ঝনঝন করে ইঁদারায় বালতি
নামার শব্দ হয়। তার সাথে রিনরিনে একটি ধমকের সুর , মম মম এই মম কি করছিস ওখানে ? কার সাথে কথা বলছিস ? কে এই কে রে ওখানে? মম নামের সুন্দরীটি কথা না বলে গপাগপ আচার গিলতে থাকে । অন্যদিকে
হাস্নুহেনা, গন্ধরাজ, স্থলপদ্মের আড়াল দিয়ে আশোক গাছে ঠোক্কর খেয়ে কে যেন ছুটে
পালিয়ে যায় দ্রুত পায়ে।
ঝন্নাত করে কপিকলের
শিকল ছাড়ার শব্দ হয়। আর তখনই সুরেলা গলার অসম্ভব তেজি মহিলাটি মমর সামনে আবির্ভূত
হয়ে বাগানে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মমর আধখাওয়া আচার। “রাক্ষুসি মেয়ে সারাদিন এত যে খাস তোর
ক্ষুধা মেটে না ?” মমতা একপাশের ড্রাকুলা
দাঁত বের করে বেহায়ার মত হাসে। শঙ্খের মত
সাদা সুন্দর মমর হাত ধরে টেনে আনতে আনতে তেজিনি হিসহিস করে,
লজ্জা না থাকলে একটু শিখে নিতে হয় মমতা। তুই কি বুঝিস না খায়ের কেন লুকিয়ে এই সব হাবিজাবি
তোকে খেতে দেয় ? বড় হয়েছিস পুরুষদের কি চিনতে পারিস না! এরকম করলে কিন্তু আমি তোকে রাখতে পারবনা। আজকেই
তোর বড়দাদুকে বলে বাচ্চুর বাসায় পাঠিয়ে দেব।”
মমতাজের মুখ থেকে
সাথে সাথে রক্ত উড়ে যায়। সে বাড়িতে থাকতে হলে এত কাজ করতে হয় যে নিজেকে কাজের বুয়ার
মত লাগে। খেতে হয় সবার শেষে। ভাঙ্গা মাছের টুকরো, ডালের তলানি, বড় স্টিলের বাটিতে ছড়ানো ছেটানো কিছু সব্জি পড়ে থাকে টেবিলে।
আচারের বয়ামে হাত দেওয়া বারণ। চুরি না করলে দুধ খেতেই পায় না। সে যে অবহেলার একজন
বাড়তি ফালতু তা ভাল করে বুঝিয়ে দেয় ছোটভাবি। ছুটির দিনগুলোতে অবশ্য মমকে সাথে নিয়েই খেতে বসে বাচ্চু। তখন ভাল মাছ বা একটু
বেশি মাংস তুলে দেয় ছোট বোনের পাতে। তাই দেখে ছোটভাবি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে আর
পরের দিন ভাগ্যে জোটে এক তরকারি ভাত।
অন্যদিনগুলোতে মমতা ক্ষুধায়
আমড়াপাতাও নুন দিয়ে চিবিয়ে খায়। এতিম বলে দু একজন প্রতিবেশি এটা সেটা খেতে দেয় । তারা
বুদ্ধি দেয়, বড়দাদুর বাসায় চলে যা মমতা। এখানে থাকলে না খেয়ে মরে যাবি যে। মমতার মন কাঁদে বাচ্চুর
জন্যে। অফিস শেষে বাসার গেট খুলে বাদাম, বুট কোন কোনদিন বুধুয়ার আচার, চানাচুর ফুলগাছের
আড়ালে লুকিয়ে ছোড়দা ইশারা করে। মমতা জামার আড়ালে তাই নিয়ে সাঁ করে পালিয়ে যায়
পুকুর ধারে। গোগ্রাসে গিলে হাজারবার খালি ঠোঙ্গার গন্ধ শোঁকে আর জিভ দিয়ে
নুন ঝাল চেটে চেটে খেয়ে গান গায়, জলের
ছায়া জলের ছায়া রে আমায় ডাকিস না---
তেজিনির হাঁটু
ছুঁয়ে মমতা সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা করে, এই আপনার পা ছুঁলাম বড়ভাবি আর কোনদিন খায়ের কিছু দিলে নেব না।
আল্লার কিরে, বড় মসজিদের কিরে, সাহাপাড়ার মা কালির কিরে আমার মরা বাবা মার কবরের
