গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কাজী লাবণ্য


 দ্বৈরথ


 

অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত যে আঁধার, উদ্ভাসিত যে আভা, সেই আভা বা আলো আঁধারির মধ্য দিয়ে, মহাকাশের বুক চিরে অসম্ভব দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে- বিশাল জাম্বো জেট। পেছনে ফেলে এসেছি জন্মভূমি, স্বদেশ। যাত্রী ক্রু মিলে প্রায় ৪ শত মানুষ নিজ নিজ সিটে দীর্ঘ যাত্রায় কারো চোখ সামনের নীলাভ স্ক্রিনে থাকলেও বেশীরভাগই ঝিমুচ্ছে বা ঘুমুচ্ছে। কেবিন ভর্তি শ্রান্তির ঘুম। আকাশে আধ খানা চাঁদ ঝলমলে আনন্দে নরম আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে অবিরাম।  কেবল ঘুমের লেশমাত্র নেই, আমার দু চোখে। আমি সজাগ, সম্পূর্ণ সজাগ। পাশের সিটেই আমার ৪ বছরের সন্তান, আমার স্বামী নিশ্চিন্ত গভীর ঘুমে অচেতন। হয়তোবা সে জানে আমিও ঘুমাচ্ছি। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। ঘুম নেই আজ কয়েক দিন ধরেই। হয়ত আরো অনেক দিন আমি ঘুমুতে পারব না।   

এক মাস আগে ঠিক এই দিনেই আমি দেশে এসেছিলাম, আবার ঠিক এই দিনেই আমি স্বামী- সন্তান নিয়ে ফিরে যাচ্ছি, পরবাসের নিজ ঠিকানায়। ইচ্ছে করলে, ছুটি আরো কিছুদিন বাড়ানো যেত, থাকা যেত আরো কিছুদিন। প্রতিবার যেমন বাড়তি ২/১ সপ্তাহ থাকা হয়। কিন্তু এবারে থাকতে ইচ্ছে করল না। তা ছাড়া কেউ এবার থাকার জন্য চোখে আকুতি নিয়ে চেয়ে থাকেনি। বাড়তি দিন থাকার ঘোষণায় কারো মুখ এবার অপার আনন্দে বাচ্চাদের মত আনন্দিত হয়ে উঠেনি।

প্রতি বছর যেমন আসি, ঠিক এবারো আমরা ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। সব কিছুই আগের মত স্বাভাবিক, বা গতানুগতিক ছিল। কোন অস্বাভাবিকতা ছিল না। কিন্তু অনেক বড় ধরনের, ভয়াবহরকম অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে গেল। ঘটল আমার উপস্থিতিতে, বলা যায় আমার সামনেই।

 
(২)

সেদিন ছিল আমরা আসার ২০তম দিন। আসার পর থেকেই বরাবরের মতই-  খাওয়া, বেড়ানো, গল্প, আড্ডা সব কিছুই পুরোদমে চলছিল। যেমন চলে। সকল আত্মীয়, কাজিন, বন্ধু, সবাই আসছে আমরা যাচ্ছি... কেবল একজন প্রকৃত ব্যস্ততা কিংবা ব্যস্ততার অজুহাতে বরাবরের মতই দূরে সরে রইল। 

আমার শ্বশুর বাড়ির উনারা সবাই একেকদিন আসছেন, আবার আমরা সবাই উনাদের ওখানে যাচ্ছি, আমরা সেখানে কয়েকদিন থেকেও এসেছি।  
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর আমরা সবাই শুয়ে পড়েছি। মা আমার বাবুকে ঘুম পাড়িয়েছে। সে নানুমা ছাড়া কারো কাছে কিছু করেনা। খাওয়া, ঘুম, গোসল, কাপড় পরা, গল্প শোনা সবকিছু। আর মা তো এটার জন্যই অধীর অপেক্ষায় আক্ষরিক অর্থেই দিন গোনে।

