গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

মৌ দাশগুপ্ত



রুদ্রাক্ষ

নদীর তীরে শ্মশানফেরত একলা এক মানুষ। পথশ্রান্ত, মুখ ধুয়ে নিচ্ছে বহতী নদীজলে। জল তো নয়, যেন বৃষ্টিলেখা মেয়ের আনন্দাশ্রু! আঁকাবাঁকা দেহলতায় বেখেয়ালী খুশিতে জড়িয়ে ধরছে ঠিকানাভোলা পথের পুরুষালী শরীর। বড় শান্ত পরিবেশ। অদূরে হরিশচন্দ্র একা চিতাদন্ড হাতে লেলিহান শিখায় উড়িয়ে দিচ্ছে প্রিয়মানুষটির বড়প্রিয় অঙ্গপরশ, মায়াময় চাউনি, সুগন্ধী এলোচুল, উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস এখন অভিমানে পোড়া সুখ।অগ্নিশুদ্ধ সোনার মত খাঁটি। সামনে প্রসারিত অন্তহীন ধূলিপথ, বিষ্ণুচরণ, আঙুলে আঙুলে তর্পণমুদ্রা। অনিমেষ দৃষ্টি, অন্তর্মুখী মন, নদীজলে ভেসে যাচ্ছে ভষ্মমায়া অহমিকা। বিস্রস্ত জ্যোৎস্নায় অনিরুদ্ধ শরীরে তিলাঞ্জলি মুক্তি। মৃত্যু তো শেষ নয়। তারপরেও থেকে যায় মায়া-মোহ-মমতাহীন রুদ্রাক্ষ সংসার।… 

সিদ্ধিদাত্রী 

রাজপুর গ্রামে নামডাকে সব দুর্গাপূজাকে ছাড়িয়ে যায় সিংহী-বাড়ির দেড়শ বছরের পুজো । অষ্টমীর দিনটায় আবার ঘটা করে কাঙালী ভোজন, বস্ত্র বিতরণ,মহাপ্রসাদ সেবন চলে । অষ্টমীর এলাহী আয়োজন হয় বড় শরিক রুদ্রনারায়ন সিংহের তরফে। রুদ্রনারায়ন সিংহের অবস্থা যে ভালো তা নয়, ওনার একমাত্র সন্তান সিদ্ধি মুম্বাইয়ে বিরাট মাইনের চাকরী করে।বছরে একবারই দেশের বাড়ীতে আসে আর দেদার খরচ করে পুজো বাবদ ।

কিন্তু তারপর? পূজোর পাঁচদিন শেষ হলেই সিদ্ধি ফেরত যাবে মুম্বাই, তখন তো আর সে বাবার আদরের, সিদ্ধিদাত্রী সিদ্ধিশ্রী নয়, তখন সে মিস সাক্ষী। তখন সব আনন্দ, সব হাসি, ধুয়ে যাবে ড্যান্সফ্লোরের আলোর বাহাদুরিতে, উড়ন্ত নোটের মোহ আর নারীসঙ্গলোভী মানুষজনের গা ঘিণঘিণে ছোঁওয়ায়। আবার সেই ৩৬০ দিনের দাঁতে দাঁত চাপা সংগ্রাম, তিলতিল করে পয়সা জমানো আর আগামী আশ্বিনের ঐকান্তিক প্রতীক্ষা। দুর্গাঠাকুর তো বছরে একবারই বাপের বাড়ী যান।