কিরে --বড়ভাবি হেসে ফেলে, এতকিছুর কিরে দিতে হবে না মমতা। তুমি তোমার বড়দাদুর কথা মনে রাখলেই আমি খুশী হব।
আর এসব কিরে টিরে কি ? এসব বলবে না কখনো। হাহাহ ফন্দি সাকসেস। ছোটভাবি হলে এত সহজে
গলত না। ঘাম বেরিয়ে জিভ ঝুলে যেত। বড়ভাবি আসলেও বোকা। অনেক ভাল। মায়ায় ভরা মন। মমতা
খুশিতে বাগচি অপেরার সুধা নর্তকির মত “কাঞ্ছা রে কাঞ্ছা রে--” গেয়ে পাকা উঠোনে
কয়েকবার ঘুরপাক খায়।
একটু আগে ইঁদারার
চাতালে ফেলে ধোলাই করা রুমকিকে বিকেলের জামা জুতা পরাচ্ছিল রেণুদি, মম তার মাথায় সাবধানে গাট্টা মারে, তুই লাগিয়েছিস
তাই না? ইস রে পুরো আচারটা খেতে পারলাম না শুধু তোর জন্যে শয়তানি।” রেণুদি এক মণ কাজল
হাতের আঙ্গুলে মেখে রুমকির দুই চোখ নৌকা করে দিয়েছে। এবার “কাজলি মাঈ কি জয়” বলে
রুমকিকে মধুমতিতে ছেড়ে দিলেই হল। ভেসে একেবারে কালীগঙ্গা পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর! সে চোখ পিটপিট করে
তাকিয়ে দেখে দিদিদের দেওয়া পুরাণো জামা গায়ে পরির মত লাগছে মমতাকে। টকাস টকাস
শব্দে চেটে চেটে ভিজে রস রস করে বুধুয়ার
দোকানের আচার মাখানো আঙ্গুলগুলো খাচ্ছে আর বেহায়ার মত দুলছে। সৎ ভাইয়ের বউদের তাড়া
খাওয়া বাবা মা মরা এতিম মমতা ভাল করেই
জানে কোথাও তার স্থায়ী ঠাঁই নাই।
এ বাড়িতে এত আদর
বড়দাদু আর বড় ভাবির জন্যে। একটিই অসুবিধা বড্ড নিয়ম কানুন। বড়ভাবি গাদা গাদা বই
পত্রিকা পড়ে আর মেয়েদের গল্পপত্রিকার নায়িকাদের মত গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। মেয়েরা
গান গায়, আবৃত্তি করে, আধুনিক ডিজাইনের
সুন্দর সুন্দর জামাজুতো পরে, শুদ্ধভাষায় মেপেজুকে কথা বলে। মম বড়ভাবির মেয়েদের
চাইতে অনেক সুন্দরি । বড়ভাবি অন্যরকম আদর করে মমকে। মায়াও করে খুব। সৎ শাশুড়ি
আঁতুড়ে মারা গেলে মমকে তিনিই কোলে তুলে নিয়েছিলেন। মম তার মেয়েদের সাথেই বেড়ে উঠছিল।
কিন্তু বাচ্চু ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। মমও
ছোটভাইয়ের গলা জড়িয়ে চলে গেলে তিনি অভিমানে পাথর করে নিয়েছিলেন নিজেকে। তার স্বামি
আলাভোলা সাধক মানুষ। প্যাচ বোঝে না। মমর ভাগের জমির দায়িত্ব বাচ্চুকে দিয়ে বলেছিল,
ছোট বোনটাকে কখনো ঠকাস নে যেন। বড় দুঃখী
কপাল নিয়ে জন্মেছে রে ।”
বড়ভাবির দৃঢ়
বিশ্বাস জমিজমা ভোগের জন্যেই বাচ্চুর এই আদেখলেপনা আদর। বাচ্চুর বউটাও হাড় হাভাতে ।হাতের
পাশ দিয়ে একটি বাড়তি কণাও গড়াতে পারে না। কৃপন স্বভাবের জন্যে ছেলেমেয়েরাও ছোঁচা হয়েছে।
এ বাড়িতে এলে পেটপুরে ভাত খায় আর বড়চাচিকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কিপ্টেমির গল্প করে। বড়ভাবির বুক তখন টনটন করে উঠে মমর
জন্যে। পেটের সন্তানদের যে মা মেপে ভাত দেয় সে কি মমর মত সম্বৎসরের ক্ষুধার্ত হাভাতে
এতিম লোভি কম বুদ্ধির মেয়েকে পেট ভরে খেতে দেবে ?
