেই। কোন এক সময় ট্রেনে দুটো পা কাটা গিয়েছিল। একটা ছেঁড়া গাড়ীর টায়ারে নিম্নাঙ্গ বেঁধে দুহাতে টায়ার টুকরোর চটি করে ঘষটে ঘষটে সারা শহর ঘুরে ভিক্ষে করে।কেউ দেয় কেউ দেয় না। মুখে একগাল দাড়ি, তেলচিটে বেশবাস, গলায় তস্য চিটচিটে কাপড়ের থলে।
একদিন এক বিরল দৃশ্য দেখলাম। দুপুরে অন্নপূর্ণা হোটেলের পাশে এক মোটর বাইকের ধাক্কায় সদ্য আহত অন্ধ ভিখিরিকে উচ্ছিষ্ট পাতার থেকে ভাত খাওয়াচ্ছে। আর ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করে বেঁধে দিচ্ছে।
না।  ওদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। আছে সহমর্মিতা। আমি পাশের পান দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে কৌতুহলবশত পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম পানুক্ষ্যাপা তার গলায় ঝোলানো তেলচিটে ব্যাগ থেকে বেশ কিছু নোট বার করে আহত ভিখিরির হাতে দিয়ে বললে,
-যা তুই ডাক্তারের কাছে যা। এখন তো নির্মল ডাক্তারবাবু নেই যে বিনি পয়সায় দেখবে। নে এই টাকাগুলো তোর কাজে লাগবে।
-আমারও টাকা লাগবে? তাহলে সরকারী
  সদর হাসপাতালে যাই।
-দুর বোকা ওখানে তো আবর্জনার
আস্তাকুঁড়ে কুকুর বেড়ালের সংগে মরে পড়ে থাকার শেষ আশ্রয়। তার চেয়ে ডাঃ ব্যানার্জীর চেম্বারে যা।
-উনি তো বিশাল বড় ডাক্তার।অনেক ফি।
-হ্যাঁরে বোকা জানিস না,উনি আমাদের চেয়েও বড় ভিখিরি।
এখন আফশোষ হয় কেন আমি পানু ভিখিরি হতে পারলাম না?