গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সুধাংশু চক্রবর্তী


 পদ্মার ইলিশ


 

মাছের থলেতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ধাঙ্গিনী ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, মাছের থলি ফাঁকা কেন ? মাছ পাওনি ? নাকি সব টাকা সবজীর পিছনে ঢেলে এসেছো ?

 

আমতা আমতা করে বললাম, তা নয় গো । আসলে অনেককাল বাদে আজই বাজারে দেখা হয়ে গেল আমার এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে । জানো ও নিজেও একজন বাজারি ? বন্ধুটি আমাকে বললো...   

- তোমার বাজারি বন্ধু ? কি নাম তাঁর ? আগে শুনেছি কখনো ?

- নাহ্‌ বলিনি তোমাকে । অনেক বছর যোগাযোগ নেই বলে ওকে প্রায় ভুলেই গেছিলাম । ওর নাম ‘মাছের ঝাঁকা’ ।

- এ আবার কেমন নাম ? মসকরা করছো আমার সঙ্গে ?

- মসকরা করবো কেন ?  

- এমন একটা নাম যে কারও থাকতে পারে, জানা ছিলো না আমার । কেন বাপু, বঙ্গে মাছের আকাল হতে শুনেছি, তা’বলে নামেরও আকাল পড়েছে সেকথা তো জন্মেও শুনিনি !    

- আমি কি তাই বলেছি ? ওকে ওই নাম আমরা বন্ধুরা দিয়েছি ।

- তোমরা দিয়েছো ! কেন ? বন্ধুটির আসল নাম কি ?

- অমল, না অমলেশধুস্‌ আমিও ভুলে গেছি ওর আসল নাম কি ছিলো । ওকে কি আজ থেকে ডাকছি ওই নামে ?

- কবে থেকে ডাকছো ?

- সেই খেলার মাঠ থেকে । খেলতে এসে রোজই নিদেনপক্ষে গোটা পাঁচেক মাছের নাম করে বলতো, এইমাত্র খেয়ে এলাম এতোগুলো ভাজামাছ ।

- নিশ্চয়ই খুব বড়লোকের ব্যাটা ছিলো, বলো ?

- ধুস, ওর বাবা তো বাগালি করতো । সামান্য নুন-ভাতটুকুও রোজ জুটতো কিনা কে জানে । সেই বাড়ির ছেলের মুখে রোজই শতেক মাছের নাম শুনতে শুনতে... ও কিন্তু এখুনি এসে পড়বে ।

 

বলতে বলতেই মাছের ঝাঁকার গলা ভেসে এলো বাইরে থেকে, সুধাংশু বাড়ি আছো নাকি ? বলেছিলাম না আসবো ? এসে গেলাম ভাই ।

 

দরজা খুলতেই বন্ধুটি ভিতরে ঢুকে এসে আঁশটে গন্ধে ঘর ভরিয়ে দিয়ে এক গাল হেসে অর্ধাঙ্গিনীকে ডেকে বললো, ধরুন বৌদি, খোদ পদ্মার ইলিশ । আজই এসে ঢুকেছে আমার আড়তে ।

 

অর্ধাঙ্গিনী অবাক চোখে তাকালেন আমার দিকে । আমতা আমতা করে বললাম, তোমাকে বলতেই যাচ্ছিলাম, এই শহরের সবচেয়ে বড় মাছের আড়তের মালিক । আমার এই বাল্যবন্ধুটির নাম...

 

বাল্যবন্ধু নিজেই কথাটা সম্পূর্ণ করলো, মাছের ঝাঁকা । হেঁহেঁহেঁ ।