আমি বাবামার একমাত্র সন্তান। এখানে বাবামা না বলে অনায়াসে বলা যায় আমি আমার মায়ের সন্তান। জন্মের পর থেকেই আমি আমার বাবা মাকে কখনও স্বাভাবিক সম্পর্কের মাঝে দেখিনি। বড় হবার পর জানতে পেরেছিলাম, বাবা বিয়ের সময় আমার নানুর কাছ থেকে গোপনে যৌতুক নিয়েছিল। তাদের শর্তই ছিল এই গোপনীয়তা যেন বজায় থাকে। কিন্তু সেই যৌতুকের কথা কিভাবে যেন প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল, আর সেটাই ছিল আমার মায়ের অসীম অপরাধ। এবং অপরাধ না করে আমার মা সারা জীবন অপরাধী হয়েই আমার জন্মদাতার সংসারে অপাংতেয় হয়ে ছিল। আর আমার জন্মদাতা তার ভ্রাতার সংসারে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল।   
মা নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে আমাকে বড় করে, লেখাপড়া শেখায়। বাবা মায়ের আইনত সেপারেশন হয়নি কিন্তু কোনদিন তারা স্বাভাবিক যাপনও করেনি। বাবা আমার ব্যাপারেও ছিল নির্লিপ্ত। বিয়ের পর আমি দেশের বাইরে চলে যাই। মা সারাজীবন একা ছিল, আমি যাবার পর আরো বেশি একা, একেবারে চরম নিঃসঙ্গ হয়ে পরে। বৈধব্যের মতো খাঁ খাঁ হয়ে যায় তাঁর যাপন। তবু ভাল থাকার চেষ্টা করত অবিরাম, অক্লান্ত উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটত। গাছ, বাগান, সঙ্গীত, আর প্রচুর বই, এই নিয়ে কাটিয়ে দিত নিজ দিনলিপি। ভিডিও কলে সব সময় আমার সাথে যোগাযোগ করলেও আমি বুঝতাম, মাঝে মাঝেই মা আর পেরে উঠত না। প্রতিকূল স্রোতে সাঁতরানো তো সহজ কথা নয়। মা মাঝে মাঝে উদ্যম হারিয়ে ফেলত। দূর থেকে আমি মাকে স্টিমুলেট করতাম। মা ঝড়জলের মাঝে চলতে চলতে আছাড় খেতে খেতে ফুলের মাঝে, সুরের মাঝে, সৃষ্ট আপন ভাবনার মাঝে খুঁজে নিত তাঁর আবশ্যক চালিকাশক্তি। জীবনের সমস্ত প্রত্যাশা বিসর্জন দিয়ে একাকীত্বের ভেতর আনন্দ খুঁজে শান্ত হয়ে বাঁচত। ঈদ বা বিভিন্ন পর্বের দিনগুলোতে ল্যাপটপের পর্দায় দেখতাম আমার মায়ের পরিপাটি গুছানো ঘরদোর। গাছপালা। মা পুষতেন যে মেয়েদুটিকে ওরাও নতুন ড্রেসে সেজেগুজে থাকত। খাবার দাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে রাখত। হাজার হাজার মাইল দূরে থাকত বন্ধু, বা একমাত্র সন্তান। স্বামী নামক মানুষটি থাকত তার ভ্রাতা ও ভ্রাতৃবধূর সংসারে, ফাঁকা বাসায় মা আমার সমস্ত কালো অধ্যায়কে কোঁত কোঁত গিলে ফেলে হাসিমুখে ঈদ উদযাপন করত।
   
কিন্তু মাথার উপর কেউ যদি সিসিফাসের পাথরের মতো ক্লান্তিহীন পেরেক ঠুকেই যায়, আর কাঁহাতক পারা যায়! তাইবলে মা এমন করবে আমার কল্পনাতেও আসেনা। নিজে উপস্থিত না থাকলে হয়ত বিশ্বাসও করতাম না। আদতেই কি বিশ্বাস করছি! একি বিশ্বাস করা যায়!
  

সকালবেলা বাবা আমার দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকছিল। আধো ঘুম আধো জাগরণে আমার অবাক লাগছিল যে হঠাত কি এমন হলো যে বাবা এমন ভূমিকম্পের মতো দরজা কপাট ভেঙে ফেলছে! দ্রুত ওঠে দরজা খুলে বাইরে এলে বাবা আমার হাত ধরে, টেনে মায়ের ঘরের দিকে লম্বা পা ফেলে হাঁটতে থাকে। মায়ের ঘরে ঢুকে আমি হতভম্ভ হয়ে যাই, মায়ের বিছানার পাশে রাজ্জাক আংকেল বসা। মানে বাবার ডাঃ বন্ধু, আমাদের পারিবারিক চিকিৎসকও বলা যায়। আংকেল ওঠে এসে আমাকে ধরলেন আমি ঘুম ঘুম বোকা চোখে আংকেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমাকে মায়ের পাশে বসিয়ে দিলেন। একটা চাদর মায়ের মুখ পর্যন্ত টানা কেবল কপালটুকু দেখা যাচ্ছে। আংকেল বলে উঠলেন- 