মাঝে মাঝে তাই
বড়ভাবী মমতাকে নিয়ে আসে এ বাড়িতে । মমতা পড়াশুনা
করতে চায় না । বরং ভাইয়ের মেয়েদের দেওয়া সুন্দর সুন্দর জামা পরে ছেলেবুড়োদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে তার খুব
ভাল লাগে। পাড়ার ছেলেরা তাকে একটু ইয়ে টিয়ে করবে এত খুব স্বাভাবিক। একটু হাত ধরতে দেয়। কখনো লম্বা
সুন্দর আঙ্গুলে সামান্য ছোঁয়ার আলতো চুমু। ফ্লাইং কিস তো ভাতমাছ। তার চোখের এক
ইশারায় খায়ের তপন বাসু খসরুরা কদবেল, আমড়া, তেঁতুল থেকে সন্দেশ, প্যাড়া ঘুগনি , চানাচুর, চপ, কাটলেট মূহূর্তে হাজির
করে দেয়। পাড়ার বুড়ো চাচা মামা ভাইয়ারাও মাঝে মাঝে আদরের ছলে কোলে বসায়। টাকা
গুঁজে দেয় হাতের মুঠোয়। আর পিঠে হাত
বুলিয়ে দিয়ে বলে, ডাঙ্গর হয়ে যাচ্ছিস তো মা! এবার তো তোর বিয়ে দিতে হয়। বিয়ের পর
কি করতে হয় জানিস তো ? লোল রাক্ষসের মত বুড়োদের মুখ মমের কান ছুঁতেই এক মোচড়ে উঠে
আসে মম। নইলে স্যাৎ করে বুড়োর বাচ্চারা
বুক টিপে দিয়ে খচ্চরের মত হাসে। অথবা মমর হাত টেনে নিয়ে দুপায়ের ফাঁকে কাঠের মত
শক্ত গরম লিঙ্গে চেপে ধরে।
ঘরের খাবারের
চাইতে বাজারি খাবারের মজাই আলাদা। মম তাই বুড়ো হাবড়া জোয়ানদের খেলিয়ে খেলিয়ে নানা
খাবার আদায় করে নেয়। কিন্তু এই বাসায় বড়ভাবির জন্যে শান্তিমত কিছু করতে পারে না । রাগের মাথায়
আজকের আচারের প্যাকেট কোথায় যে ছুঁড়ে ফেলল বড়ভাবি! যাক পরে খুঁজে খেয়ে নেবে। দাঁত দিয়ে টাকরায় আওয়াজ করে দুলতে দুলতে শয়তানি বুদ্ধি
ভাঁজে মম। খায়েরকে বলবে আবার এনে দিতে। না হয় এবার পুরো এক মিনিটের জন্যে হাত ধরতে
দেবে খায়েরকে। চাইলে বুক। খুব করে যদি চায় চুমুও খেতে দেবে দু একবার।
রুমকি তার ফ্রেমে
ঝুলিয়ে দেয় মমফুপিকে। মমতাজ বিশ্বাস। তিন ভাইয়ের এক সৎ বোন। ভাইদের ছেলেমেয়েদেরও অনেক ছোট। হ্যাটা খেয়ে
একবার এই ভাই ওই ভাইয়ের বাড়ি ঘুরে ঘুরে কখন যেন পরি হয়ে গেছে। অনাদরের পরি। মমফুপির
নামের পাশে কালীমন্দিরের পুকুরে ফেলে
দেওয়া পুরানো বাসি একটি কল্কে ফুল গুঁজে দেয় রুমকি। ফুপি তো এরকমই ছিল। কেবলই
পুরানো বাসি বাতিল ঝালাই সারাই ছেঁড়া ফাটা আধখাওয়া জীবন নিয়ে এসেছিল এই পৃথিবীতে। আস্তাকুঁড়ের
আধকপালি পরিরাণী।
এরকমটি হওয়ার কথা
ছিল না। মমতার বাবা মা ছাড়া সব ছিল মমর। ছোটভাই বাচ্চু খুব আহলাদ করে বোনের
দায়িত্ব নিয়েছিল। বাচ্চু নিজে ঘোর কালো ।
