বিশু খুড়ো
আজ বিশু খুড়ো কে খুব মনে পড়ছে l আজ ওনার জন্মদিন l ওনার পুরো নাম বিশ্বভূষণ ভট্টাচার্জী l আমরা বিশু খুড়ো বলেই ডাকি l বিশু খুড়ো বিপত্নীক l বয়েস 78 হল এখন চোখে ভালো দেখতে পারেন না l তাই মেজাজটা সর্বদা খিট খিটে l অবসরের পরে আরো খিট খিটে হয়ে গিয়েছেন l ঘরে মানুষ জন বলতে উনি আর ওনার এক নাতি l সে মাঝে মধ্যে দাদুর কাছে আসে কিন্তু পরক্ষনেই ফিরে যায় নিজ গৃহে l
বিশু খুড়ো মানুষটা ভালো l কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি
করতেন l একাউন্টস অফিসার হয়ে রিটায়ার করেন l রিটায়ারমেন্টের পর কলকাতায় একটা ছোট টু রুমের ফ্ল্যাট
কিনে সেখানেই থাকেন l পেনশনের টাকায় ভালোই চলে উপরন্তু অবসর সময়ে
সাহিত্য চর্চা চুটিয়ে করেন l অনেক ভালো ভালো কবিতা উনি উপহার দিয়েছেন সংগে রাজনৈতিক
পর্যালোচনা, নাট্য সমালোচনা,গল্প উপন্যাস ইত্যাদি অনেক লেখা পরিবেষণ করে সুনাম অর্জন
করেছেন l সুদূর বাংলাদেশ থেকে ওনার ডাক পড়ে সাহিত্য সমারোহে তা ছাড়া
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওনাকে বিশেষ অতিথী করে নিমন্ত্রণ করা হয় l বিশু খুড়ো কিন্তু
অত্যন্ত সাদা মাটা মানুষ এবং নিরঅহংকার ও বটে l একটা পুরোনো মোবাইল তাও রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো তার
কভার l আমাদের বলেন কি হবে ঐ স্মার্ট ফোন নিয়ে?
আবাসনের অন্য লোকেদের সংগে সম্পর্ক ভালো l সবাই বিশু খুড়ো বলেই ডাকেন
l পাড়ার ছেলে ছোকরারা বিশু খুড়ো কে কোনদিন মন্দিরে যেতে দেখেন নি l উনি
কট্টর বাম পন্থী l মন্দিরে যাওয়াটা নাকি অশিক্ষিতের লক্ষণ l তাই শ্রাবণ
মাসে শিবের মাথায় জল ঢালাটা ওনার মতে হাস্যকর এবং অযুক্তিকর l
ঐ আবাসনের বয় জ্যেষ্ঠ সেক্রেটারি মহাশয়,নীলকণ্ঠ সমাদ্দার
বলেন শ্রাবণ মাস মানেই শিবের আরাধনার মাস l শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালেন অনেকেই
৷ নিজের সংসার, সন্তানের মঙ্গল কামনায় শিবের পুজো চলে শ্রাবণ মাসভর ৷ কথায় বলে দেবাদিদেব
মহাদেব ৷ অর্থাৎ সব ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ শিব ! তিনি মহা যোগী, মহেশ্বর l
সেই ঈশ্বরের পুজোয় সব মনস্কামনা পূরণ হবে ৷ শান্তি প্রাপ্তি হবে জীবনে
এবং সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ৷
পুরাণ মতে এই শ্রাবণ মাসেই বিষ পান করেছিলেন মহাদেব ৷ বিষ পানের ফলে
তাঁর সারা শরীর নীল হয়ে যায় ৷ সেই কারণেই তাঁর মাথায় জল বা দুধ ঢেলে পুজো করা হয়
৷ শ্রাবণ মাসের প্রতিদিনই এই আচার পালন করা হয় ৷ তবে যে হেতু সোমবার শিবের বার বলেই
পরিচিত, তাই সোমবারেই বিশেষ পুজো হয় ৷ শ্রাবণ মাসের ৪টি বা ৫টি সোমবার ধূমধাম করে
পুজো করা হয় ৷ প্রচলিত বিশ্বাস শিবের পুজোয় দূর হয় জীবনের সব সমস্যা ৷
বিশু খুড়ো এই যুক্তি শুনে হেঁসে গড়িয়ে যান বলেন মূর্খের দলকে কি বলে
বোঝাবো l ওরে শিব বিষ খেয়েছিলেন বলে কোন পুরাণে আছে ? শিব পুরণে! ও ওগুলো কিছু ব্রাহ্মণ
নিজেদের রোজগারের জন্য অন্ধ ভক্তদের মগজ ধোলাই করে মগজে বিষ ঢেলেছেন l কাজ কম্ম কিছু
