
পরম্পরা
ঝড়ের পরে চরাচর যেমন একটা স্তব্ধ, শান্ত রুপ ধারন করে, বাড়ীটার ও আজ তেমনি চেহারা। বিয়ে
চুকে যাবার পরে আত্মীয় বন্ধু বান্ধব যে যার জগতে ফিরে গেছে। তনুর শরীর আর চলছে না, মনে হচ্ছে শুয়ে থাকতে পারলে বেশ
হতো। একটা মেয়ের বিয়ের কম ঝক্কি? শিনার বিয়ের জন্যে দশ দিনের ছুটি শেষে অনীশ গতকালই অফিসে
জয়েন করেছে। গত পরশু দ্বিরা গমন শেষে মেয়ে জামাই ফিরে গেছে।আজ হানিমুনে সিঙ্গাপুরে
উড়ে গেছে। সারা বাড়ী কলকল করে রাখতো মেয়েটা, সেই ছোট্ট বেলা থেকে টরটরে। অনীশ কেও বলেছিল, আর দুই একদিন ছুটি বাড়িয়ে একটু
বিশ্রাম নিয়ে যেতে। তারও তো বয়েস হোল। আর বছর খানেক বাদেই অবসর চাকুরী থেকে। যদিও
নিজেই জানে- বিশ্রাম
নিতে চাইলেই কি উপায় আছে? এতো উপহারের জিনিষ কোথায় রাখবে
? মাথা ঝিমঝিম করছে তনুর। সংসার তো
নয়, এক পুতুল খেলা। গর্ভ ধারন করে বড়
করে পরের বাড়ী বিদায়। মেয়েকে বলেছিল তনু আর অনীশ, “তোর শ্বশুর বাড়ীতে এতো জায়গা, একটা ছোট ম্যাটাডর ভাড়া করে সব
গিফটের জিনিষ পাঠিয়ে দিচ্ছি”। কে শোনে কার কথা
? বলে গেল – আমার যত পুরনো জিনিষ, জামা কাপড় আছে, সব বাতিল করে দাও। আলমারিতে আর
জায়গা হয়? দুই আলমারি ভরতি। শিনার আলমারি টা
খুলতেই যেন ছোট্ট শিনা বের হয়ে এলো। একটা তাকে, ওর ছোটবেলার কিছু বাছাই করা জামা, দামী সোয়েটার সব রেখে দিয়েছিল তনু, মেয়ের ছোট বেলাকার স্মৃতি হিসেবে।
এই যে হলদে রঙের ফ্রিল দেওয়া ফ্রকটা। কি যত্ন করে তনু নিজের হাতে বানিয়েছিল মেয়ের
জন্যে। লাগতো ও বেশ একটা পরীর মতো শিনাকে, এক মাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে এই ফ্রকটা পড়ে যখন
বের হত পাড়ায়, সবাই আদর করত। এই টকটকে লাল
সোয়েটার টা?
সেবার দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে অনীশ
কিনেছিল আদরের দুলারীর জন্যে। ফেলে দেওয়া যায়? সব কিছুই যদি ফেলে দেওয়া যেত, তাহলেই হয়েছিল। ছোট্ট শিনার গন্ধ
সব কিছুতেই। সব কিছুর সাথেই যে স্মৃতির উষ্ণতা জড়িয়ে আছে
। তুইও বুঝবি, আর একটা ছোট্ট শিনা তোর পেটে এলে।
হুহ! বলে গেলো-বাতিল দাও।
এগুলো আমার এখন, কিচ্ছু বাতিল দেব না। হলদে ফ্রকটা
হাতে ধরা ছিল, কখন যে সেটা ঝাপসা হয়ে গেল, তনু বুঝতেই পারল না । এই শীতেও যেন তনুর দু চোখ জুড়ে আষাঢ়ের ধারা নেমে এলো। ।