ফুটফুটে বোনটিকে সাজিয়ে গুজিয়ে পাড়ায় ঘুরতে খুব ভালবাসত । ভাইরা কেউ কখনো মমকে
বুঝতেই দেয়নি না খেয়ে না পরে থাকার কষ্ট কেমন। বাচ্চু বিয়ে করে ঘরে বউ আনার পরেই সংসারে মমর দাম কমতে
থাকে। বাচ্চুর সংসারে এটা সেটা করতে করতে বাচ্চাদের আয়া হয়ে যায় । ইশকুল পড়াশুনা
কোন কালেই ভাল লাগত না মমর। কাজের অজুহাতে প্রথমে ইশকুল কামাই শুরু হয়। পরে
ছোটভাবি নিজেই বন্ধ করে দেয়। আগের মত আদর যত্ন না পেয়ে বেপরোয়া বেহায়া হয়ে উঠে মম।
দুধের সর চুরি করে খেয়ে আবার সর ফেলতে চুলায় দুধের পাতিল রেখে দেয়, মূহূর্তমাত্র ফ্রিজ খুলে মিষ্টি খেয়ে ফেলে গপাগপ
করে, এঁটো হাতে মাছ মাংস তুলে নেয় গরম কড়াই থেকে, বাচ্চুর দেওয়া টাকায় এটা সেটা
কিনে খায়। পাড়াপড়শি আর ছেলেছোকরা বুড়ো হাবড়ারা তো আছেই। মমতার তবু পেট ভরে না। ক্ষুধা লেগেই থাকে। বড়ভাবি যখন আদর করে পিঠে
হাত রেখে বলে, আর একটু ভাত তরকারি দিই মমতা? মমতার চোখ জলে ভরে উঠে। সব ক্ষুধা
পালিয়ে যায়। কিন্তু বড়ভাবির কাছে ওকে ত থাকতেই দেয়না ছোটভাবি!
ছোটভাবি নালিশ
করেছিল বড়ভাবির কাছে। বড়ভাবি কিছু না বলে মমকে
নিয়ে চলে এসেছিল। দুদিন না যেতেই ছোটবউ মমকে নিতে আসে। মমকে দেখে তো তার চক্ষু
চড়কগাছ। সদ্য বেরুনো কচি বাঁশপাতার মত সবুজ সুন্দরী মমকে দেখিয়ে বড়ভাবি বলেছিল, মেয়েটা
এতিম। রাখলে এভাবেই রেখো। নইলে এখানেই থাকুক।”
কথা শুনে শরীর জ্বলে যায় ছোটবউয়ের। কিন্তু তখন মমকে খুব দরকার। একা এত কাজ
সামলাতে পারছে না। বাচ্চাদের রাখাও বিরাট
ঝক্কি। তায় আবার পর পর দু দুজোড়া যমজ। মাথা নীচু করে মমতাকে নিয়ে এসে নীরবে
নিষ্ঠুর খেলা শুরু করেছিল। প্রথম প্রথম মজা পেলেও বুঝে সরে যেতে চেয়েও আটকে যায়
মমতা।
ছোটভাবির অনেকগুলো
ভাই। তারা এতদিন মমকে ছিঁড়তে সাহস করেনি। ছোটভাবি সর্বদা পাহারা দিয়ে রেখেছিল। এবার
পাহারা তুলে নেয়। এটা সেটা বাজারী খাওয়ার লোভে মমর ভাব জমে উঠে বুলু, ঝালু, সাজুর
সাথে। মমর এখন মজাই মজা। ছোটভাবির গলায় মধু। দু চোখে ঘন পর্দা। কোনদিন বুলু এসে সারা বিকেল গল্প করে। মমতার চোখমুখ দিয়ে যেন আগুন ছোটে তখন। সিংগাড়া কচুরী
খেতে খেতে মমর ওড়না সরে যায়। বুলু ফাঁক বুঝে এক মাই টিপে দেয়। আবার অন্যটি। মমতা সন্ন্যাস
সন্ন্যাস মুখ করে খায় আর টিভি দেখে। খাওয়া শেষ হতেই ছুটে উঠোনে বেরিয়ে আসে। বুলু