-“৫/৬ ঘন্টা আগেই তোমার মা চলে গেছেন। এইগুলো পাওয়া গেছে, হাতে কতকগুলো ট্যাবলেটের ফয়েল পাতা। কিন্তু এসব আর মানুষজনকে জানানোর দরকার নাই, ‘হার্ট এটাক’ বললেই হবে”। 
যেন রেডিও বা টিভিতে ঘোষিত হচ্ছে একটা নির্লিপ্ত ঘোষণা কিংবা শোক সংবাদ। ঘোষণার সবটা আমার কানে ঢুকলো না, মাথায় তো নয়ই, একদম ভাবলেশহীন, কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থা, কেন যেন চোখ চলে গেল দেয়াল ঘড়িটার দিকে সকাল পৌণে দশটা। চোখ এসে স্থির হলো বাবার মুখের উপর, বাবা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। এরপরে আমি নাকি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।

 

(৩)

বাড়ী ভরে গেল আত্মীয় স্বজনে। সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। শোক দুঃখ বা আঘাতের চেয়ে আমার হতবিহবলতা কাটছিলনা, অবিশ্বাস যাচ্ছিলনা। আমি কথা হারিয়ে ফেলেছি, কথারা কোথায় কোন দূর পাহাড়ের বরফ ঢাকা চুড়ায় আটকে গেছে। সেই না গলা বরফের কাঠিন্য পেরুনো বড় শক্ত ব্যাপার।    
কিছু প্রশ্ন আমাকে জর্জরিত করছিল, বার বার বাবার দিকে ঠেলছিল। কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই আমার, কিন্তু সেই আজীবনের মতো আমি তাকে যেন কোন প্রশ্ন তো দূরের কথা, কথা বলারও সুযোগ না পাই সেভাবেই সে ঘর, বাহির, শোক এবং মৃত্যু বাড়ির কাজ কর্মে অধিক ব্যস্ত রইল। সবার কাছে খবর গেল মা ঘুমের মাঝে হার্ট এটাকে মারা গেছেন।
 
-‘যাক খুব ভালো মৃত্যু হয়েছে, নিজে ভুগল না, কাউকে ভোগালো না’...
 
-‘তাও ভালো সন্তান এসেছিল, একমাত্র সন্তানকে শেষ দেখা দেখতে পেল’...
 
-‘মেয়েটা আর কার কাছে আসবে, এসো মা আমরা আছি এসো’...
 
-‘মা, কোরআন তেলাওয়াত কর, চোখের পানি ফেলো না’...
 
-‘তোমার মায়ের সমস্ত ছবি নষ্ট করে ফেলো। মন খারাপ করনা, সবাইকে মরতে হবে’...
 
-‘বাব্বাহ, ভাবীর কপাল ভালো, পিংকির বাবা ওর মায়ের কূলখানি কি মহা ধুমধামে সারল’...
   

এসবই কদিন ধরে শুনতে শুনতে বড় ক্লান্ত লাগছিল। আর ভালো লাগছিল না। একটু নিরিবিলি চাচ্ছিলাম, বাবার সাথে বসা আর হবে না, তা বুঝে গিয়েছি। সে না চাইলে হবে কি করে! বসার আর সুযোগ বা মানসিক অবস্থা কোনটাই যখন নেই, সিদ্ধান্ত নিলাম ফিরে যাবার।  
আমি জানতাম, আমি খুব ভালো করে জানতাম আমার মায়ের বৈশিষ্ট্য। মা বিশ্বাস করত-
 
জীবন, সব কিছুর পরেও এক মহার্ঘ দান, এই আকাশ, এই মাটি, কাদা ধুলোর এই পৃথিবী একদিন আগে হলেও ছাড়তে চায় না মানুষ। আর মা! মাও চাইত না। মায়ের ঘরভর্তি বই। এইযে, শিওরের কাছে এখনও ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’ মার প্রিয় লেখক দস্তয়ভস্কির লেখা। সে লেখকের জীবন ছিল অভাব অনটন, ব্যাধিতে ভরা। একবার তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবার পর ফায়ারিং স্কোয়াডেও দাঁড়ান। কিন্তু গুলি চালানোর ঠিক আগ মুহূর্তে খবর আসে জার তাঁর দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন, নানাবিধ দুঃখকষ্ট যন্ত্রণায়ও তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেননি।
 
তাছাড়া মা কি নিজের জন্য বাঁচত! নিজের জন্য যতটা না, তার চেয়ে অধিক বাঁচত মা আমার জন্য, আমাদের জন্য। এরপরে যোগ হয়েছিল মায়ের আদরের ধন নাতি।
   
বাবা দ্রুত ডাঃ ডেকে এনে হার্ট এটাকের প্রচার করেছিল। পাওয়ারফুল ঘুমের ট্যাবলেটের পাতাগুলি সব খালি ছিল।
 
আমার লড়াকু মা, যার বিয়ে হয়েছিল কম বয়সেই, যে সারাজীবন কঠিন লড়াই করে বেঁচে থেকে আমাকে বাঁচিয়েছে,
  পরিবার, আত্মীয় পরিজনকে ঝামেলা থেকে রেহাই দিয়েছে, শেষে এসে সে এই করবে! এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে! আমি কাকে জিজ্ঞেস করি! কার সাথে একটু আলোচনা করি! 
শেষ যাত্রায় মার ঠোঁটে কী অবাক করা এক টুকরো হাসি লেগে ছিল! কেমন যেন এক শ্লেষের হাসি!
 
