প্রেমিক
বাসে উঠেই একটা লোক এক সুন্দরী মহিলার পিছনে দাঁড়ালো।বাসে বেশ ভিড়।
এই লোকাল বাসগুলো একদম, যাকে বলে নড়বড়ে। খাটালা বাস দুলতে দুলতে চলেছে। লোকটি আরামসে
পিছনে দাঁড়িয়ে । কোনরকমে ব্যালেন্স রেখে দাঁড়িয়ে আছেন।
বাসের কুড়ি জোড়া চোখ
কমপক্ষে নজর রাখছে।
মহিলাটি গর্জে উঠলেন,সকালে উঠেই গাঁজা সেবন করেছেন মনে
হয়। একটু সরে দাঁড়ান। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুন। লোকটি সরে দাঁড়াল। কিন্তু ব্যালেন্স
রাখতে পারছেন না ভিড়ে।
আমি দূরে ছিলাম। বুঝলাম,লোকটার কপালে কষ্ট আছে।
একটা বছর চল্লিশের যাত্রী লোকটাকে বললো, দু কান কাটা আপনার। সরে দাঁড়ান।
তা না হলে এক ঘা নিচে পড়বে না। সাবধান। এইসব যাত্রীরা সিন ক্রিয়েট জন্য ছুটে যায় ।কিন্তু
প্রয়োজনে হাওয়ার মত মিলিয়ে যায়।
হঠাৎ মহিলাটি ঘুরে দাঁড়িয়ে লোকটার গালে সপাটে এক চড় মারলেন। লোকটি চড়
খেয়ে গালে হাত রেখে বসে পড়লেন।
মহিলাটি একটু অবাক হলেন। মহিলাটি দেখলেন লোকটি দুহাতে সব্জী ভরতি
একটা ব্যাগ ধরে আছেন।
লোকটি কোনো প্রতিবাদ
করলেন না কেন
আমি ভাবলাম, কি হলো উনি
বসে পড়লেন কেন?
বছর পঁচিশের একটি ছেলে এগিয়ে গিয়ে বললো,বসে কেন? উঠে বসুন। যান নেমে যান। না হলে দেবো আর এক চড়। বদমাশ কোথাকার।
আরও পাঁচজন কন্ডাকটরকে ডাকলেন।অভিযোগ করলেন বসে থাকা লোকটার বিরুদ্ধে।
কনডাক্টর ভাড়া নিতে এলেন। সবাই ভাড়া দিলেন। কিন্তু লোকটি বসে আছে। কন্ডাকটর
ভাড়া নিলেন না তার কাছে। একটা সিট খালি হলে বসিয়ে দিলেন আদরে।
মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,ভাই
ওনার ভাড়া নিলেন না কেন?
কন্ডাকটর বললেন, আপনি চড় মারলেন দেখলাম। কিন্তু যাকে মারলেন সে দেখতে
পায় না, আপনার আমার মত। কথাও বলতে পারেন না। তবু উনি ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করে একটা অনাথ
সেবাশ্রম চালান। মিথ্যে কথা মনে হচ্ছে নয়? সাজানো গল্পের মত মনে হচ্ছে, তাই না?
এক ভদ্রলোক বললেন, না না। সত্যিকথা আমিও জানি। আমি দেখলে ওনাকে বাধা
দিতাম চড় মারার সময়।
মহিলাটি হঠাৎ করে কেঁদে ফেললেন। বাসের মধ্যে একটা থমথমে পরিবেশ। অন্ধ সমাজসেবী
চুপচাপ নেমে গেলেন বাস থেকে। তার,যে অনেক কাজ। তারপর দুটো স্টপেজের পরে আমিও নিচে নেমে
ভাবলাম, নিঃশব্দে বিবেকের চড়টা, মহিলার গালে বেশ জোরেই লেগেছে। তা না হলে উনি কাঁদবেন
কেন?অন্ধলোকটি সত্যিকারের মানব প্রেমিক।
বেশ ভাল লাগল ভেবে যে, সব পুরুষ ভন্ড,অসভ্য হয় না। কেউ কেউ প্রেমিকও
হন...