অনায়াস
হাল্কা
লাইলাক রংগের গোলাপের স্তূপ। গেটের দুপাশের লতানো গাছে ফুটে আছে।এত গোলাপ ! ঝরনার অজস্র জলের ধারার মত গাছকে ঢেকে ফেলে ফুটে আছে । মিষ্টি
গন্ধে রিমঝিম লাগে কাছে দাঁড়ালে । এই দেবতাত্মা হিমালয়। শুধু ফুল দেখলেও দিন কেটে
যাবে,ভাবে আরুনি।ঘাস ফুল থেকে শুরু করে লতায় পাতায়
ঝোপে ঝাড়ে গাছে,কি অপূর্ব ফুলের রাশি । কি উপচে পড়া
সৌন্দর্য। নিজের মনেই কটেজের বাউন্ডারি ধরে হেঁটে বেড়ায় শহুরে ইঞ্জিনিয়ার। নিজেকেই
জিগেস করে,কার জন্যে এত সৌন্দর্য ? এত জংগল । এ ফুল এমনি এমনিই ফুটে আছে। কলকাতায় হগ মার্কেটের দোকানে
সেলফোন জড়ানো এক একটি ফুল কত মহার্ঘ্য। হ্যাঁ।সেখানে ফুলের কদর বটে। অর্থ বিত্ত
সেলাম ঠোকে এক একটি লম্বা ডাঁটির পায়ে। সেখানে ফুল আভিজাত্য।ধনী মানুষ ছাড়া তার
দিকে হাত বাড়াতে দু বার ভাবতে হয় । অনাবিল পাহাড়িয়া আকাশ বাতাসে সব ছলা কলা মেকি
কাগজের পাতার মত ঝরে পড়ে যায়।এখানে সুন্দরী নিজের দাম উসুল করেনা চিবুক তুলে,বাঁকা ঠোঁটের অহমিকায়।ঝকঝকে নীল আলোর ছোঁয়ায় সবই তো সুন্দর । ওর জন্য
আলাদা কোন গরিমা নেই । অথচ অসাধারণ রূপ ছড়িয়ে রয়েছে চারিদিকে। আলতো করে কটেজের
বেড়ার বাইরে চোখ ফেরায় আরুনি। কাঠের বাড়ি । পাহাড়ের ধারে ধারে বেড়ে ওঠা দেবদারু
পাইনের ডাল কেটে তৈরি দেওয়াল। দুতলায় পর পর ঘর । সামনে বারান্দা । বাড়ির মাথায় ঢালু
ছাদ।পাহাড়ে পড়ে থাকা স্লেট পাথর দিয়ে করা।বর্ষার জল, শীতের
বরফ, দুইই গড়িয়ে পড়ে যায়। একতলার বারান্দায় তাঁতের মাকু
ওপর নীচে চলছে। রঙিন পশমের কারুকাজ নিয়ে বোনা হয়ে উঠছে শাল। পশ্চিমের রোদ এসে
পড়েছে রুকমিনীর মুখে। গোলাপী পশমে রোদ ছলকে,মাখনরংগা গালে
যেন ব্লাশারের আভা । কি রং ! কি টিকলো নাক । হরিন নয়নের
পরিশ্রমী মেয়ে সাদা ঝকঝকে মসৃণ দাঁতে হাসে আরুনির দিকে চেয়ে । ও জানেও না ও কত
সুন্দর। মাথাও ঘামায় না। শুধু ভালবাসার উত্তাপ দিয়ে জড়িয়ে রেখেছিল আরুনিকে কাল
সারা রাত ।
ওর বাবা, টুরিজম গেস্ট হাউসের কেয়ার টেকার।
কাল রানিক্ষেত গেছিল কটেজের গেস্টদের রান্নার কাঁচা বাজার আনতে। রাতে কটেজের বাইরে
সিগারেট খেতে আসা আরুনিকে দেখে সহজ হেসে হাত বাড়িয়েছিল মেয়েটা । আশ্চর্য এক
অভিজ্ঞতায় ডুবে গিয়েছিল আরুনি । ভিতরে বাইরে, মেয়েটা সমান
সুন্দর । রূপটানের প্রশ্ন ওঠেনা । আর প্রয়োজন ও নেই । স্বর্গীয় এই অভিজ্ঞতার গভীরে
তলিয়ে যেতে যেতে, কখন রাত ভোর হয়ে গেল।বালিশের পাশে রাখা
মোবাইলে সকালের আলার্ম বাজতে ধড়মড় করে উঠে পড়েছিল আরুনি। রাতে ত ঘরে ফেরাই
হয়নি।কেয়ারটেকার ফিরে এসে তাকে এখানে দেখলে মুশকিল হবে । এখন বিকেলে তাঁত চালানো
রুকমিনীকে দেখে আবার মুগ্ধ হল। তারপর পা চালাল ঘরের দিকে।প্যাকিং সেরে বেরিয়ে পড়তে
হবে । সৌন্দর্য সহজ হয়ে অজস্র ছড়িয়ে থাকলে, তাকে নাগরিক
মূল্য দেওয়া যায় না । রুকমিনীকে তো কলকাতার বন্ধু বান্ধবদের পার্টিতে "প্লেস " করা যাবেনা
কখনো ।