নেই রাস্তায় লম্বা লাইনে জল নিয়ে গাড়ি মোটর বন্ধ করে ধর্ম অর্জন l লজ্যা করেনা l
চাকরি করেছেন বটে তবে প্রায় নাকি খটা খটি লাগতো উপরিস্থ হাকিমের সংগে
l
কথাটা শোনা তাই বিশেষ গুরুত্ব দিই না ঐ কথার ওপর l নিন্দুকেদের
কিছু একটা রটালেই হল l
একদিন শীতের সকালে বিশুদার বাড়ির কাজের মাসি বেল বাজিয়েই যাচ্ছেন কিন্তু
দরজা আর খোলেনা l বেলা 10 টা বাজলো তবুও দরজা খোলে না l কাজের মাসি সিকিউরিটি কে ডাকেন
l সে এসে দর্জা ধাক্কায় কিন্তু কোন শব্দ হয়না l আবাসনের লোক জন জড়ো হতে আরম্ভ করেন
l আমাদের আবাসনের সোসাইটির সেক্রেটারি নীলকণ্ঠ সমাদ্দার মহাশয় আসেন l দরজা ভেঙে ঢোকা হয় l সবাই দেখে
অবাক বিশু খুড়ো অচৈতনি অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন l গায়ে জ্বর l উনি মেয়ের বাড়িতে একটা
ফোন পর্যন্ত করতে পারেন নি বোধ হয় l তা নাহলে ওনার নাতি নিশ্চই চলে আসতো তার দাদুকে দেখতে l
নীলকণ্ঠ বাবু ধার্মিক মানুষ l সংগে সংগে এম্বুলেন্স ডেকে বিশু খুড়ো
কে হাঁসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং ওনার মেয়ের বাড়িতে ফোন করেন l নীলকণ্ঠ বাবু প্রত্যেকের সংগে আন্তরিক সম্পর্ক
রাখেন এবং আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন l এটাই ওনার মহানতা l তাই ওনেকেই সোসাইটির সেক্রেটারি
করেন সবাই l
যাইহোক ভগবানের দয়ায় বিশু খুড়োর করোনা টেস্টে নেগেটিভ দেখায় পরে ডাক্তারি চিকিৎসায়
সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন l
ওনার মেয়ে নাকি বাবা তারকনাথের কাছে মানত করেছিলেন বাবার সুস্থতা কামনা করে l বাবা তারকনাথ শুনেছেন
মেয়ের ডাক তাই বিশু খুড়ো সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন l এই কথা কিন্তু কিছুতেই মানতে নারাজ
আমাদের বিশু খুড়ো l বলেন ওরে ঠাকুর যদি বাঁচাতেন তবে ডাক্তাররা আছেন কি করতে?
মেয়ে বলে না বাবা ডাক্তাররাও মানেন এক ঐশ্বরিক শক্তি কাজ করে তাই তাঁরাও
ভগবানকে ডাকেন অপারেশন করার আগে l পেসেন্টকে আশ্বাস দেন ভগবানের ওপর বিশ্বাস রাখুন
আপনার রোগী নিশ্চই ভালো হয়ে যাবেন l আজ ঐ নীলকণ্ঠ জেঠু তোমার ফ্ল্যাটের দরজা না ভাঙলে
তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারতামনা, সে খেয়াল আছে! উনি ঈশ্বর বিশ্বাসী তাই তোমাকে
ঈশ্বর ই বাঁচিয়েছেন এটা মাথায় রেখো l তিনি সর্ব শক্তিমান তাঁর ওপরে কেউ নেই l এখন থেকে
একটু ঠাকুর পুজো কর l ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে গলায় পৈতে নেই তোমার, লোকে আমাকে যা তা বলে l
বিশু খুড়ো মেয়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন আর তাঁর স্ত্রীর
কথা মনে করেন... ঐ এক ই কথা তাঁর স্ত্রী বলতেন তাঁকে l বয়েস হয়েছে মেয়ের কথা শোনা উচিৎ
মনে মনে ভাবেন কিন্তু না ঐ পৈতে ধারণ অসম্ভব l ওটা নতুন করে করা সম্ভব নয় ওনার কাছে
l হ্যাঁ ঈশ্বর তিনি মানেন তবে তাঁকে আকারে সীমাবদ্ধ করতে নারাজ l তিনি নিরাকার পরম
ব্রহ্ম l এটাই তাঁর বিশ্বাস