তপ্ত শরীরে অতৃপ্ত ফিরে যায়। ঝালু ঢাকা থেকে এলেই প্রতিদিন মমর সাথে দেখা করে।
সিনেমার গল্প, টুকটাক উপহার দিয়ে মাঝে মধ্যে দু একটি চুমু খেয়ে নেয়। মমতা স্বেচ্ছায়
ঝালুকে বুকেও হাত দিতে দেয়। ঝালু ঘোর কালো । বাচ্চুর শ্বশুর একবার বলেছিল, মমতাকে
বউ করলে কেমন হয় ? অন্তত বাচ্চাকাচ্চাগুলো কালো নাও হতে পারে। মম জানেনা এই
প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে তার ভাইয়েরা। সে মনে মনে ধরেই নেয় ঝালুর সাথে তার বিয়ে
হচ্ছে যখন তখন না হয় একটু বেশিই ঝালু তার শরীর চেটে নিলো। ঝালুর সাহস বেড়ে যায়।
মমর জামা উলটে হাত দিতে থেকে শরীরের এখানে সেখানে। এরকম এক বিকেলে সাজু দেখে ফেলে।
সাজুর চীৎকার চেঁচামেচিতে বুলু ঝালুর এ বাসায় আসা বন্ধ হয়ে যায়। বাচ্চু প্রচন্ড
ক্ষেপে বউকে বলে, তোমার তিন ভাইয়ের আধখানাকেও যদি এবাড়িতে দেখি তো গুলি করে মেরে
ফেলব।
ঝালুর তখন মমতাকে
পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা। বন্ধু মুকুটকে পাঠায়। পুকুর ঘাটে আধোয়া কাপড় বোঝাই বালতি রেখে ঠা ঠা দুপুরে
রওনা হয় মম। ঝালু অপেক্ষা করছে বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে। পথে লাল শার্টপরা মুকুটের
খুব ভাল লেগে যায় মমকে। মোরাম বিছানো লাল ইটের রাস্তায় তিন তালির ঝুলঝুলা
স্যান্ডেলের সাথে পুরানো ইউরোপিয়ান ফ্রকে সিন্ডারেলার মত লাগছে মেয়েটাকে। মুকুটের
বুকে নিরালা বিলের একলা কোন ঘুঘু ডেকে উঠে। নিজেকে শিকারি বলে মনে হয়। ঝালু তো
সুরক্ষা কনডম দেখিয়ে ফ্যা ফ্যা করে হেসেছে, আমার পরে তুইও— । মুকুট জানতে চায়, ঝালু কি তোমাকে বিয়ে করবে মমতা ?
সেই মূহূর্তে হঠাত
দাঁড়িয়ে পড়ে মমতা । মুকুটের ছায়ার সাথে মিশে গেছে মমতার ছায়া। তাই তো ঝালু তো কখনো বলে নি একথা।
বিয়ে করতে চাইলে ছোড়দা কেন ঝালুকে বাসায় আসতে নিষেধ করবে? আলমারি খুলে বন্দুকটা
ঝুলিয়ে রেখেছে দেওয়ালে। ছোটভাবিও মমতাকে ঠারে ঠুরে জানিয়ে দিয়েছে ঝালুর বিয়ে হবে ঢাকার কোন মেয়ের সাথে। মেয়ের বাবা অফিসার। বদরুন্নেসা কলেজের
ছাত্রী। সে মেয়ের দুই পায়ে চারটে আঙ্গুল। তাতে কি ঘুঁটেকুড়ানি মেয়ে তো আর নয়।
কি ভেবে মম পেছন
ফিরেই ছুটতে থাকে। তার ত সর্বনাশ হয়ে যেত । মুকুট দ্রুত ধরে ফেলে । নিজেকে ছাড়াতে
চায় মম। মমর দু হাত শক্ত করে ধরে গভীর ভালবাসা মাখা গলায় মুকুট বলে, আমাকে বিয়ে
করবে মমতা?