"মেঘলা আকাশ দেখলে ভীষণ মন কেমন করে মা মনে হয় এক্ষুণি তোমার কাছে চলে যাই। এতো একা লাগে এতো ফাঁকা লাগে বুকের ভেতরটা মা" । আর পড়া হয় না চোখের জলে ভেসে যায় চিঠি।
কতকাল আগে
লেখা দীপের চিঠি। দার্জিলিঙের হস্টেল থেকে লিখেছিল। অনেক কেঁদেছিল
লেখা।কিন্তু সোহম স্ট্রিক্টলি বলেছিল এরকম করলে ছেলে। মানুষ করতে পারবে না । ওকে বড় হতে গেলে এই সব সেন্টিমেন্ট একদম ঝেড়ে ফেলো লেখা। মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে
দিনরাত ছেলের কথা ভাবতো । দিন গুনতো আবার
কবে দেখা করার দিন । ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখত
তারপরে
কেমন করে অনেক গুলো বছর হু হু করে কেটে গেল।সময় যে থেমে থাকে না কীভাবে যে পেরিয়ে গেছে এতগুলি দিন একা বারান্দার কোনে
দাঁড়িয়ে লেখা উদাস হয়ে বসে বসে ভাবতে থাকে।বাড়ির অমতে লেখা আর সোহম বিয়ে করেছিল। সোহম
খুব সাধারণ ঘরের ছেলে আর লেখা ধনী ব্যবসায়ীর কন্যা। পালিয়ে বিয়ে করার জন্য
চিরকাল আত্মীয়স্বজন হীন হয়ে থেকেছে । নিজের
সংসার, সোহমের চাকরি
আর ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার
নেশায় কখন যে জীবন গড়িয়ে গেছে অনেক দূর বুঝতে পারে নি।
ছেলে মানুষ হলো । বড়ো ইন্জিনিয়ার হয়ে
আমেরিকায় বিশাল চাকরি পেয়ে প্রবাসী হয়ে গেল।বাবার
ভীষন অহংকার । সমাজে কী ভীষন সন্মান। আত্মীয়েরা ধন্য ধন্য করতে লাগল ।
লেখার
মনের ভেতর একটা চাপা দুঃখ রয়ে গেল । ছেলেটাকে আর কাছে রাখতে পারল না । কত সাধ ছিল
বড়ো হয়ে গেল, এবারে বিয়ে দিয়ে সুন্দর একটি
মেয়ে নিয়ে আসবে । একা একা সংসার করতে আর ভালো লাগে না । বেশ একটা সর্বক্ষণের সঙ্গী
হবে । গল্প করবে গান গাইবে তার হাসি ভরিয়ে
দেবে তার ছোট্ট পরিবারটিকে । আর কী তার স্বপ্ন পূরণ হবে ?
এখন এতো ব্যস্ত সেই ছেলে সময় মতো কথাই বলতে পারে না।আবার গ্রীন
কার্ড পেয়ে গেছে হয়তো দেশে আসার সময়ই পাবে না । বুকের ভেতরটা হু হু করে । সোহমকে কিছু বলতে পারে না ।
তার ছেলে যে অনেক ডলার পাঠায় । এতেই সে ভীষন খুশি । নিশ্চিন্ত।লেখার মনের আকাশ
মেঘেই ঢেকে থাকে ।
আশা করে বসে থাকে কখন
একবার ফোন করবে । হয়তো বলবে মা এবারে
ছুটি পেয়েছি কদিন তোমার কাছে ঘুরে আসব । তোমার কোলে মাথা রেখে ছোটবেলার মতো ঘুমোব ।
শান্ত জীবন এলোমেলো করে দিল সোহমের হঠাত
মৃত্যু । ফোন গেল প্রবাসী ছেলের কাছে । ছুটি পেল না সে।মাকে ফোনে কাঁদতে কাঁদতে
সান্ত্বনা দিল ছেলে নেক্সট উইকে আসছে সে । জীবনের অসহায়ত্ব এই প্রথম অনুভব করলো লেখা ।
আজ সকালে
ফোন এলো সে আসছে সঙ্গে ভাবী জীবন সঙ্গীনীকে নিয়ে । এতদূরে চলে গেছে দীপ তার
জীবন থেকে।একটুও বুঝতে পারে নি লেখা । ছোট্ট দীপের লেখা চিঠি টা বুকের মধ্যে
রেখে দেয় । যে দীপ তার চেনা,একান্ত আপনার । দীর্ঘশ্বাস ভেসে যায় মেঘলা বাতাসে আকাশে আকাশে ।