গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬

সুস্মিতা মহলানবীশ



শম্ভু লাল                                                              
 
শম্ভু লাল বর্তমানে এই মহকুমা শহরে একজন নামী লোক।  শহরে সবাই এই নামটা জানে। বাঙালিদের লাল বলে কোনো পদবী  নেই। জনসাধারণই  শম্ভুকে ওর ছোট বেলাতে এই পদবীটি দিয়েছে । লাল পদবীটি শম্ভুর ও পছন্দ হওয়ায় সে বর্তমানে এই পদবীটিই  ব্যবহার করে। শহরে সে এখন বড়কর্তা,  রাজ্যের লোকেরা মোটামুটি সবাই ওর নাম জানে ।  ওর  হুকুমেই  সবাই ওঠ বস করে। লাল পদবীটির  একটি ইতিহাস আছে। শম্ভুর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্ঠম শ্রেণী।  প্রথম চাকুরী ছিল কেরোসিনের দোকানে  কেরোসিন মেপে দেওয়া।  লাইনদিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ তাড়া  দিলে শম্ভু তার দুটো লাল চোখ দেখিয়ে বলত কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকুন নইলে চলে যান। সবাই ফিসফিস করে একে অন্যকে বলত , ঐ টুকুনি ছেলে কেমন লাল চোখ দেখিয়ে কথা বলে দেখেছেন। খদ্দেরদের  কেউ কেউ শম্ভুকে দেখলে বলত ঐ রক্ত চক্ষু লাল বাবু এসেছেন। শম্ভুর কানে এই কথাগুলি গেলে সে   রাগ করার পরিবর্তে মনে মনে লোকেরা সমীহ করে ভেবে খুশী হত। অভিজ্ঞতার  ভিত্তিতে ৫ /৬ বছরের মধ্যে সে গ্যাস সিলিন্ডার বাড়ি বাড়ি সাপ্লাই দেওয়ার চাকুরী পায় সেই সঙ্গে তার ভাগ্য ও খুলে যায়।
লোকেদের বাড়িতে বকশিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে লাগলো যে যত বেশী বকশিস দেবে সে তত তাড়া তাড়ি গ্যাস পাবে। কিছু দিনের মধ্যে  সে পার্টির নেতাদের সুনজরে পরায়  মোটা টাকা ও সুরার সাথে মাঝ রাতে এখানে সেখানে লাল নদী বইয়ে দিতে লাগলো। কয়েক বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের দেশে ভোট পেয়ে এম.এল.এ হতে আর সময় লাগলো না।  শম্ভুর উচ্চাকাঙ্খা দ্রুত গতিতে ছুটে চল্ল।  তাকে আর নিজ হাতে রক্ত গঙ্গা বয়াতে হয় না। এ সব কাজ করার জন্য তার বহু সাকরেদ আছে।  পাড়ার  কলেজে পড়া বিজয় পোদ্দারের ওপর তার নজর পরলো ।  এই বয়সেই বিজয় সাহিত্যিক হিসাবে বেশ নাম ডাক করেছে। বিজয় ইংরাজি ও বাংলা দু ভাষাতেই  বই লেখে এই বার্তাটি শম্ভুর কানে যাওয়ায় সাকরেদ মানিককে বল্ল বিজয়কে দিয়ে তার ভালো গুন গানের বই লেখাতে। মানিকের প্রস্থাবে বিজয় বল্ল শম্ভু লালের বিশেষ কোনো গুনের কথা তার জানা নেই  তবে শম্ভু লাল চাইলে তিনি কি ভাবে বর্তমান পদে অধিষ্টিত হলেন তা সুন্দর ভাবে লোক সম্মুখে তুলে ধরতে পারে। ধুরন্ধর শম্ভু চট করে বুঝে নিল এই ফাঁদে পা দিলে বিপদ আছে। তাড়াতাড়ি বড় মন্ত্রী হওয়া যাবেনা।  অন্য পথে কি ভাবে  তাড়া তাড়ি বড় মন্ত্রী হওয়া যায় তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে মনে ছক কেটে নিল   সবাই যখন তার রক্ত গঙ্গার কথা ভুলে যাবে তখন সে অনেক বড় লেখককে দিয়ে তার আত্মজিবনী লিখিয়ে নেবে  এবং বড় মন্ত্রী হয়ে দেশের মাটিতে অমর হয়ে থাকবে।