আজ বুবাইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে l বুবাই আমার একমাত্র সন্তান
l আজ পাঁচ বছর হল জুরিচ, সুইজারল্যান্ডে সফটওয়্যার ডেভেলপর হিসেবে কাজ করছে এক নামি
কোম্পানিতে l ওখানেই এক সুইস মহিলাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে l বুবাইকে দেখতে খুব হ্যান্ডসাম
আর সুইজাল্যান্ডের মহিলারা দেখতে সুন্দর হয় সবাই জানে l কিন্তু
তাতে আমার কি? জাত খুইয়ে কেউ বিদেশিনীকে বিয়ে করে?
ও বিয়েতে আমাদের দুজনের কোন মত ছিলনা l তারপর থেকে ও সপ্তাহে একদিন কথা বলার সময় পেত কিন্তু পরে সেটাও প্রায় বন্ধ হয়েগেলো l কখনো কখনো বাড়ির কথা মনে পড়লে ওদিকথেকে রাতে ফোন আসতো l
বুবাইয়ের পড়ার খরচ জোগাড়
করতে আমার বেশ কষ্ট হয়েছে l ইঞ্জিনিয়ারিং এর পর এম. বি. এ. করলো l বিশাল খরচ l প্রভিডেন্ট
ফান্ড প্রায় ফাঁকা l বন্ধুরা আমার কলিগরা বলতো একি করছিস বুড়ো হলে খাবি কি?
আমি হেঁসে বলতাম ও টাকা
ওর পড়ার জন্য খরচ হলে আমি অনেক শান্তি পাব l ঐ তো আমার সব l ওর জন্য খরচ না করে ঐ টাকা
রেখে আমার লাভ কি?
কিন্তু আমার প্রতি কারুর
সহানুভূতি আমি পাইনি এক প্রতারণা আর অপমান ছাড়া l না ভেবে কি হবে মানুষ তার কর্তব্য
করে যাবে ফল ভগবান দেবেন l এটাই কাম্য l
বুবাই সুইজারল্যান্ডে
গিয়ে অনেক টাকা রোজগার করছে কিন্তু মনুষত্য হারাচ্ছে l আমি ছেলেটার কথা ভেবে পাইনা
l আমি আমার জন্য চিন্তিত নই আমার পেনশন যা পাই যথেষ্ট l আমার যা জমা টাকা আছে তা আমাদের
বুড়ো বুড়ির জন্য যথেষ্ট l রোগ ব্যাধি হলে মেডিক্লেম আছে l আমি ওর কাছ থেকে এক পয়সাও
আশা করিনা l কিন্তু ছেলেটা ঐ বিদেশিনীকে বিয়ে করে এ কি করলো? ওরা খুব সাংঘাতিক হয় শুনেছি
l কি হবে শেষে জানিনা l
আজ খবর এলো বুবাই ফিরে
আসছে কোলকাতায় l আমার খুশির শেষ নেই l ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে l পৈতৃক বাড়িতে আমি আর আমার
ছোট ভাইয়ের পরিবার l পাড়ার ছেলেরা বুবাইয়ের বৌকে দেখবে বলে সব ক্যামেরা ফোন নিয়ে এসেছে
l ওদের সঙ্গে সেলফি তুলবে বলে l বুবাই এয়ার পোর্ট থেকে একটা ওলা করে বাড়ি এলো l ট্যাক্সথেকে
একা নামলো l সঙ্গে কেউ নেই l বুবাইকে দেখে চিনতে পারলামনা l
আমি বললাম কিরে বৌমা?
- আমাদের ডিভোর্স হয়ে
গিয়েছে l আমার সব টাকা কম্পেন্সেশনে খরচ হয়ে গিয়েছে l আমি নিঃস্ব বাবা বলে আমার পায়ের
ওপর মাথা রেখে কাঁদে l
- আমি ওকে দু হাতে তুলে
ধরি l আমার মুখ থেকে শুধু একটাই কথা... কিছু চিন্তা করিসনা আমি আছিতো বেঁচে!!