পদ্মার ইলিশ
মাছের থলেতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ধাঙ্গিনী ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, মাছের থলি ফাঁকা কেন ? মাছ পাওনি ? নাকি সব টাকা সবজীর পিছনে ঢেলে এসেছো ?
আমতা আমতা করে বললাম, তা নয় গো । আসলে অনেককাল বাদে আজই বাজারে দেখা
হয়ে গেল আমার এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে । জানো ও নিজেও একজন বাজারি ? বন্ধুটি আমাকে বললো...
- তোমার বাজারি বন্ধু
? কি নাম তাঁর ? আগে শুনেছি কখনো ?
- নাহ্ বলিনি তোমাকে । অনেক বছর যোগাযোগ নেই বলে ওকে প্রায় ভুলেই গেছিলাম
। ওর নাম ‘মাছের ঝাঁকা’ ।
- এ আবার কেমন নাম ?
মসকরা করছো আমার সঙ্গে ?
- মসকরা করবো কেন ?
- এমন একটা নাম যে কারও থাকতে পারে, জানা ছিলো না আমার । কেন বাপু,
বঙ্গে মাছের আকাল হতে শুনেছি, তা’বলে নামেরও আকাল পড়েছে সেকথা তো জন্মেও শুনিনি !
- আমি কি তাই বলেছি
? ওকে ওই নাম আমরা বন্ধুরা দিয়েছি ।
- তোমরা দিয়েছো ! কেন
? বন্ধুটির আসল নাম কি ?
- অমল, না অমলেশ…ধুস্ আমিও ভুলে গেছি ওর আসল নাম কি ছিলো । ওকে কি আজ থেকে
ডাকছি ওই নামে ?
- কবে থেকে ডাকছো ?
- সেই খেলার মাঠ থেকে । খেলতে এসে রোজই নিদেনপক্ষে গোটা পাঁচেক মাছের
নাম করে বলতো, এইমাত্র খেয়ে এলাম এতোগুলো ভাজামাছ ।
- নিশ্চয়ই খুব বড়লোকের
ব্যাটা ছিলো, বলো ?
- ধুস, ওর বাবা তো বাগালি করতো । সামান্য নুন-ভাতটুকুও রোজ জুটতো কিনা
কে জানে । সেই বাড়ির ছেলের মুখে রোজই শতেক মাছের নাম শুনতে শুনতে... ও কিন্তু এখুনি
এসে পড়বে ।
বলতে বলতেই মাছের ঝাঁকার গলা ভেসে এলো বাইরে থেকে, সুধাংশু বাড়ি আছো
নাকি ? বলেছিলাম না আসবো ? এসে গেলাম ভাই ।
দরজা খুলতেই বন্ধুটি ভিতরে ঢুকে এসে আঁশটে গন্ধে ঘর ভরিয়ে দিয়ে এক গাল
হেসে অর্ধাঙ্গিনীকে ডেকে বললো, ধরুন বৌদি, খোদ পদ্মার ইলিশ । আজই এসে ঢুকেছে আমার আড়তে
।
অর্ধাঙ্গিনী অবাক চোখে তাকালেন আমার দিকে । আমতা আমতা করে বললাম, তোমাকে
বলতেই যাচ্ছিলাম, এই শহরের সবচেয়ে বড় মাছের আড়তের মালিক । আমার এই বাল্যবন্ধুটির নাম...
বাল্যবন্ধু নিজেই কথাটা
সম্পূর্ণ করলো, মাছের ঝাঁকা । হেঁহেঁহেঁ ।