গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

দীপঙ্কর বেরা



ছাদ 

 গোপলাদের বাড়িতে কোন ছাদ নেই। ছিটে বেড়াতে মাঝে মাঝে মাটি খসে পড়ছে। আর উপরের দোচালাতে খড় ত্রিপল টালি আরও কত কি? ঝড়ে উড়ে যায়, বৃষ্টিতে সারা ঘর ভিজে একসা হয়ে যায়। বর্ষার ঠিক আগে সারাই না করলে বাস করা যায় না। এই ছাদে ওঠা যায় না।
বাড়ির পাশ দিয়ে রোজ মোহিনা টাই পরে ঢাউস একখানা গাড়িতে স্কুলে যায়। ড্রেসটা সুন্দর। আরও সুন্দর ওর বিকেলে বেড়াতে যাওয়া। একদম পরী। সব সময় সেজেগুজে যেন উড়তেই থাকে। কথা বলার সুযোগ হয়নি। কিন্তু শুনেছে। খুব মিষ্টি ঝরে পড়ে ঠোঁট দুটোতে। ও বন্ধুদের বলেছে - ছাদে উঠে বিকেল দেখতে দারুণ লাগে। সূর্যের সাথে নিবিড় গল্প করা যায়। পৃথিবীর চলমান আরও কাছ থেকে দেখা যায়।
হাঁ করে মোহিনাকে দেখে গোপলা। খোলা আকাশ আর মাটিকে বুঝতে চেষ্টা করে।
গোপলা যে স্কুলে পড়ে তার বিল্ডিংটা পাকা কিন্তু ছাদে ওঠা যায় না। স্যার বলেছে  সিঁড়ি ভেঙে একে একে উঠতে হয়। তবেই জীবন সার্থক ও শান্তিতে কাটবে। স্টেপ জাম্প দিলে ছাদে উঠে আবার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। গোপলা সিঁড়িতে পা দিয়ে উপরে তাকায় নিচে দেখে।
বাবার কষ্টের খাটুনি মাটিতেই। ফসল ফলিয়ে বইতে বইতে মাথাকেই ছাদ বানিয়ে ফেলেছে। মা তো এ বাড়ি ও বাড়ি। নিজের বাড়ি। চক্কর দিতে দিতে মাটি কামড়েই পড়ে থাকে। উপরের দিকে তাকানোর সময় পায় না। ছাদ তো অনেক দূর! তাহলে ছাদে উঠে অন্তত একবার এ পৃথিবীকে গোপলা কি ভালো করে দেখতেই পাবে না।
যারা দশ বিশ তলায় থাকে, রোজ পৃথিবীর চলমান দেখে। সূর্যের সাথে নিবিড় গল্প করে। নিশ্চয়ই তারা সুন্দর অনাবিল।
প্রতিদিন কত ইট কাঠ পাথরে বদ্ধ কুয়োর মত ঘিরে ফেলেছে গোপলাদের ঘরটা। নিজেদের এই জায়গায় যখন তখন দাঁও লাগতেই আছে। গোপলা অতশত বোঝে না। ছাদে ওঠার মোহ চেপে ধরেছে।
তাই ছাদ বানানোর স্বপ্নে মোহিনাকে পায়। বইয়ের পাতায় ছাদের গল্প কিছুতেই বাদ দেয় না। যেটুকু পায় যতটুকু পায় সেই ছাদে নিজেকে মোহিনার মুখোমুখি বসায়। কিন্তু সূর্যের সাথে গল্প, বিকেলের পৃথিবী, অনাবিল কথার ফুলরেণুতে ঠোঁট হারিয়ে যায়। নাস্তানাবুদ গোপলা হাল ছাড়ে না। এগিয়ে যায়।
গোপলা বড় হচ্ছে আরও বড় হবে। দেখা যাক ছাদে বসে গোপলা মোহিনা একসাথে নিবিড় গল্প করতে পারে কি না?