গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬

অঞ্জলি চক্রবর্তী



আলো

মেয়ের গায়ের রঙ কালো বলে কিছুতেই বিয়ে হচ্ছিল না,বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন কিছু খারাপ নয়,তবু য়তবারই মেয়ে দেখানো হয়,পাত্র পক্ষের পাত্রপক্ষের প্রায় সকলেরই এক কথা "দেনা পাওনার কথা নাহয় পরে হবে,কিন্তু মেয়ের গায়ের রঙ যে কালো। আমরা একটু ফসা' মেয়ে খুঁজছিলাম। পাত্র দেখতে দেখতে আর পাত্র পক্ষের সামনে বসতে বসতে বিরক্ত মেয়ে ঘোষণা করল সে বিয়ে করবে না,"তোমরা খাওয়াতে না পার,আমার ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নেব। " হ্যাঁ,একটা চাকরীও জুটিয়ে নিয়েছিল পরমা একটা সেবা সদনের চাকরী।চাকরীটা খুব পছন্দের ছিল তার, মন প্রাণ ঢেলে রুগীদের সেবা করত সে,রুগীরাও তার সেবায় আনন্দ পেত। পরমা ওয়া"ডে ঢুকলে খুশিতে অধে"ক অসুখ সেরে যেততাই ভালবেসে সবাই ওর নাম দিয়েছিল 'আলো
সেদিন বৈশাখী পূনি'মা,সকালের ডিউটি শেষ হওয়ার পরও কিছুক্ষণ থেকে রাত ন"টা নাগাদ বাড়ি ফিরল পরমা,জানলা দিয়ে জোৎস্নার আলো লুটোপুটি খাচ্ছে ওর খাটে,রাতে খাওয়ার পর চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে নানান ভাবনা নিয়ে খেলতে খেলতে ঘুমে চোখ জড়িয়ে এল তার ঘুমের মধ্যে সে দেখলো সএ একটা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ আর জলের সোহাগ দেখছে,একটা পরীর মত রূপালী মেয়ে, অনকটা পরমার মতই তার গড়ন,তার সঙ্গে এক রাজপুত্তুর, ঠিক যেন রূপকথার এক গল্প। গল্পটার মধ্যেই তলিয়ে যাচ্ছিল সে--হঠাৎ পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল , ওপারে পুরুষকন্ঠ "আমি আসছি" পরমা এতটাই অবাক হল যে কথা বলতেই ভুলে গেল,তখনো তার চোখ থেকে স্বপ্ন ধূয়ে যায়নি,পুরুষ কন্ঠ আবার বললো"তুমি আমাকে মনে রাখনি কিন্তু আমি তোমাকে ঠিক মনে রেখেছি।তখন আমি যে কথা বলতে পারিনি বেকার ছিলাম বলে, আজ সাহস করে সেই কথাটা বলবার অনুমতি চাইছি"পরমা কোনরকমে উচ্চারণ করল "হ্যাঁ বলুন" পুরুষ কন্ঠ বলল "আমি তোমাকে সম্মান দিয়ে ঘরে আনতে চাই" । পরমা পরম বিষ্ময়ে বলল "কিন্তু আমি যে কালো" ওপারের কন্ঠ বলল "না,তুমি আলো"। পরমা উঠে বসল চাঁদ ঢলে গেলেও আলোটা সরাসরি ওর মুখে এসে পড়েছে, দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ওর গালে,মনে মনে বলল-আমি কি সত্যিই আলো!