গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়



ওরা চারজন
  
শিশির---

বাব্বা কি রাগ, যেন মেয়েদের দিকে তাকাতেই নেই! কে কে স্যরের ক্লাসে একবার মাত্র তাকিয়েছি, এমনিই তাকিয়েছিলাম। দেখি, বড় বড় চোখ করে আমার দিকে সে তাকিয়ে আছে।  আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আজ কপালে জুটবে কিছু। কিন্তু আমি ঠিক করেছি, আজ আমিও বলব। আচ্ছা, আমি নাহয় তাকিয়ে থাকি। কিন্তু  তুমিও না তাকালে বুঝবে কি করে মশাই, শুনি? তুমি তাকালে দোষ হয় না, আমি  তাকালেই দোষ!


জয়ন্তী---

এমন রাগ হয় না,মনে হয় চোখ দুটো অন্ধ করে দিই। অসভ্য একটা! যখনই তাকাও, দেখবে সে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। এ কি রে বাবা! ক্লাসে টিচার পড়াচ্ছেন, তখন কেউ  ওইভাবে তাকায়? কতবার বলেছি , সকলের সামনে  ক্লাসে...ঠিক নয়। শুনলে তো! কি, না যখন মন দিয়ে পড়া শুনি,তখন নাকি দেখতে আমায় ভাল লাগে। এটা কি একটা কথা হল,কি যেকরি!

অমিত---

ব্রততী মানে জয়ন্তীর বন্ধুটাকে খুব একটা খারাপ লাগে  না। শিশির বলে ঐ মেয়েটার নাকি আমার ওপর একটু ইয়ে আছা। তা থাকুক। কিন্তু মুশকিল হল,আমি শিশিরকে,কাউকে বলতে পারছি না, আমি জয়ন্তীকেই পছন্দ করি। শিশির কি জানে, বুঝতে পারে?  

ব্রততী---

অমিতটা মাঝে মাঝে এমন ক্যাবলামি করে, বিরক্ত লাগে। ভাল লাগে, তা বেশ তো বাপু, সেখানেই শেষ কর। তা নয়,আবার জয়ন্তী,শিশিরের সঙ্গে এখানেও আসা চাই,আড্ডা দেওয়া চাই। মুখের ওপর নাবলতে পারি না, কিন্তু মাঝে মাঝে বেশ বিরক্তই লাগে। কি করে বোঝাই, অমিতকে নয়, আমার শিশিরকেই বেশী ভাল  লাগে। শিশির কি জানে, অমিত কি বুঝতে পারে না!

(২)

জয়ন্তী---

এত রাত্রে শিশিরকে কি ফোন করাটা ঠিক হবে? শিশির কি ভাববে! আজ এমন কথা কাটাকাটি হয়ে গেল,খারাপ লাগছে। না হলেই ভাল হত। আমায় পছন্দ কর,  ভাল লাগে, বেশ কথা। কিন্তু তার জন্য সারাক্ষণ অমন হ্যাংলার মত তাকিয়ে থাকা কেন? ছিঃ, সবাই কি মনে করবে! এই সবাই কথাটাতেই ওর মাথা গরম হল। ভাল লাগতে দোষ নেই, সবাই জেনে যাবে,সবাই দেখবে, কি মনে করবে এটাই তাহলে দোষ?
কি করে বোঝাই, মেয়েরা কি অত স্পষ্ট হতে পারে ছেলেদের মত?  মেয়েরা স্পষ্ট হলে সেও তো দোষের! শিশির আজ রাগ করল, কিন্তু আমিই বা কি করতে পারি! কাল যদি না আসে কলেজে,কথা যদি না বলে...এখন একবার ফোন করব...?

 অমিত---

আজ কলেজে শিশিরের সঙ্গে জয়ন্তীর রাগারাগিটা ভাল লাগছিল না। কি একটা কথায় কথায় ঝগড়া হয়ে গেল। শিশির কি মনে করল! জয়ন্তীর ওভাবে বলা ঠিক হয়নি। তবে কি জয়ন্তী শিশিরের সঙ্গ পছন্দ করে না, শিশিরকে তার ভাল লাগে না! তবে কি জয়ন্তীকে বলব......না, আরও কয়েকটা দিন যাক্‌। আগে হাবভাব বুঝি, তারপর।

 ব্রততী

জয়ন্তী এমন রাগ দেখাল শিশিরের ওপর,যেন কতই না বিরক্ত! কোন মানে হয় না। শিশিরকে এভাবে বলার কি দরকার ছিল। বেচারা শিশির! আমাদের সামনে কি রকম লজ্জ্বায় পড়ে গেল, আমার এতো খারাপ লাগছিল শিশিরের জন্য। শিশিরকে  যদি ভালই লাগে, অমন করার কি আছে! একটু যদি তাকায়ই তোর দিকে,অত খেপে যাবার কি হল! আমার দিকে তাকালে আমি কিচ্ছুটি মনে করতাম না। তবে কি জয়ন্তীর শিশিরের প্রতি কোন ভালবাসা নেই ...দেখাই যাক্‌ না,কোথাকার জল  কোথায় যায়!
  
শিশির

কেন যে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না, আজ ক্যান্টিনে শুধু শুধু জয়ন্তীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হল! আমিই রাগারাগি করে ফেললাম। জয়ন্তী কি একটা বলল, আমার রাগ হয়ে গেল। আসলে খুনসুটি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু রেগে গেলাম। দোষটা আমারই, মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলাম। সকলের সামনে ওরও নিশ্চয়ই খারাপ লেগেছে, কাল মাপ চেয়ে নেব। এতো খারাপ লাগছে!
কে আবার ফোন করল...একি! এই নম্বর তো জয়ন্তীর...এত রাতে...হ্যালো... !