মা! মাগো! এটা কি হলো মা! এ কোন অতল গহ্বরে আমি নিক্ষেপিত হলাম মা! তুমি কোথায় গেলে মা!
 
   

মার সব কাজ হয়ে গেলে আমি একদিন বাবার ঘরে গিয়ে বসলাম। কথা বলতে চাইলাম। কাজের অজুহাত দিয়ে, আমাকে অতল গহ্বরে একা রেখে সে বাইরে চলে গেল।

মার ঘরে মায়ের বিছানায় বসে একটু ভাবতে লাগলাম- 
-বাবা কখন টের পেল? কটায়? বাবা কেন মায়ের ঘরে গিয়েছিল? সেতো কখনও যায় না।
 
-ঘটনা বোঝার পর বাবা আমাদের কাউকে না জাগিয়ে আগে ডাঃ আংকেলকে আনালো!
 
-সকালে উঠে কি রান্না হবে, তার আদরের নাতী কি খাবে তাও মা প্রসেসিং করে রেখেছিল।
 
-আমরা বেড়াতে যাব সে পরিকল্পনা করা ছিল। সাথে কি কি খাবার নেয়া হবে সেসবও ঠিক করা ছিল।

তাহলে!

রাজ্জাক আংকেলের নিজের কোন সংসার নেই। বলা যায় বাউন্ডুলে এক ছন্নছাড়া জীবন। একজন নার্সের সাথে লিভ টুগেদার করেন। বাবাকে কিছুদিন ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছেন। বাবাও কি কোন নার্স কিংবা আর কাউকে খুঁজে পেয়েছে! পেলে পাবে। মাকে সরাতে হবে কেন! হ্যাঁ হবে কারণ আমার বাবা চিরজীবন এক ধরনের মহান সাজার চেষ্টায় রত। সকলের কাছে সে মহৎ হতে চায়। তখন মানুষ তথা সমাজ তার ২য় বিয়েকে সাদরে গ্রহন করবে। আসলে এসবের নেপথ্যে আছে লম্পট রাজ্জাক আংকেল।  
 
প্রকৃত ঘটনার নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে আমি একটা উপসংহারে পৌঁছুতে চাইলাম।

হার্ট এটাকে বা কড়া ঘুমের ট্যাবলেটে মা যায়নি। মা গেছে অন্যভাবে। ট্যাবলেটের পাতা যেন আমার হাতে আসে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি যেন বিশ্বাস করি, মা নিজেই নিজেকে শেষ করেছে। আবার সমাজের জন্য রটানো হয়েছে হার্ট এ্যাটাক। আমার উপস্থিতিতে সব ঘটনা সাজানো হয়েছে যাতে আমি কোন সন্দেহ করতে না পারি।  
আদতেও আমি কেবল উপলব্ধিই করতে পারছি, কিন্তু কোন ব্লেইম আনতে পারছি না। ব্লেইম আনতে হলে সলিড প্রমাণ দরকার। আমি অনেকদিন ধরে দেশের বাইরে থাকি। ব্লেইম আনলেও আমি কি পারব তা প্রমাণ করতে! কিভাবে! আমি তার সন্তান আমি জানি সে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েই একাজ সম্পন্ন করেছে।
   
মা সব সময় বলত-
 
সমাজে পুরুষ মানুষদের হাত অনেক লম্বা, তাদের অনেক ক্ষমতা, সে ক্ষমতা আরো বেড়ে যায় যদি পর্যাপ্ত অর্থ আর চেয়ার থাকে। যা আমার জন্মদাতার আছে।
 
তাইবলে এখানেই সব শেষ হয়ে যাবে! এমন ঘটনা নির্বিঘ্নে চাপা পড়ে যাবে! সেও কি হয়!
 
আমি আসব। আমি আবার ফিরে আসব। দাঁড়াব তার মুখোমুখি। দেখব তার কত ক্ষমতা! দেখতে চাই তার হাত কতটা লম্বা! মা, আমি পারব তো মা!
 
 
আমার সন্তান পাশ ফিরে একটু শব্দ করে নিচের ঠোঁট বাঁকাচ্ছে, হয়ত সে কোন স্বপ্ন দেখছে। হাত বাড়িয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
 
বুকের অনেক গভীর থেকে সমুদ্র মন্থনের মতো এক হাহাকার আমাকে গ্রাস করে নিলো।